পর্নোগ্রাফি মামলার সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচারের তদন্তে মুম্বইয়ের শিল্পপতি তথা বলিউড অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টির স্বামী রাজ কুন্দ্রার বাসভবন ও অফিসে শুক্রবার অভিযান চালাল ইডি। ইডি সূত্রে খবর, রাজ কুন্দ্রার সহযোগী এবং ঘনিষ্ঠদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। অশ্লীল চলচ্চিত্র নির্মাণের অভিযোগে ২০২১ সালের জুন মাসে কুন্দ্রাকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই মাস জেলে থাকার পর ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়। পর্নোগ্রাফি মামলায় রাজকেই মূল চক্রান্তকারী হিসাবে চিহ্নিত করেছিল মুম্বই পুলিশ।
পর্নোগ্রাফি মামলার বিবরণ অনুযায়ী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী মডেল এবং অভিনেতাদের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রলুব্ধ করা হত। এরপর তাঁদের অশ্লীল চলচ্চিত্রে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। শ্যুটিং সাধারণত মুম্বইয়ের ভাড়া করা বাংলো বা অ্যাপার্টমেন্টে হত। শ্যুটিংয়ের সময়, অভিনেত্রীদের একটি চিত্রনাট্য অনুযায়ী অভিনয় করতে বলা হত এবং তাদের নগ্ন দৃশ্যে অভিনয় করার জন্য চাপ দেওয়া হত বলে অভিযোগ। যাঁরা তা করতে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল এবং শ্যুটিংয়ের ব্যয়ভার বহন করতে বাধ্য করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।
পর্নোগ্রাফিকাণ্ডের তদন্তে নেমে ‘হটশট’ নামে বিশেষ একটি অ্যাপের সন্ধান পেয়েছিল মুম্বই পুলিশের অপরাধদমন শাখা। ওই অ্যাপ যে সংস্থা নিয়ন্ত্রণ করত, তার মালিক ছিলেন রাজ। একাধিক সার্ভার থেকে পর্নোগ্রাফি ভিডিও, স্বল্প এবং বড় দৈর্ঘ্যের ছবি পাওয়া গিয়েছিল। অভিযোগ, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এই ধরনের ছবি তৈরি করতেন রাজ। এর পর সেসব ছবি বিক্রি করতেন তিনি । বিদেশেও এই চক্র বিস্তৃত বলেও অভিযোগ ওঠে। মুম্বই পুলিশের অপরাধ শাখার কর্মকর্তারা অভিযানের পরে জানান যে, বাজেয়াপ্ত করা সার্ভারগুলিতে প্রাপ্তবয়স্কদের বিষয়বস্তু পাওয়া গেছে। মুম্বই পুলিশ বলেছিল যে, তাদের কাছে কুন্দ্রার বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।
রাজ কুন্দ্রার বিরুদ্ধে অভিযোগ, অশ্লীল ভিডিও ছবি তৈরি করে সেখান থেকে সংগৃহীত অর্থ বিদেশে পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিদেশি ব্যাঙ্কে জমা হয়েছে। তার ভিত্তিতে ফের তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
এর আগেও মুম্বই পুলিশ বলিউডের অভিনেত্রী শিল্পা শেট্টির স্বামীকে গ্রেফতার করেছিল। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইডির জালে ধরা পড়েন চলচ্চিত্র নির্মাতা এই ব্যবসায়ী। তখন তাঁর জুহুর ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করে ইডি। এছাড়াও পুনের একটি বাংলোও তদন্তকারী সংস্থা বাজেয়াপ্ত করে। পর্নোগ্রাফির পাশাপাশি বিটকয়েন দুর্নীতিতেও নাম জড়িয়ে পড়ে রাজ কুন্দ্রার। চলতি বছরের শুরুর দিকে ইডি রাজ এবং শিল্পার ৯৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। অভিযোগ, বিটকয়েন দুর্নীতির মাধ্যমে ওই সম্পত্তির মালিকানা পেয়েছেন তাঁরা। এবার পর্নোগ্রাফি মামলাতে ফের তদন্তে নেমেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এবার মুম্বই ও উত্তরপ্রদেশের প্রায় ১৫টি জায়গায় একযোগে তল্লাশি চলছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে কুন্দ্রার সান্তাক্রুজের বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিল্পার স্বামী রাজ কুন্দ্রা কেবলমাত্র অশ্লীল ছবি তৈরি করে বিপুল সম্পদ তৈরি করেছেন তা নয়, তিনি বিভিন্নভাবে অর্থ তছরুপ করে দেশের আইনও ভঙ্গ করেছেন। অভিযোগে আরও বলা হয়, জোর করে পর্নোগ্রাফি ছবিতে কাজ করতে তখনই মালাড পশ্চিমের একটি বাংলোয় তল্লাশি চালিয়ে এক বলিউড অভিনেত্রীসহ ১১ জনকে অশ্লীল ছবি তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার করে মুম্বই পুলিশ। রাজ কুন্দ্রা এবং রাজ কুন্দ্রা ফিল্মসের আধিকারিকরা ছাড়াও অভিনেতা পুনম পান্ডে, শার্লিন চোপড়া এবং উমেশ কামাতকেও এই মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছিল।