‘ কৃষক ‘ ইস্যুতে জোর, বারাণসীর কৃষক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা মোদির 

দিল্লি, ১১ জুন –  আগামী ১৮ জুন উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে আয়োজিত এক কৃষক সম্মেলনে যোগ দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যদি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বারাণসী যান, তা হলে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তৃতীয়বার শপথ নেওয়ার পর এটিই তাঁর প্রথম বারাণসী সফর হবে। বিজেপি সূত্রকে উদ্ধৃত করে এক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমনটাই প্রকাশিত হয়েছে।

 
প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্থানীয় বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন, মোদির কৃষক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জোরকদমে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। মোদির সফরকে কেন্দ্র করে প্রশাসনও বৈঠক করেছে বলে জানা গেছে। বিজেপির কাশী অঞ্চলের সভাপতি দিলীপ পটেল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর এক দিনের সফরে দশাশ্বমেধ ঘাটের গঙ্গা আরতিতেও যোগ দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীর কৃষক সম্মেলনের জন্য দলীয় কর্মীদের বিভিন্ন দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে পটেল জানিয়েছেন।

বারাণসী কেন্দ্র থেকে এই নিয়ে তৃতীয় বার জিতেছেন মোদি । তবে চব্বিশের নির্বাচনে যে ব্যবধানে তিনি উত্তরপ্রদেশের বারাণসী আসনটি জিতেছেন, তা দলের অস্বস্তির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারাণসী থেকে মোদির জয়ের ব্যবধান এবার ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৫১৩টি ভোট। শতাংশের হিসাবে যা ১৩.৪৯ শতাংশ। গত দু’বারের চেয়ে এই ব্যবধান বিপুল পরিমাণে কমেছে। অর্থাৎ, আগের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়েছেন মোদি ।

২০১৪ সালে বারাণসী থেকে ৫.৮১ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন মোদি, ব্যবধান ছিল ৩.৭ লক্ষ। ২০১৯ সালে বারাণসীতে মোদির জয়ের ব্যবধান বৃদ্ধি পায়। ওই কেন্দ্র থেকে ৬.৭৪ লক্ষ ভোট পেয়েছিলেন তিনি, ব্যবধান ছিল ৪.৭৯ লক্ষ। গত দু’বারই প্রায় চার লক্ষ এবং পাঁচ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জিতে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদি। যদিও এবার ছবিটা অন্যরকম। গতবারের তুলনায় মোদির জয়ের ব্যবধান কমেছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। পাশাপাশি, বারাণসী কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন একবার অল্প ভোটের ব্যবধানে পিছিয়েও পড়েন মোদি। শেষ পর্যন্ত প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে জয়ী হন তিনি। সেই বারাণসীকেই কৃষক সম্মেলনের জন্য বেছে নেওয়াও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল ।


উল্লেখ্যযোগ্য বিষয় হল, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ৮, হরিয়ানায় ৫, রাজস্থানে ১১, পাঞ্জাবে ২, মহারাষ্ট্রে ১২—এই পাঁচ রাজ্যে মোট ৩৮টি জেতা আসন হারিয়েছে বিজেপি। মূলত কৃষকদের দাবি অগ্রাহ্য করা, কৃষক আন্দোলন দমনে কড়া হাতে চেষ্টা , মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষি, ডেয়ারি মালিক, পশুপালকদের সমস্যা এর অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে কৃষক ভোট কমেছে ৩ শতাংশ। পাশাপাশি, বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র কৃষক ভোট ১৪ শতাংশ বেড়েছে। মোদীর দ্বিতীয় দফায় তিন বিতর্কিত কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বিক্ষোভ প্রত্যক্ষ করেছে গোটা দেশ। ন্যায্য সহায়ক মূল্য-সহ বেশ কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে ওই আন্দোলন থামাতে তিন আইন বাতিল করতে হয় কেন্দ্রকে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এরই প্রভাব পড়েছে বিজেপির ভোটব্যাঙ্কে।

এই পরিস্থিতিতে, কৃষকদের মন রাখতে তাদের দাবিদাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে এবার কিছু পদক্ষেপ করতে পারে বিজেপি। তৃতীয় বার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম যে ফাইলটিতে মোদি সই করেন , সেটি পিএম কিসান নিধি যোজনার। এরই মধ্যে বারাণসীতে মোদির কৃষক সম্মেলনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয়েছে।