• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ইতিহাস ও সাধনার সিদ্ধপীঠ মুলুটী

মুলুটীর এই মন্দিরগুলির বেশ কিছু মন্দির বর্তমানে জঙ্গল এবং আগাছায় প্রায়  ঢেকে গেছে

সম্বুদ্ধ দত্ত   
বাঙালির কাছে মা তারা এক আশ্রয়ের নাম।‌  বিপদ থেকে উদ্ধার ও মনের শান্তির খোঁজে বাঙালি বার বার ছুটে যায় তারাপীঠে তারা মায়ের কাছে।  তারাপীঠে যায়নি এমন বাঙালি বোধ হয় পাওয়া মুশকিল । কিন্ত মা তারার  দর্শন সেরে তারাপীঠ থেকে মা মৌলীক্ষার  দর্শন করতে মুলুটী  গিয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা  কিন্তু খুব বেশি‌ বলা যাবে না। 
তারাপীঠ থেকে মাত্র ৮-৯‌ এবং রামপুরহাট স্টেশন থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে এই মুলুটী গ্রাম। বর্তমান মুলুটী এক সময় নানকার  নামের সামন্ত‌ রাজত্বের অন্তর্গত  ছিল।  নানকার কথার অর্থ করমুক্ত বা নিস্কর ।‌ মুলুটী নানকারের একটি গ্রাম। এখানেই সিদ্ধপীঠ মা মৌলীক্ষা দেবীর অধিষ্ঠান । সাধক বামাক্ষ্যাপার সাধনা জীবনের সূচনা হয়েছিল এই মুলুটির গ্রামের মা মৌলীক্ষার মন্দিরে।  মা মৌলীক্ষার পূজার ফুল সংগ্রহ থেকে মন্দিরের সব কাজ কিশোর বামাচরণ নিজের হাতে করতেন। সারাদিন নিজের মতো করে মায়ের আরাধনা করতেন। নিজের হাতে মা মৌলীক্ষাকে খাওয়াতেন। মায়ের সঙ্গে আপন খেয়ালে কথা বলতেন।  তাই মা মৌলীক্ষা মন্দিরকে বামাক্ষ্যাপার সাধনার  উৎসস্থল বলা যায়। বামাক্ষ্যাপা তাঁর অনুগামী ও শিষ্যদের একটা কথা বার বার বলতেন,  ‘আগে মৌলীক্ষা মায়ের পাঠশালায় যা তারপর তারাপীঠে আসবি’ । এই কথার মধ্যই লুকিয়ে রয়েছে মা মৌলীক্ষা দেবীর শক্তি এবং মাহাত্ম্য।
সাধক কঙ্কালীবাবা, সাধক কমলাকান্ত, সাধক নীলাম্বর, নগেন গোসাই, গৃহী সন্যাসী লালবিহারী এছাড়াও বামাক্ষ্যাপার ‌শিষ্য তারাক্ষ্যাপা, তারাক্ষ্যাপার শিষ্য গোপালক্ষ্যাপা, এমনকি বামাক্ষ্যাপার  গুরু কৈলাশপতিও সাধনার টানে‌ মা মৌলীক্ষার কাছে ছুটে  এসেছেন।  আশ্চর্য ক্ষমতার অধিকারী হঠযোগী ভাতু গোঁসাই মা মৌলীক্ষার মন্দিরে অনেক দিন কাটিয়েছেন। লোকমতে প্রচলিত এই ভাতু গোসাই নিজের নাড়িভুড়ি পেটের ভিতর থেকে বাইরে‌ এনে‌ পরিস্কার করে আবার শরীরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতেন।  এমনই অসীম ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন হঠযোগী ভাতু গোঁসাই ।‌ আনন্দময়ী মা যখন তারাপীঠে  এসেছিলেন তখন তিনিও মা মৌলীক্ষার দর্শনে মুলুটীতে এসেছেন।‌‌ এই সাধকদের মধ্য  নানকার রাজ পরিবারের সদস্য শবসাধনায় সিদ্ধ অন্নদাপ্রসাদ রায়ের নামও‌ বলতে হয়।
