প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় উত্তেজনা কমলে ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে,  জানালেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর 

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর (File Photo: IANS)

ভারত-চিন সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমন করা না গেলে এই দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না। নিউইয়র্কে এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউট-একথা বলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর৷ তিনি বলেন, এই মুহূর্তে চিনের সেনাবাহিনী ভারত-চিন সীমান্তে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে সরলেও আরও বড় সমস্যা সীমান্তে উত্তেজনা৷ সেখানে শান্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে না ৷

বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘যতদিন না পর্যন্ত সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে এবং এটা সুনিশ্চিত হচ্ছে যে দুই দেশের মধ্যে হওয়া চুক্তিগুলি ফের কার্যকর ও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে, ততদিন পর্যন্ত চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়া মুশকিল৷’ এই মুহূর্তে ভারত ও চিন-  উভয় তরফেরই সেনা মোতায়েন রয়েছে ৷ এলএসি থেকে সেনাদের সরিয়ে তাঁদের ক্যাম্প-এ  ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে বলে বিদেশমন্ত্রী জানান ৷
 
ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে বোঝা যায় যে, প্রতিবেশী দেশ চিনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক তিক্ততার মধ্যে দিয়েই অগ্রসর হয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৬২ সাল থেকে শুরু করে বারবার উভয় দেশই সীমান্ত সমস্যা নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে৷  এর ১৪ বছর পর ভারত-চিন দুই দেশের মধ্যে রাষ্ট্রদূত বিনিময় করে ৷ সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক করতে আরও ১২ বছর সময় লেগে যায় ৷ সেটা হয় ১৯৮৮  সাল থেকে।এখন পরিস্থিতির বদল ঘটেছে৷ সেনা সরানোর ফলে সম্পর্কও অনেকটা স্থিতিশীল হয়েছে বলে বিদেশমন্ত্রী মন্তব্য করেন৷’

এস জয়শঙ্করের কথায়,  এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের মূল কারণই হল আন্তর্জাতিক সীমান্ত বিতর্ক৷ সীমান্ত এবং সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে শান্তি ও  স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে তখনই অন্য বিষয়ে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হতে পারে বলে  স্পষ্ট জানান বিদেশমন্ত্রী৷

বর্তমানে ভারত-চিন সীমান্ত সমস্যা প্রসঙ্গে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘এই ঝামেলার ৭৫ শতাংশ সমস্যা মিটেছে ৷ এটা বলছি, কারণ এখন সীমান্ত এলাকা থেকে চিন শুধুমাত্র সেনা সরানোয় সমস্যার একটা পর্বের সমাধান হয়েছে ৷ এই মুহূর্তে চিন্তার আরও একটি বিষয় সীমান্তে প্রহরা ৷ দু’পক্ষই কীভাবে এলএসি-তে পাহারা দেবে সেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনা রয়েছে ৷ ২০২০ সালের পর এলএসি-তে প্রহরার ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷  এই প্রহরার বিষয়টিরও সমাধান প্রয়োজন বলে মনে করেন বিদেশমন্ত্রী৷’


ভারত-চিন সীমান্ত ৩  হাজার ৫০০ কিমি দীর্ঘ এবং পুরোটা নিয়েই বিতর্ক রয়েছে ৷ সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে একের পর এক চুক্তি হয়েছে চিনের সঙ্গে ৷ এই প্রসঙ্গে এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘সীমান্তে শান্তি সুনিশ্চিত করতে পরপর ১৯৯৩, ১৯৯৬, ২০০৫, ও ২০০৬ সালে  চুক্তি হয়েছে৷ সীমান্তে শান্তি ফেরানো নিয়ে প্রতিটি চুক্তিতে বিস্তারিত জানানো হয়েছে৷’

আমেরিকার মাটিতে চিন ও ভারতের মধ্যে খারাপ সম্পর্কের অতীত তুলে ধরে জিনপিং প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করেও কটাক্ষ করেন বিদেশমন্ত্রী। বলেন, চুক্তি থাকা সত্ত্বেও কোভিডকালে সব চুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্তে বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করেছিল চিন। এই ঘটনার ফলে দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হবে সেটা জেনেও এই ঘটনা ঘটায় চিন। যার পরিণতি হিসেবে লাদাখের গালওয়ানে ভারত ও চিন সেনার মুখোমুখি সংঘাতে দুই দেশের একাধিক জওয়ান প্রাণ হারান।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জুনের পরই গালওয়ান উপত্যকায় ৩ হাজার ৪৮৮ কিমি জুড়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত সাড়ে তিন বছরে একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে ভারত ও চিন। ২০২২ সালের ৯ ডিসেম্বর তাওয়াং অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করার অভিযোগ উঠেছিল চিনা সেনার বিরুদ্ধে। শুধু লাদাখ নয়, অরুণাচলেও একই আগ্রাসন নীতি জারি রেখেছে চিন। 

প্রসঙ্গত ভারত ও চিন এশিয়ার এই দুই প্রতিবেশী দেশই বিশ্বে সমান্তরাল ভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি শক্তি। দুই দেশেরই জনসংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। কিন্তু ভারত ও চিনের মধ্যে  সীমান্ত বিতর্ক চলতে থাকায় উত্তেজনা রয়েছে। সীমান্ত সমস্যার সমাধান ঘটলে দুই দেশের সম্পর্কই উন্নত হবে বলে আশা রাখেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।