অধরা ‘ভোলে  বাবা’,  গোপন ডেরা থেকে পাঠানো অডিও বার্তায় ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’

হাথরস, ৪ জুলাই –  হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে ১২১ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরও পুলিশের ধরা ছোঁয়ার বাইরে স্বঘোষিত ধর্মগুরু নারায়ণ সাকার ওরফে ‘ভোলে বাবা’। তবে আড়াল থেকেই ঘটনার দায় সমাজবিরোধীদের দিকে ঠেলেছেন তিনি। গোপন ডেরা থেকে পাঠানো অডিও বার্তায় ভোলে বাবা ওরফে সুরজ পালের দাবি, তাঁর দুর্নাম করতেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে কিছু সমাজবিরোধী। তিনি ঘটনাস্থল থেকে চলে যাওয়ার পর ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি করেছেন অডিও বার্তায়। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ আয়োজক সংস্থার ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে প্রশ্ন উঠছে সংস্থার প্রধান ভোলেবাবার বিরুদ্ধে পুলিশ এখনও কেন সরাসরি কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন জানায় , এই ঘটনায় মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ৬ জনের মধ্যে ২ জন মহিলা এবং ৪ জন পুরুষ। এই ৬ জনই সৎসঙ্গের ‘সেবক’ অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবী ছিলেন। ঘটনার পরই পালিয়ে যান এই ৬ জন।

হাথরসে অনুষ্ঠিত  ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একাধিক নিয়মভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ৮০ হাজার জনের জমায়েতের  অনুমোদন দিলেও জানা গেছে সেখানে উপস্থিত ছিলেন আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ। আরও অভিযোগ, আয়োজকরা ভিড় সামলানোর ক্ষেত্রে কোন সহযোগিতা করেননি, সহযোগিতা ছিল না যান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও। শুধু তাই নয়, পদপিষ্টের ঘটনার পর প্রমাণ লোপাটের চেষ্টাও করেন তাঁরা । প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, অনুষ্ঠান শেষ হতেই দুই বিপরীতমুখী জনস্রোত তৈরী হয়। একদল বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, অন্যদিকে একদল উলটো স্রোতে হেঁটে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাবার পায়ের ধুলো নিতে। এতেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং দুর্ঘটনা ঘটে যায় ।

ঘটনাপ্রবাহ এতদূর গড়ানোর পরও এফআইআরে নাম নেই ভোলে বাবার। রয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সহকারীর নাম। পুলিশ জানিয়েছে, ওই সহকারী  প্রকাশ মাধুকরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। ওই মূল অভিযুক্তের সন্ধান দিতে পারলে ১ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।


এদিকে এই ঘটনায় উঠে এসেছে ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’। ষড়যন্ত্র হওয়ার দাবি করেছেন ভোলে বাবার আইনজীবী এপি সিংহ।তাঁর দাবি,  গোটা ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে ষড়যন্ত্র, হাত রয়েছে ‘কিছু সমাজবিরোধীর’। এর আগে নারায়ণের তরফেও একটি বিবৃতি দিয়ে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছিল। যদিও ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা হয়ে যাওয়া ওই ধর্মগুরুই ওই বিবৃতি দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

ভোলে বাবার আইনজীবী বলেন, “কিছু সমাজবিরোধী চক্রান্ত করেছেন। যখন নারায়ণ সরকার হরি ওই জায়গা ছেড়ে বেরিয়ে যান, তখন আমাদের স্বেচ্ছাসেবকেরা বুঝতেই পারেননি কী ঘটছে। কারণ এটি একটি ষড়যন্ত্র ছিল। পরিকল্পনা করে এটি করানো হয়। এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।”

প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছিল যে, ‘সৎসঙ্গে’ যোগ দেওয়া মানুষজন নারায়ণের ‘চরণধূলি’ বা পায়ের ধুলো নেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি করার জন্যই  পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে । এমনকি প্রশাসনের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্টেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। স্বঘোষিত ধর্মগুরুর আইনজীবী অবশ্য বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।আইনজীবীর ব্যাখ্যা, “নারায়ণ সাকার হরি ভক্তদের কখনও পায়ে হাত দিতে দেন না। যে পায়ের ধুলো নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেটি মিথ্যা। এই ধরনের ঘটনার কোনও ছবি বা ভিডিয়োও নেই।’’

সূত্রের খবর, এর আগে ভোলে বাবার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ ছিল। তখনও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। হাথরসের ঘটনার পর স্বঘোষিত ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া পুরনো মামলাগুলি পুলিশ নতুন করে নাড়াচাড়া শুরু করলেও এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়দের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আগে  উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোতে চাকরি করার সুবাদে প্রশাসনের অভ্যন্তরে তাঁর দাপট রয়েছে। যে কারণে অতীতে যৌন হেনস্তার অভিযোগও বছরের পর বছর ফাইলবন্দি হয়েই রয়েছে।

মঙ্গলবার হাথরসে একটি ‘সৎসঙ্গে’র ডাক দিয়েছিলেন ‘ভোলে বাবা’। খোলা মাঠে তাঁবু খাটিয়ে ‘সৎসঙ্গ’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষেই ঘটে যায় বিপত্তি। হাথরসের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১২১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও অনেকে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এই ঘটনার তদন্তের জন্য মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করেছে।

হাথরাসের ঘটনায় ইতিমধ্যে নিহতদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করেছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। এলাহাবাদ হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ব্রিজেস কুমার শ্রীবাস্তবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গড়েছে রাজ্য।