মুলুটী যে কেবল একটি সাধারণ গ্রাম নয় ,‌‌ তা এখানকার  অলি গলিতে কয়েক পা ঘুরতেই অনুভব করা যায়।‌   মনে হয় এক ফেলে আসা ইতিহাসের মাঝে  দাঁড়িয়ে আছি।  বহু সাধকের সাধনা ক্ষেত্র মুলুটীতে ধর্ম এবং ইতিহাস যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।‌
জনশ্রুতি পূর্বে জঙ্গলময় এই গ্রামের নাম ছিল মহুলটী। মহুল গাছের আধিক্যের জন্যে সম্ভবত গ্রামের এমন নাম হয়েছিল। এক সময় এই গ্রামের নাম যে  মহুলটী ছিল তা বহু পুরাতন দলিল ও সরকারি দস্তাবেজে উল্লেখ রয়েছে। স্থানীয় জ্ঞানী‌ ও প্রাজ্ঞ‌জনদের  মতে  ইংরেজ আমলে ইংরেজি উচ্চারণের কারণে মহুলটী থেকে ধীরে ধীরে মুলুটী নামের প্রচলন হয়।
নানকার সামন্ত রাজ্যের পূর্বে কোন এক সময় মুলুটী ছিল মল্ল রাজত্বের অংশ। এই কারণেই মুলুটীর বহু মন্দিরের গায়ে চিত্রিত টেরাকোটার ফলক, মন্দিরের গঠন শৈলী এবং সর্বপরি শিব মন্দিরের সংখ্যাধিক্যের মধ্যে  মল্ল রাজত্বের সুস্পষ্ট প্রভাব দেখা যায়।
মুলুটী গ্রামের অবস্থানও‌ বেশ‌‌ চমকপ্রদ । আশেপাশের এলাকা থেকে বেশ খানিকটা উচুতে মুলুটীর অবস্থান। ছোট দুটো নদী ‘চুমড়ে’এবং ‘চন্দননালা’ এই অঞ্চলকে‌ বেড়ির মতো বেঁধে রেখেছে ।‌ যা কার্যত পরিখার সঙ্গে তুলনীয়। এই নদী দুটো আবার এক জায়গায়  মিশে  ‘চিলে’ নাম নিয়ে দ্বারকা নদীতে মিশেছে।‌
মুলুটী  বাংলার সীমানার একেবারে শেষ প্রান্তে  ঝাড়খন্ডের দুমকা জেলার অন্তর্গত এক গ্রাম । স্বাধীনতার আগে এই গ্রাম বাংলার সীমানার মধ্যেই ছিল । কিন্তু স্বাধীনতার পর নতুন ভাবে রাজ্যগুলোর সীমানা বিন্যাসের সময় মুলুটি‌ গ্রাম ঝাড়খন্ডের  মধ্যে যুক্ত  হয়। যদিও এখানকার  জনসংখ্যর সিংহ ভাগ বাংলা ভাষাভাষী।‌‌
মা মৌলীক্ষা দেবীর কোন পূর্ণ অবয়ব নেই । মন্দিরে কেবল মৃদু হাস্যময়ী টকটকে সিঁদুরে লাল রঙের মা মৌলীক্ষা দেবীর  মুখ মন্ডল রয়েছে। তারাপীঠের মতো এখানে কোন কোলাহল নেই । নেই পুরোহিত ও পাণ্ডাদের অতি পান্ডিত্য। সংস্কারের মাধ্যমে মন্দির এবং মন্দিরের তোরণ দ্বারকে  যে নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে তা একটু নজর করলেই বোঝা যায়। বেশ বড় মন্দির প্রাঙ্গনে মোট তিনটে মন্দির রয়েছে । মা মৌলীক্ষা, দেবাদিদেব‌ মহাদেব এবং সাধক বামদেবের। প্রশস্ত  মন্দির প্রাঙ্গনের‌‌ ভিতরের বিশাল নিম ও বটবৃক্ষ,  অদ্ভুত নিস্তব্ধতা এবং দক্ষিণের  উন্মু্ক্ত‌ প্রান্তর শরীরে‌ এক অদ্ভুত শিহরণ জাগায়। আয়তনে বেশ ছোট মন্দিরে ততধিক ছোট দরজা দিয়ে মা মৌলীক্ষার  মন্দিরে প্রবেশ করতে  