দিল্লি, ২৩ এপ্রিল– আর্থিক বৃদ্ধির গতি শ্লথ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ তাই এ বছর তার পূর্বাভাস ৭ শতাংশে থমকেছে৷ এই অবস্থায় দেশে সুদ কমানোর পক্ষে সওয়াল করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির দুই সদস্য অসীমা গয়াল এবং জয়ন্ত বর্মা৷ তাদের যুক্তি, ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষমতা অনুযায়ী মাথা তোলার সুযোগ দিলে, তবে যুব সম্প্রদায়ের জন্য তৈরি হবে কাজ এবং লগ্নিও আসবে৷ তবে কমিটির আর এক সদস্য শশাঙ্ক ভিদে অর্থনীতির ধারাবাহিক অগ্রগতি নিয়ে আশাবাদী৷ গত অর্থবর্ষে দেশে ৭.৬% আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে৷ ভিদের ধারণা, ভাল বর্ষা, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং উন্নত আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের হাত ধরে চলতি অর্থবর্ষেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তা ৭% বা তার বেশি হতে পারে৷ তাঁর কথায়, ‘‘এক দিকে বিশ্ব বাজারে চাহিদার শ্লথ পুনরুজ্জীবন ও অন্য দিকে জোগান-শৃঙ্খলের সঙ্কট…চলতে থাকা ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত যদি দ্রুত মেটানো না যায়, তবে তা চাহিদা ও কাঁচামালের দামের নিরিখে ঝুঁকি তৈরি করবে৷ …উৎপাদনে চরম আবহাওয়ার প্রতিকূল প্রভাব যতটা সম্ভব কমানোর জন্যও তৈরি থাকতে হবে৷’’
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করাচ্ছে, বিভিন্ন রাজ্যে চলতে থাকা তাপপ্রবাহ কিংবা তীব্র তাপপ্রবাহের জেরে কৃষি উৎপাদনের ঝুঁকির মুখে পড়ার কথা৷ এখনও বাজারে আনাজ-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম চড়া৷ আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন কমলে জোগানে ধাক্কা মূল্যবৃদ্ধিকে ফের ঠেলে তুলতে পারে৷ তার উপর পশ্চিম এশিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন অংশে ভূ রাজনৈতিক উত্তেজনা বাণিজ্য বৃদ্ধির পথেও কাঁটা৷ ফলে বৃদ্ধির প্রত্যাশা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন বহাল৷ তবে খাদ্যপণ্যের (আনাজের মতো পচনশীল পণ্য) দামে লাগাম পরাতে না পারার কারণ যে আবহাওয়াই, তা মেনে ভিদে বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে তা স্থিতিশীল করতে হলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি অন্যতম প্রধান শর্ত৷ এই দাবিও করেছেন, আন্তর্জাতিক পরিবেশ দেশের অগ্রগতির পথে বড় বাধা৷
তাই দীর্ঘ মেয়াদে জোগান, পণ্য মজুতের জন্য প্রক্রিয়াকরণ এবং সংরক্ষণেও জোর দিয়েছেন তিনি৷ এ দিন অসীমার দাবি, কর্মসংস্থান ও লগ্নি বাড়াতে আর্থিক বৃদ্ধির হারকে আরও উপরে উঠতে হবে৷ মূল্যবৃদ্ধি সহনসীমার মধ্যে ও লক্ষ্যের (৪%) দিকে নামছে৷ ফলে সুদ কমিয়ে আরও উঁচু হারে বৃদ্ধির সাধ্য রয়েছে দেশের৷ যদিও মূল্যবৃদ্ধির সামনে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলেই যে রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ব্যাঙ্ককে ধার দেয়) সাতটি ঋণনীতিতে ৬.৫ শতাংশে স্থির, তা মেনেছেন তিনি৷ জোগান সঙ্কটের কারণে পণ্যের দামে অস্থিরতা নিয়ে এর আগে সতর্ক করেছেন আরবিআই গভর্নর শক্তিকান্ত দাসও৷এই অবস্থায় বর্মার বক্তব্য, ‘‘সুদ কমানোর পক্ষে আমার ভোট বাড়তে থাকা প্রকৃত সুদের (রেপো থেকে মূল্যবৃদ্ধি বাদ দিয়ে) বিরুদ্ধে, বিশেষত যখন এর ফলে বৃদ্ধিতে ঝিমুনি আসছে৷ …উঁচু প্রকৃত সুদ বাধা হতে পারে বেসরকারি ক্ষেত্রের লগ্নির পথেও৷’