দিল্লি, ৫ এপ্রিল – পাকিস্তানে আশ্রয় নেওয়া ভারতবিরোধী জঙ্গি সংগঠনগুলির নেতাদের হত্যা করছে দিল্লি। ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। শুক্রবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সরাসরি ব্রিটিশ ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি খারিজ করা হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর শুক্রবার বলেন, ‘‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং বিদ্বেষমূলক।’’
একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে গিয়ে জঙ্গিদের হত্যার মারাত্মক অভিযোগ করা হয়। সন্ত্রাস দমন করতে ভারত পাকিস্তানে বিভিন্ন জঙ্গিদের নিশানা করে হত্যা করছে বলে ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। এর প্রত্যুত্তরে কড়া জবাব দিল বিদেশ মন্ত্রক। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানানো হল বিদেশ মন্ত্রকের তরফে। একইসঙ্গে এমন খবর প্রচার করে ভারত-বিরোধী প্রচার করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কড়া ভাষায় বলেছেন, “অন্য দেশে গিয়ে হত্যা করা ভারত সরকারের নীতি নয়।”
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ দাবি করা হয়, ২০১৯ সালের পুলওয়ামার হামলার পর থেকে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী ‘র’ কমপক্ষে ২০টি অ্যাসাসিনেশন চালিয়েছে । পাকিস্তানের বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ এবং দুই দেশেরই গোয়েন্দা কর্তাদের সাক্ষাৎকারের উপরে ভিত্তি করে এই প্রতিবেদন লেখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এক ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তার নাম গোপন করে ‘দ্য গার্ডিয়ানে’র রিপোর্টে বলা হয়, ইজরায়েলের গোয়েন্দা বাহিনী মোসাদ এবং রাশিয়ার কেজিবি-র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই বিদেশের মাটিতে এই অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের তরফেও দাবি করা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ভারতের স্লিপার সেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারাই ভিন দেশে গিয়ে এই হত্যা অভিযান চালানো হচ্ছে।
গত পাঁচ বছরে ৬ জনেরও বেশি ভারতবিরোধী জঙ্গি নেতার মৃত্যু হয়েছে পাকিস্তানে। এঁদের কেউ খুন হয়েছেন, কারও বা ‘রহস্যমৃত্যু’ হয়েছে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’ -এর দিকে। সাম্প্রতিক সময়ে পাক মাটিতে মৃত্যু হওয়া জঙ্গিনেতাদের তালিকায় রয়েছেন, লস্কর-ই-তইবার নেতা আক্রম খান, আক্রম গাজ়ি, আনদান আহমেদ, মৌলানা জিয়াউর রহমান এবং মুফতি কায়সর ফারুক।
২৬/১১ মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী লস্কর নেতা আজ়ম চিমা, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালকোটের লস্কর কমান্ডার রিয়াজ় আহমেদ ওরফে আবু কাসিম, পঠানকোট হামলার মূল চক্রী, জইশ-ই-মহম্মদ নেতা শাহিদ লতিফ, ইউনাইটেড জিহাদ কাউন্সিলএবং তেহরিক-উল-মুজাহিদিন জঙ্গিগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক শেখ জামিল-উর-রহমান, হিজবুল মুজাহিদিনের কম্যান্ডার বশির পীর, খলিস্তান লিবারেশন ফোর্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লখবীর সিংহ রোড়ে, খলিস্তান কমান্ডো ফোর্সের প্রধান পরমজিৎ সিংহ পঞ্জওয়ারও রয়েছেন এই তালিকায়।
প্রসঙ্গত, এর আগে কানাডা ও আমেরিকাও ভারতের বিরুদ্ধে ভিন দেশের মাটিতে অ্যাসাসিনেশন বা হত্যার চেষ্টার অভিযোগ এনেছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সংসদে দাবি করেছিলেন, খালিস্তানি জঙ্গি হরদীপ সিং নিজ্জরের হত্যায় ভারতের হাত রয়েছে। যদিও ভারত সেই অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয়। আমেরিকাও আরেক খালিস্তানি জঙ্গি গুরপাতওয়ান্ত সিং পান্নুনের উপরে প্রাণঘাতী হামলায় ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
ব্রিটেনের সংবাদমাধ্যমের এই দাবিকেই ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ভারত বিরোধী প্রচার চালানোর উদ্দেশেই এই ধরনের মিথ্যা প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এই রিপোর্টকে অস্বীকার করেন। তাঁর বক্তব্য, পুরোপুরি ভুল তথ্যসমৃদ্ধ রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এমন কোনও ঘটনার সঙ্গে ভারত জড়িত নয়।