হয়। পুরোহিত এবং একজন মাত্র ভক্তর মন্দিরে বসে পুজো দিতে পারে এতটাই ছোট মন্দিরের ভিতরের পরিসর। এই গ্রামকে অবশ্যই  মন্দির গ্রাম বললেই মনে হয় সঠিক বলা  হবে। জনবসতির মধ্য দিয়ে সরু পথ ধরে এগলেই  মন্দিরের দেখা মেলে । যা এখনও মুলুটির গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে  আছে। এই মন্দির গুলোর  অধিকাংশই শিবের মন্দির  এবং বেশ কিছু  মন্দিরে এখনও শিবলিঙ্গ‌ বর্তমান।  বেশ কয়েকটা মন্দির সংস্কার করা হলেও অধিকাংশই সংস্কারের অভাবে আজ প্রায় ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে  । ছোট্ট এই‌ গ্রামে‌ এত অল্প জায়গায় এমন বেশি  সংখ্যায় শিব মন্দির‌ রয়েছে যা  সম্ভবত শিবভূমি কাশীতে‌ও নেই। আর এই কারণেই মুলুটি‌কে গুপ্তকাশী বলা হয়। এছাড়াও মুলুটি‌র  রাজবংশের সঙ্গে কাশীর একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে । কারণ কাশীর সুমেরু মঠের দন্ডিস্বামীরা বংশ পরম্পরায় নানকার মুলুটী‌র রাজাদের কুলগুরু।  নানকার মুলুটী সামন্ত রাজবংশের প্রথম রাজা বাজবসন্ত দন্ডিস্বামী নিগমানন্দকে গুরু রুপে বরণ করেণ । তখন নানকর মূলুটীর রাজধানী ছিল ডামরায়,  বীরভূমের মৌরেশ্বরে । প্রবাদ আছে  কোন এক নবাবের পোষা বাজপাখি  বসন্ত রায় ধরে দেওয়ায় নবাব অত্যন্ত খুশি হয়ে বিশাল আয়তনের  নিষ্কর ভুখন্ড বসন্ত‌ রায়কে দান করেন । এই নিষ্কর ভুখন্ড হল নানকার রাজ্য ।
বীরভূমের রাজা কামাল খাঁ ডামরা নানকারের পঞ্চম রাজা রাজচন্দ্রকে আক্রমন করে  পরাজিত এবং হত্যা করেন ।  প্রাণ  বাঁচাতে নানকারের  রাজ পরিবারের সদস্যরা তখন ভাটিয়া নামের জঙ্গলে আত্মগোপন করে।  পরবর্তীতে জঙ্গল পরিস্কার করে  মুলুটী গ্রামে তাঁরা আবার নতুন বসতি স্থাপন করে।  কালের নিয়মে রাজপরিবার বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হতে থাকে।‌ রাজ পরিবারের প্রত্যেক শাখার  প্রধান কর্তা ও রাণীদের ইচ্ছায় মুলুটীতে একের পর এক মন্দির তৈরি হয়। এই কারনেই মুলুটী গ্রামের  যেখানে সেখানে বিক্ষিপ্ত ভাবে এত মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়। সেই সঙ্গে পরিবারের প্রতিটি শাখা আলাদা আলাদা ভাবে  দুর্গা ও  শ্যামা পূজা করতে শুরু করে ।
