একটানা রেকর্ড তাপমাত্রার অস্বস্তি থেকে এবার রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা। সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের রিপোর্ট সেরকমও ইঙ্গিত দিয়েছে। ফলে ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রপৃষ্ঠে যে রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল, তার আর দেখা নাও মিলতে পারে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ১৩ মাসের দীর্ঘ সময়ে গত কয়েক বছরের তুলনায় সেলসিয়াসে প্রায় এক চতুর্থাংশ ডিগ্রি বেশি ছিল। চলতি বছরের জুলাই মাসে সেই তাপমাত্রা অনেকটা কমেছে। যা নিয়ে আশার আলো দেখছেন আবহাওয়াবিদরা। যদিও ২০২৩-এর তুলনায় ২০২৪-এর জুলাই মাসের সেই ফারাক মাত্র ০.০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রসঙ্গত গত কয়েক দশক ধরে গড় পৃথিবীর উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে। যার জেরে মেরু প্রদেশের বরফ গলতে শুরু করেছে। যা আগামী দিনে বিশ্ববাসীর কাছে এক আতঙ্কের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে আচমকা গত ১৩ মাস ধরে কেন এই রেকর্ড তাপমাত্রা বৃদ্ধি হচ্ছে, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দিয়েছে। আবার হঠাৎ সেই তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছে। এর পিছনে কী কারণ আছে তা নিয়ে ভাবাচ্ছে বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর মুলে রয়েছে ‘এল নিনো’। কী সেই এল নিনো? জানা গিয়েছে, এল নিনো হল প্রশান্ত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এক উষ্ণ সমুদ্রস্রোত। সারা পৃথিবীতে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বেড়েছে, বদলেছে দক্ষিণ গোলার্ধের পূবালী বায়ুর গতিপথ। এই বিপরীত ঘটনার নাম এল নিনো। এল নিনো কিংবা লা নিনা আসতে পারে তিন থেকে সাত বছর অন্তর। এই সময় পূবালী বায়ুর গতি বাড়ে, কমে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা। ভারী বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার প্রভাব পড়ে ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার-সহ দক্ষিণের অন্যান্য দেশগুলিতেও। আবহবিদরা জানিয়েছেন, চলতি এল নিনো চক্রটি শুরু হয় এক বছর আগে, ২০২৩ সালের শেষে তা চরমে পৌঁছয়। এখন শক্তি ক্ষয় করে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর তাতেই কিছুটা কমেছে পৃথিবীর তাপমাত্রা!
বিশ্ব উষ্ণায়নকে মাপতে আপেক্ষিক হিসাবে ১৫০ বছর আগের পৃথিবীর তাপমাত্রাকে মাপকাঠি ধরা হয়। তাহলে বর্তমানে উষ্ণায়নের মাপকাঠি হল ১৮৫০-১৯০০ সালের মাঝামাঝি সময়ের পৃথিবী। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, ওই সময় শিল্পের এত অগ্রগতি হয়নি। ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রা ছিল কম। তাই বায়ুমণ্ডল ও সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও কম ছিল। সেই তুলনায় ২০২৪ সালের জুলাই ১.৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি উষ্ণ, যার মধ্যে প্রায় ১.৩ ডিগ্রির জন্য মাঝের দশকগুলিতে শিল্পায়নের ক্ষতিকর প্রভাব দায়ী।
তবে মাত্র ০.০৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা কমায় গরমে এখনই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে নারাজ বিজ্ঞানীরা।