শুধু বিরোধীরা নন, ভারতের প্রাক্তন সামরিক কর্তারাও গালওয়ানে চিন-ভারত সংঘাত নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। প্রকাশ্যেই তাঁরা কেন্দ্রের মোদি সরকারের কাছে গালওয়ানের ব্যাখ্যা দাবি করলেন। এক সেনা অফিসার-সহ ২০ জওয়ান শহিদ হওয়ার পরেও ভারতীয় সেনা কেন চিনকে পালটা আক্রমণে ‘অস্বীকার’ করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রাক্তন ফৌজিরা। গোটা ঘটনায় ভারতীয় প্রশাসনকে দোষারোপ করে তাঁরা থেমে থাকেননি। এটা রাজনৈতিক ও সামরিক স্তরেও ব্যর্থতা বলে তাঁরা মনে করেন।
ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রাক্তন প্রধান, ১৯৭১-এর যুদ্ধের নায়ক, অ্যাডমিরাল অরুণ প্রকাশ টুইট বার্তায় লেখেন, গালওয়ান সম্পর্কে এত বিভ্রান্তি কেন? জওয়ানরা সশস্ত্র হলেও কি অন্য কিছুতে মগ্ন ছিল? ‘আত্মরক্ষার জন্য কোনও নির্দেশ কি তাঁদের কাছে পৌঁছেছিল? নাকি তাঁরা নিরস্ত্র ও কম সংখ্যায় ছিল? পিপলস লিবারেশন আর্মি কি কাউকে আটক করেছিল? চিনের প্রচারে জনগণের মনোবল প্রভাবিত হওয়ার চেয়ে, সরকারের কাছ থেকেই এর উত্তর চান।
প্রাক্তন নৌকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সোমবার রাতে গালওয়ান উপত্যকায় ঠিক কী হয়েছিল, সে বিষয়ে না সরকার, না সেনা, কেউই ঝেড়ে কাশেননি। বৃহস্পতিবার রাতে চিনের তরফে ১০ ভারতীয় সেনাকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ১৫ জুন গালওয়ান সংঘাতের সময় তাঁদের আটক করা হয়েছিল বলে বেজিংয়ের দাবি। অথচ, সেই রিপোর্ট না সরকারি ভাবে স্বীকার করা হয়েছে। না তা অস্বীকার করা হয়েছে।
আর এক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচএস পানাগও রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বকে গলিওয়ানের ঘটনার জন্য অভিযুক্ত করেছে। তিনি বলেন, চিনের পিএলএ আমাদের ভারতীয় ভুখণ্ডের ভিতরে ঢুকে এল। ভারতীয় ভূখণ্ডকে নিজেদের বলে দাবি করল। আমাদের তরফে পরিস্থিতি আগাম বুঝে উঠতে না-পারার কারণেই এই সীমান্ত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছিল বলে তিনি দাবি করেন।
সরকারকে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে তিনি বলেন, চিনা সেনারা একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েই এসেছিল। অথচ, সরকার কোনও দাবি না-করে, উলটে বলছে, বাহিরাক্রমণ হয়নি। সরকারের এই ভূমিকায় বিস্মিত অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল।
তিনি বলেন, ‘আমরা অস্বীকার করে, চিনের সুবিধা করে দিয়েছি। চিন যে কারণে দাবি করছে, তারা তাদের অঞ্চলেই ছিল। এটা একইসঙ্গে রাজনৈতিক সামরিক ব্যর্থতা বলেই তিনি দাবি করেন। চিনাসেনা ভারতীয় এলাকা দখল করেছে কি না, বা অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে কি না, তা নিয়ে শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছিল কংগ্রেস।
নরেন্দ্র মোদি স্পষ্ট জানান, চিনা সেনা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় এলাকায় অনুপ্রবেশ ঘটায়নি। কোনও পোস্টও দখল করেনি। তিনি আর বলেন, ‘আমাদের সেনা শহিদ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু যারা ভারত মাতার দিকে চোখে তুলে তাকিয়েছিল, ভারতীয় সেনারা তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে। বৈঠকে সব দলই চিনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে।
যদিও, প্রাক্তন সামরিক কর্তারা তা মানতে চাইছেন না। উলটে তাঁরা বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং হাতে একমাস সময় পেয়েছিলেন। তার পরেও চিনা সেনারা যে আমাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে, এ নিয়ে তিনি কেন কিছু বললেন না?