মুলুটীর এই মন্দিরগুলির বেশ কিছু মন্দির বর্তমানে জঙ্গল এবং আগাছায় প্রায়  ঢেকে গেছে । এখানকার শিব মন্দিরগুলোর প্রবেশ দ্বার  উচ্চতায় এতটাই ছোট যার ফলে মাথা অনেকটাই নিচু করে  মন্দিরে  প্রবেশ করতে হয়।  মনের সব  দম্ভ ও অহংকার পরিত্যাগ করে নত মস্তকে দেবতার গৃহে প্রবেশের জন্যই সেকালে সম্ভবত এমন শৈলীর মন্দির তৈরি করা হয়ে ছিল।  এখানে পাঁচ  শৈলীর স্থাপত্যের মন্দির দেখা যায়। সব থেকে বেশি সংখ্যায় রয়েছে বাংলার চিরাচরিত চার চালার মন্দির। রয়েছে ওড়িশা স্থাপত্যের আদলে দেউল আকৃতির রেখা মন্দির, মঞ্চ আকৃতির মন্দির, একবাংলা মন্দির এবং  একেবারে সমতল ছাদের মন্দিরও এখানে রয়েছে। এমনই এক সমতল মন্দিরের রয়েছে  ত্রিভুজ আকৃতির চূড়া। এই চূড়ার   দুপাশে  রয়েছে  দুটো সিংহ।‌‌  আর চূড়ার উপর রয়েছে পরী এবং নিচের সারিতে সারিবদ্ধ মানুষের মুখ মন্ডল  । যদিও‌ এগুলির  অস্তিত্ব আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে । স্থানীয় আদিবাসীদের থেকে জানা রায়  এই  মন্দিরটি  ছিল রাজাদের দুর্গা দালান।‌ মুলুটীর রাজ পরিবারের কুলদেবী সিংহবাহিনী দুর্গা । মা মৌলীক্ষাকেই মুলুটীর রাজপরিবার সিংহবাহিনী দুর্গা হিসাবে পুজো করে আসছে। শুধু রাজপরিবার নয়, মুলুটীর প্রত্যেক মানুষ মৌলীক্ষা মাকে দুর্গা রূপে আজও পুজো করে‌ ।  আজ সেই রাজাও নেই, সেই রাজত্বও‌ নেই,  কিন্তু স্থানীয় মানুষদের চেষ্টায় এখনও দুর্গা দালানে  দেবী দুর্গা পুজো সমান ভাবে  হয়ে চলেছে । তবে এখানে মূর্তির বদলে মা দুর্গার ঘট পুজো হয় । এক জায়গায় দেখা যায় বেশ উঁচু অংশের উপর  চারদিকে খোলা মঞ্চের মতো একটা স্থাপত্য। এটা ছিল রাসমঞ্চ। চারিদিক থেকে সর্ব সাধারণ যেন রাস উৎসবের অনুষ্ঠান দেখতে পায় সেজন্য  এমন উন্মুক্ত স্থাপত্যের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল । কথিত আছে মুলুটীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে  মোট একশো আটটি মন্দির ছিল ।‌ অক্ষত মন্দিরগুলোর গায়ে টেরাকোটা নানা ভাস্কর্য আজও দেখতে পাওয়া যায় । চুন  সুরকি  দিয়ে আকারে ছোট ও পাতলা ইট ব্যবহার করে  নিখুত ভাবে সেই সময়ের শিল্পীরা মন্দির গুলো তৈরি করেছিল। সঙ্গে মন্দির গাত্রে  নিপুন হাতে ফুটিয়ে তুলেছেন মূর্তি আকারের সামাজিক ও পৌরাণিক কাহিনী।  এই মূর্তিগুলির মধ্যে‌ যেমন‌  রামায়ণের বানর সেনার সেতু বন্ধন, জটায়ু বধ,  রাম রাবণের যুদ্ধ, সীতা হরণের মতো ঘটনা‌ ফুটিয়ে  তোলা হয়েছে তেমনি যাত্রী সমেত  নৌকা, পালকিতে ভ্রমণ এমনকি শ্রীকৃষ্ণ  এবং দেবী দুর্গার মূর্তি মন্দির দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে‌ ।
