দিল্লি সহ রাজ্যে রাজ্যে চিকিৎসক বিক্ষোভ

এনআরএস কান্ডের প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়েছে দিল্লির এইমসের ডাক্তাররা (Photo: IANS)

পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের কর্মবিরতি ও প্রতিবাদকে সমর্থন জানিয়ে শুক্রবার দিল্লি, মুম্বই, উত্তরপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, কেরল, পাঞ্জাব, বিহার, অসম ও হায়দরাবাদের চিকিৎসকরা একদিনের কর্মবিরতিতে সামিল হলেন।

দিল্লির ‘অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস (এইমস) এক চিকিৎসককে দেখা গেছে প্রতীকী হেলমেট ও ব্যান্ডেজ পড়ে হাসপাতালে রােগী দেখতে এসেছেন। ১৭ জুন সােমবার গােটা দেশে হাসপাতালগুলিতে ধর্মঘটের ডাক দিল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসােসিয়েশন (আইএমএ)।

চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠনের তরফ থেকে জানান হয়েছে, জরুরি ও রুটিন পরিষেবা চালু থাকবে। তবে আউটডাের ও অন্যান্য পরিষেবা বন্ধ থাকবে। কার্যত সােমবার চিকিৎসা পরিষেবা পুরােপুরি বদ্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা এনআরএসে চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে অচলাবস্থার দায় বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর চাপাল কেন্দ্র সরকার।


কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন সরাসরি অশান্তির দায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর চাপিয়ে বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি এবং কঠোর অবস্থানের জন্যই জুনিয়র ডাক্তাররা ক্ষুব্ধ হয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন’।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনে করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচিত ছিল আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া মন্তব্য পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘প্রেস্টিজ ইসু করবেন না’।

ধর্মঘটী চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন আর্জি জানিয়ে বলেন, ‘পরিষেবা স্বাভাবিক রেখে প্রতীকী প্রতিবাদ করুন।

শুক্রবার টুইটারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বর্ধন লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আর্জি জানাচ্ছি বিষয়টি ব্যক্তিগত সংঘাত হিসাবে নেবেন না। চিকিৎসকদের চরম হুশিয়ারি দিয়েছিলেন, সেই কারণে তাঁরা ক্রুদ্ধ হয়ে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখব। ফোনেও বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্ঠা করব’।

চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন টুইটে লিখেছে, ‘চিকিৎসকদের আমি আশ্বস্ত করতে চাই তাঁদের নিরাপত্তা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর। আপনারা শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ করুন, নিজের দায়িত্ব পালন করুন’।

মঙ্গলবার থেকে বাংলার চিকিৎসকরা ধমর্ঘটে সামিল হয়েছে। রােগীর আত্মীয়স্বজনের হাতে এক জুনিয়র চিকিৎসকের আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে গােটা রাজ্যের চিকিৎসকরা ধর্মঘটে শামিল হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারিকে উপেক্ষা করে ধর্মঘটী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘যতক্ষণ না তাঁরা নিরাপত্তা পাচ্ছেন কাজে ফিরবেন না’।

মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের বিক্ষোভের পিছনে বিরােধী দল বিজেপি ও বামেদের ধর্মঘটে ইন্ধন জোগানাের জন্য দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযােগ, ‘হিন্দু-মুসলিম রাজনীতি করছে ওরা’।

শুক্রবার এইমস-এর রেসিডেন্ট ডক্টরস অ্যাসােসিয়েশনের তরফ থেকে সারা দেশের চিকিৎসকদের প্রতীকী ধর্মঘটে শামিল হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিটেন্ডেন্ট ডি কে শর্মা একটি বৃিতিতে জানিয়েছেন, জরুরি পরিষেবা স্বাভাবিক থাকবে। রেসিডেন্ট চিকিৎসকরা জরুরি পরিষেবা দেবে অন্যদিনের মতােই। প্রসুতি বিভাগেও সব স্বাভাৰ্কি থাকবে।

তবে আউটডাের বিভাগ ও ডায়গনস্টিক বিভাগের পরিষেবা আজ বন্ধ থাকবে। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশ (আইএমএ)-এর তরফ থেকে তাদের সমস্ত শাখার সদস্যদের প্রতিবাদে শামিল হতে ও কালাে ব্যাজ পরে পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছে। এই ধরনের হিংসা রদে কোনও কেন্দ্রীয় আইন প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছে আবেদন জানিয়েছে তারা।

দিল্লি মেডিকেল অ্যাসােসিয়েশনও রাজ্যব্যাপী চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এইমস-এ আসা এক রােগীর আত্মীয় জানিয়েছেন, ‘আমার মায়ের ডায়ালিসিস আজ হওয়ার কথা। আমাদের বলা হল চলে যেতে, অন্য কোথাও থেকে করিয়ে নিতে’।

মহারাষ্ট্র অ্যাসােসিয়েশন অফ রেসিডেন্ট ডক্টরসও আজ রাজ্যজুড়ে একদিনে ধর্মঘট ডেকেছে। ওই অ্যাসােসিয়েশনর এক চিকিৎসক এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আউটডাের পরিষেবা এবং সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের পড়াশােনা বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিষেবা বিঘ্নিত হবে না’।

হায়দরাবাদে চিকিৎসকরা নিজামস ইনস্টিটিউট অফ মেজিক্যাল সায়েন্স-এ একটি প্রতিবাদ সভার আয়ােজন করেছে।

সােমবার থেকে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্মঘটের কারণে রাজ্যে সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। গত ৪ দিন ধরে এমার্জেন্সি, আউটডোর ও প্যাথলজিক্যাল বিভাগের পরিষেবা বন্ধ হয়ে রয়েছে। ব্যক্তিগত চিকিৎসা পরিষেবাও মিলছে না হাসপাতালগুলিতে।

কলকাতার এক সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিকিৎসকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘কাজে ফিরে আসুন। যে চিকিৎসকরা কাজে ফিরতে চান না, তাঁরা হস্টেল ছেড়ে দিন’। কাজে ফেরার আবেদন জানানাের পরই মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘ওরা বহিরাগত। সরকার ওদের কোনওদিনই সমর্থন করবে না। যে চিকিৎসকরা ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন আমি তাঁদের নিন্দা করছি। কাজের সময় পুলিশ কর্মীরা মারা যান। কিন্তু পুলিশরা তাে ধর্মঘটে বসেন না। হিন্দু মুসলিম রাজনীতি করছে’।

রােগীর আত্মীয়দের হাতে চিকিৎসকদের নিগ্রহের ঘটনা গােটা দেশেরই এক নিয়মিত ঘটনা। এপ্রিলে দিল্লির আরএমএল হাসপাতাল-এ এক রােগীর আত্মীয়ের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযােগ দায়ের করা হয় এক মহিলা চিকিৎসককে চড় মারার জন্য। চলতি মাসের প্রথমের দিকে এক ১৭ বছরের কিশাের ও তার বন্ধুর রুিদ্ধে চিকিৎসকের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযােগ দায়ের করা হয় পুলিশের কাছে। মহারাষ্ট্রে এক হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালীন ওই কিশােরের বাবা মারা যান। হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসককে নিগ্রহ করার অভিযােগে ওঠে রােগীর পরিবারের বিরুদ্ধে।