দিল্লি, ১৩ জুন – জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে তৃতীয়বারের জন্যও অজিত ডোভালের উপর আস্থা রাখল নরেন্দ্র মোদি সরকার। ওই পদে ডোভালকেই পুনর্নিয়োগ করল মোদির মন্ত্রিসভা। বৃহস্পতিবার সরকারি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডোভালের পুনর্নিয়োগের কথা জানানো হয়। গত ১০ জুন থেকেই ওই নির্দেশিকা কার্যকর হয়েছে ।দীর্ঘ সাঁইত্রিশ বছর পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীতে অতিবাহিত করেছেন অজিত ডোভাল। ২০১৪ সাল থেকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে রয়েছেন তিনি ।
২০১৪-য় প্রাক্তন গোয়েন্দাকর্তা ডোভালকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে নিয়োগ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে জঙ্গি দমনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেন ডোভাল। ২০১৬ য় উরিতে জঙ্গি হানার পর তাঁর নেতৃত্বেই পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়, যা মোদি সরকারকে জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ২০১৭ সালে ডোকলামে ভারত-চিন যুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সেই সময় মূলত ডোভালের হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হয়। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে জঙ্গিহানার পর পাকিস্তানের বালাকোটে জঙ্গিশিবিরে বিমানহানার নেপথ্যেও ডোভালের পরিকল্পনা কাজ করেছিল বলে সরকারি সূত্রে খবর।
নিপুণ হাতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে দায়িত্ব সামলান অজিত ডোভাল।যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর ওই পদে পুনর্নিয়োগ করা হয় অবসরপ্রাপ্ত ওই আইপিএস আধিকারিককে। শুধু পুনর্বহালই নয়, তাঁর পদমর্যাদারও উন্নতি হয়। মোদি সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রিত্বের পাঁচ বছরে ডোভালের পদমর্যাদা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীর সমতুল্য। সেই পদমর্যাদার উন্নতি ঘটিয়ে তাঁকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় দফায় ডোভালের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন ৩৭০ ধারা রদের পর অশান্ত হয়ে ওঠা কাশ্মীর উপত্যকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়। এছাড়াও ২০২০-র জুনে পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় সেনার সংঘর্ষের পর দফায় দফায় বেজিংয়ের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন তিনি। সেই সময় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ডোভালের ‘দূরত্ব’ তৈরী হয়েছে এমন জল্পনাও তৈরি হয়। ফলে তৃতীয় দফার মোদি সরকারে তাঁর পুনর্নিয়োগ নিয়ে কিছুটা সংশয় তৈরী হয়েছিল।বৃহস্পতিবার সেই সংশয়ের অবসান ঘটল।
অজিত ডোভালের সাফল্য বর্ণময়। কখনও ভিখারি সেজে পাকিস্তানের রাজপথে বসে থাকা, কখনও খালিস্তানিদের ভিড়ে রিকশা চালক হয়ে ঢুকে পড়া, শত্রুপক্ষের ডেরায় ঢুকে বাক্যালাপের কৌশলে তাদের মধ্যে ভাঙন ধরানো – এক চাঞ্চল্যকর অধ্যায়। ১৯৪৫ সালে উত্তরাখণ্ডে জন্ম । বাবা সেনা অফিসার মেজর গুণানন্দ ডোভাল। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী পড়ুয়া ছিলেন। ২২ বছর বয়সে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডোভাল প্রথমবার ইউপিএসসিতে বসেই উত্তীর্ণ হন। সুযোগ পান ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিসে। এরপর আর থেমে থাকতে হয়নি তাঁকে । জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে তাঁর নানা কীর্তির কথা , বিশেষ করে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো বহুচর্চিত বিষয় নিয়ে ছবিও হয়েছে। তৃতীয়বার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া ডোভালের সঙ্গে বৃহস্পতিবারই বৈঠক করেন মোদি। গত চার দিন ধরে জঙ্গি হামলায় রক্তাক্ত জম্মু কাশ্মীর। সেই নিয়েই প্রধানমন্ত্রী শাহ ও ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে বিশেষ সূত্রে খবর ।
ডোভালের পাশাপাশি পিকে মিশ্রকেও ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি পদে নিয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ, মন্ত্রিসভাতেও যেমন নিজের কোর টিম ধরে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, একইভাবে সচিবদের মধ্য়েও নিজের দলই অটুট রাখলেন তিনি।