মূলটির খ্যাতির আর একটি বিশেষ কারণ রয়েছে ।‌ কারণটি হল এখানকার  কালী পুজো । কালী পুজোর সময়ে মুলুটীর রূপ বদলে যায়।  গোটা গ্রাম তখন আলোয় আলোকময় হয়ে  উঠে।  একদিনের পুজোর আয়োজন শুরু হয় অন্তত সাত দিন আগে থেকে।‌  মন্দির প্রাঙ্গন ও তাঁর আশেপাশে  বিরাট মেলা বসে। প্রচুর মানুষের এখানে সমাগম হয়। কালীপুজো উপলক্ষে এই গ্রামের যে সব পরিবার এবং রাজ পরিবারের সদস্যরা ‌‌ কর্মসূত্রে দেশের এবং রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে  থাকেন তাঁরাও সপরিবারে সবাই এখানে চলে আসে।
মুলুটি‌র  শ্যামা পূজার একটা ইতিহাস‌ এবং‌ পরম্পরা  আছে।  মুলুটির রাজারা বীরভূমের ডামরা গ্রাম থেকে রাজধানী  মুলুটিতে নিয়ে এলে সঙ্গে নিয়ে আসেন তাঁদের পূজ্য  শ্যামা মাকে। রাজাদের আনুকূল্যে শ্যামা পূজা মুলুটি গ্রামে এত ব্যাপকতা। পরম্পরা অনুসারে কালী পুজোর আগে মা মৌলীক্ষা মন্দিরের পাশের খোলা বিস্তৃর্ণ  মাঠে বিশাল আতস বাজির প্রদর্শনী হয়। দূর দূরান্তের  গ্রাম থেকে এই প্রদর্শনী দেখতে মানুষ আসে। আশপাশের  এবং আদিবাসী গ্রামের মানুষরাও  দলে দলে এসে এই পুজোয় যোগ দেয় । নানা সম্প্রদায়‌, জাতি এবং বর্ণের মানুষ মিলেমিশে মুলুটীর মন্দির প্রাঙ্গনে একাকার হয়ে যায়। তবে মুলুটীর শ্যামাপূজার‌ বিশেষ বৈশিষ্ট্য‌ হল  নানকর মুলুটীর রাজ পরিবারের  পৃথক পৃথক শাখার এবং  আশেপাশের  গ্রামের কালী মূর্তি গ্রাম প্রদক্ষিন করে  মা মৌলীক্ষা মন্দিরে একত্রিত হয়। এখানে মা মৌলীক্ষা দেবীর পূজা আগে সম্পন্ন করে তারপর  অন্য মূর্তিগুলো পূজা করা হয়।
তারাপীঠের জন কোলাহল থেকে মুলুটী  গ্রামে মা মৌলীক্ষা দেবীর  মন্দিরের পথে‌ পৌঁছবার  রাস্তার দু দিকে যতদুর  চোখ যায়  কেবল সবুজের  প্রান্তর ।‌  সবুজ মাঠের মধ্যে দিয়ে চলতে‌ চলতে  এক সময়ে  ভূমির গঠন দেখে সহজেই বোঝা যায় মালভূমি অঞ্চলের উপস্থিতি । মসৃন কালো ঢেউ খেলানো উঁচু নিচু রাস্তা। রাস্তার পাশে কোথাও বেশ ঘন জঙ্গল। আবার কোথাও ভূমি  সিরির মতো ধাপে ধাপে সাজানো। জঙ্গলের এবং চাষের জমির মাঝে‌ ইতিউতি  লাল মাটির চাহনি । নানা আকারের রেখায় বাধন দেওয়া চাষের জমি। দূর প্রান্তে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা গাছের সারি।‌‌‌ দেখলে মনে হয় কোন চিত্রকরের হাতে ফুটিয়ে‌  তোলা অপরূপ ছবি। বাংলা এবং সংলগ্ন রাজ্য ঝড়খন্ডের অপরূপ সৌন্দর্যের মধ্যে ইতিহাসের সঙ্গে বাংলার প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যের  নিদর্শন  আজও মাথা উঁচু করে বিরাজ করছে ‌ সিদ্ধপীঠ মুলুটী।
(  কৃতজ্ঞতা – প্রতিবেদনটির সমস্ত তথ্য এবং অংশ বিশেষ  প্রাক্তন সেনাকর্মী  এবং পরবর্তীতে শিক্ষক শ্রী গোপালচন্দ্র‌ মুখোপাধ্যায় রচিত ‘নানকর মুলুটী’ বইতে থেকে উল্লেখ করা হয়েছে )।