‘বুলডোজার বিচার’ সম্পর্কে কড়া পর্যবেক্ষণ দেশের শীর্ষ আদালতের। শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, অভিযুক্তের অপরাধ আদালতে প্রমাণ হওয়ার পরও বাড়ি ভাঙা হয় কোন আইনে ? সোমবার দুই বিচারপতি বিআর গাভাই এবং কেভই বিশ্বনাথনের বেঞ্চে বিষয়টি তোলেন আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে। আবেদনে তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে নাগরিকদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। অথচ সংবিধানে এমন কোন আইনের বিধান নেই।
যোগীরাজ্যে বুলডোজার বিচার একাধিকবার প্রয়োগ করা হয়েছে। যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত বা অপরাধীর বাড়ি। এর পর এই একই দাওয়াই দেখা গিয়েছে বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্যেও। এই নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয় সুপ্রিম কোর্টে। সোমবার তার শুনানিতে এই বুলডোজার দাওয়াই নিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, কেউ অভিযুক্ত বা দোষী হলেই তাঁর বাড়ি ভাঙা যায় না। এমন কোনও আইন নেই।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন শুনানিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এই ধরণের বুলডোজার নীতির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘কেবলমাত্র অভি্যুক্ত হলে কি কারও বাড়ি ভেঙে দেওয়া যায় ? কেউ দোষী সাব্যস্ত হলেও তার বাড়ি ভাঙা যায় না। ‘ ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ’বেআইনি নির্মাণ যেমন সমর্থনযোগ্যনয়, তেমনি আইনবহির্ভূত ভাবে কোনও নির্মাণ ভাঙাও উচিত নয়।’
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সওয়াল করেন, কোনও ব্যক্তি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলেও তাঁর স্থাবর সম্পত্তি কোনওভাবেই ধ্বংস করা যায় না। এ ধরনের সম্পত্তি যদি অবৈধভাবে নির্মাণ করা থাকে, কেবল সেক্ষেত্রেই তা ভাঙা যেতে পারে।
বিচারপতি গাভাই বলেন, আপনি যদি এটা মেনে নিয়ে থাকেন তাহলে আমরা এর ভিত্তিতে দেশজুড়ে একটি নির্দেশিকা দিচ্ছি। শুধুমাত্র অভিযুক্ত বলে এমনকী দোষী সাব্যস্ত হলেও কারও বাড়ি-সম্পত্তি ভেঙে দেওয়ার পিছনে কী যুক্তি আছে? কেন তা ভাঙা হচ্ছে?
বেঞ্চ আরও বলেছে, যদি সেই নির্মাণ বেআইনিভাবে তৈরি করা থাকে তো তাহলে ঠিক আছে। বিচারপতি বিশ্বনাথন বলেন, প্রথমে সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষ নোটিস জারি করবে। সেই নোটিসের জবাব দেওয়ার জন্য সময় দিতে হবে ওই ব্যক্তিকে। আইনি ফয়সালার জন্য সময় দিতে হবে । তারপরেও কাজ না হলে বাড়ি, দোকান বা অন্য স্থাবর সম্পত্তি ভাঙা যেতে পারে।
বেঞ্চ স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, তারা অবৈধ নির্মাণকে রক্ষা করার পক্ষপাতী নয়। অবৈধ নির্মাণ কিংবা জনসাধারণের যাতায়াতকারী রাস্তা আটকে যদি কোনও স্থায়ী নির্মাণ গড়ে ওঠে, তা মন্দিরও হতে পারে, তবে সবক্ষেত্রেই ভেঙে ফেলার জন্য একটি নিয়মাবলি মেনে চলা উচিত।
মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানের গুই বাসিন্দা সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেন। তাঁদের অভিযোগ, মামলায় অভিযুক্ত হিসেবে নাম থাকায় তাঁদের সম্পত্তি প্রশাসনের তরফে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।আগামী মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি। ওই দিন সব পক্ষের মত শুনবে সুপ্রিম কোর্ট ।