মারাঠা ভূমে পতনের দায়ে ইস্তফার ইচ্ছা বিজেপি প্রধান ফড়নবিসের

দেবেন্দ্র ফড়নবিশ (File Photo: IANS)

মুম্বই, ৫ জুন– মারাঠা ভূমে ২৩ সাংসদের সংখ্যাটি বর্তমানে নেমে দাঁড়াল নয়ে৷ বিজেপির এই বিপর্যয়ে স্বভাবতই দায় নিতে হবে উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসকে৷ মহারাষ্ট্রে ইন্ডিয়া জোটের কাছে ধরাশায়ী বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র সেই দায় নিয়েই ফল ঘোষণার পরের দিনই উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাইলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিস৷
বুধবার বিজেপি নেতৃত্বকে উপমুখ্যমন্ত্রীত্ব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন তিনি৷ এই মর্মে প্রস্তাবও পাঠিয়েছেন৷ যদিও দলীয় নেতৃত্ব ফড়ণবীসের প্রস্তাব নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তে হয়নি বলেই খবর৷ কার্যৎ মহারাষ্ট্রে ভেঙে পড়া দলীয় সংগঠনকে আবারও চাঙ্গা করতেই তিনি একদম তৃণমূল স্তর থেকে কাজ করতে চান বলেই জানিয়েছেন মহারাষ্ট্র বিজেপির অন্যতম প্রধান৷
ভোটের ফলপ্রকাশের পর সাংবাদিক বৈঠক করে নিজের সিদ্ধান্তের কথা বলেন মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী৷ ফড়ণবীস বলেন, ‘‘সামনেই বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে৷ সেই নির্বাচনের কথা মাথা রেখে এখন থেকেই আমি দলের সাংগঠনিক কাজে মন দিতে চাই৷ যাতে বিধানসভায় দলের পারফরম্যান্স আশানুরূপ হয়৷ সেই কারণেই রাজ্য সরকারের পদ থেকে আমাকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছি৷’
এ বারের নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে চমক দেখিয়েছে বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’৷ বিজেপিকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ৪৮ আসনের মহারাষ্ট্রে বিজেপি জিতেছে ন’টি আসনে, একনাথ শিন্ডের শিবসেনা সাতটি আসন এবং এনসিপির অজিত পওয়ার গোষ্ঠী একটি আসনে জয়লাভ করেছে৷ অন্য দিকে, মহারাষ্ট্রে কংগ্রেস পেয়েছে ১৩টি আসন, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ন’টি, শরদ পওয়ারের এনসিপি সাতটি আসনে জয়লাভ করেছে৷ নির্দল প্রার্থী জিতেছেন একটি আসনে৷ মোট ৪৮ আসনের এই রাজ্য লোকসভার আসনসংখ্যার নিরিখে উত্তরপ্রদেশের ঠিক পরেই৷ ২০১৯ সালে এই রাজ্যে সর্বাধিক আসন জিতেছিল বিজেপি৷ মোট ২৩ আসনে জিতেছিলেন পদ্মপ্রার্থীরা৷ দ্বিতীয় স্থানে ছিল অবিভক্ত শিবসেনা৷ তারা পেয়েছিল ১৮টি আসন৷ তৃতীয় স্থানে এনসিপি৷ তারা পেয়েছিল চারটি আসন৷ এ ছাড়া কংগ্রেস, এআইএমআইএম এবং নির্দল পেয়েছিল একটি করে আসন৷
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে সবথেকে উত্থান-পতন দেখা যায় মহারাষ্ট্রে৷ ২০১৯ সালে যে শিবসেনার হাত ধরে মহারাষ্ট্রে লড়াই করেছিল বিজেপি, এখন তা আড়াআডি় দু’টুকরো৷ বিধানসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে লডে়ছিলেন উদ্ধব৷ কিন্ত্ত ফল বেরোতেই মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবি নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিজেপির মতভেদ চূড়ান্ত আকার নেয়৷ উদ্ধব এনডিএ ছেডে় বেরিয়ে এসে হাত মেলান কংগ্রেস এবং এনসিপির সঙ্গে৷ তৈরি হয় ‘মহাবিকাশ আঘাড়ী’৷ উদ্ধবকে মুখ্যমন্ত্রী করে বিজেপিকে কোণঠাসা করে দেয় মহারাষ্ট্রের সেই বেনজির জোট৷ কিন্ত্ত মহা-আকাশে দ্রুত পটপরিবর্তন হয়৷ আচমকা মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য তথা একদা বালাসাহেবের ‘ডান হাত’ একনাথ শিন্ডে শিবির পাল্টান৷ সরকার পডে় যায়৷ নতুন করে শিন্ডের নেতৃত্বে সরকার গডে় বিজেপি৷
মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে এ বার ইস্তফা দিতে চান দেবেন্দ্র ফড়ণবীস! কিন্ত্ত কেন তিনি উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চাইছেন, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে৷ ২০১৯ সালের তুলনায় মহারাষ্ট্রে এ বার অনেকাটাই খারাপ ফল করেছে বিজেপি৷ এই রাজ্যে বিজেপির ২৩ জন সাংসদ ছিলেন৷ সেটাই নেমে দাঁড়াল নয়ে৷ মরাঠাভূমে বিজেপি বিপর্যয়ের দায় নিয়েই উপমুখ্যমন্ত্রীর পদ ছাড়তে চান, এমন কথাই জানালেন ফড়ণবীস৷ মঙ্গলবারই ঠিক হয়েছিল বুধবার পর্যালোচনা বৈঠকে বসবেন মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্ব৷ সেই বৈঠকে ফ়ড়ণবীস ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের শীর্ষ বিজেপি নেতারা৷ এই বৈঠকের মূল বিষয় ছিল, দলের কর্মক্ষমতা বিশ্লেষণ এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা৷এ বার সেই ২৩ সংখ্যাই নেমে এল নয়ে৷