দূরদর্শন, আকাশবাণীর শব্দ কোপে ইন্ডিয়া জোট নেতাদের ভাষণ

বলা যাবে না সাম্প্রদায়িক সরকার, মুসলিম শব্দ
দিল্লি, ১৭ মে– কয়েকদিন আগেই দুরদর্শনের লোগো ও রং বদল নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছিল৷ বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার দেশের ঐতিহ্যবাহী সংবাদমাধ্যমে গেরুয়া রঙে রাঙিয়ে নিজেদের আয়ত্তে আনতে চাইছে৷ এবার সেই দুরদর্শনের নিষেধাজ্ঞা সেই অভিযোগকেই যেন ফের উসকে দিল৷ শুক্রবার দুরদর্শন এ আকাশবাণী তরফে নির্দেশিকা জারি করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে কোনও রাজনৈতিক ভাষণে কোন কোন শব্দ বলা যাবে না, তাও নির্দিষ্ট করে দিল ৷ মোদির বিরুদ্ধে যেকোন রকম শব্দে কাঁচি চালানোর দায়িত্ব তুলে নিয়েছে আকাশবাণী ও দূরদর্শন৷ সেই তালিকায় ‘মুসলিম’ এবং ‘সাম্প্রদায়িক কর্তৃত্ববাদী শাসন’এর মতো শব্দ ছাঁটাই করল আকাশবাণী ও দূরদর্শন কর্তৃপক্ষ৷
দুরদর্শনের এই নিষিদ্ধ শব্দতালিকা ব্যবহার করে ইতিমধ্যে দুই বিরোধী নেতা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের ডি দেবরাজনের বক্তব্যে কাঁচি চালিয়েছে দুরদর্শন৷ শুধু এই দুটি নয়, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে দূরদর্শন ও আকাশবাণী থেকে প্রচারের আগে তাঁদের লিখিত ভাষণ থেকে আরও কিছু শব্দ বাদ দিতে বলা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির কণ্ঠরোধের চেষ্টা বলে ইন্ডিয়া জোট শরিকরা একে বর্ণনা করেছে৷
কমিশনের বিধি অনুযায়ী, কোনও নেতা সরকারি প্রচারমাধ্যমের ভাষণে অন্য দেশের নিন্দা করতে পারবেন না৷ কোনও সম্প্রদায় বা ধর্মের প্রতি আক্রমণ করতে পারবেন না৷ আদালত অবমাননাসূচক কিংবা উসকানিমূলক বক্তব্য বলতে পারবেন না৷
কেন্দ্রের কঠোর আইন প্রণয়ন, মুসলিম এসব শব্দ বাদ দেওয়ার জন্য দুই নেতাকে জানানো হয়েছে৷ ইয়েচুরির লিখিত ভাষণ থেকে প্রশাসনের দেউলিয়াপনা এবং ব্যর্থতার কথাও ছেঁটে ফেলতে হয়েছে নির্দেশানুসারে৷ বিরোধী দলগুলি সরকারি প্রচারমাধ্যমের মঞ্চ থেকে দেশবাসীকে বলতে পারবে না যে এটা একনায়কতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী শাসন চলছে৷ এ প্রসঙ্গে ইয়েচুরি তাঁর বক্তব্যকে সমর্থন করে বলেছেন, হিন্দি ভাষণে কোনও অভিধান বহির্ভূত শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে তিনি মনে করেন না৷ এর মধ্যে ভুল কোথাও নেই৷ কলকাতা কেন্দ্রে রেকর্ড করা দেবরাজনের ভাষণেও মুসলিম শব্দটি ছেঁটে ফেলতে বলেছে কর্তৃপক্ষ৷ ইয়েচুরি এবং দেবরাজন তাঁদের ভাষণে সাম্প্রদায়িক সরকার, জঙ্গলরাজ, বন্য আইন এবং মুসলিম শব্দ ব্যবহার করেছেন বলে আপত্তি তোলে আকাশবাণী ও দূরদর্শন৷ ইয়েচুরি বলেন, এটা আশ্চর্যের যে হিন্দি ভাষণে ওরা কোনও খুঁত খুঁজে পেল না৷ আর ইংরেজি অনুবাদের ক্ষেত্রেই আপত্তি তুলল৷ দেবরাজনের দাবি, তাঁর লেখার মধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে একটি বিষয় ছিল৷ যেখানে অবধারিতভাবে মুসলিম শব্দটি এসে যায়৷ আমি অনুরোধ করা সত্ত্বেও ওরা আমার দাবি মানতে অস্বীকার করে৷
তবে নিজেদের কাজকে মোদি তোষণ মানতে নারাজ দুই সংস্থা৷ প্রসার ভারতীর তরফে বলা হয়েছে, দূরদর্শন এবং আকাশবাণী নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত বিধি অনুসরণ করে৷ এটাই প্রথম নয় যে, এই দুই নেতার বক্তব্যে কাটছাঁট করা হয়েছে৷ এর আগে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ থেকেও শব্দ বাদ দেওয়া হয়েছে অথবা পরিবর্তন করতে বলা হয়েছিল৷