কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার জনমুখী নীতি নির্ধারণে ব্যর্থ। আর এর ফলে হতাশায় ভুগছেন সরকারের নীতি নির্ধারকরা বলে মন্তব্য করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমােহন সিং। সম্প্রতি মুম্বইতে ব্যবসায়ী ও পেশাদারদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বর্তমান সরকারে দিশাহীনতার কঠোর সমালােচনা করেন।
বর্তমান সরকারের অর্থমন্ত্রী নির্মল সীতারামনের ইউপিএ সরকারের আমলে ব্যাঙ্কগুলির করুণ অবস্থার বর্ণনার জবাব দিতে গিয়ে মনমােহন সিং বলেন, অর্থমন্ত্রী ভুলে গেছেন আর্থিক উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে গেলে প্রথমেই ত্রুটিগুলি শুধরে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু অর্থমন্ত্রী সেসব দিকে না গিয়ে কেবল পূর্বতন সরকারের ত্রুটিগুলিকেই তুলে ধরতে ব্যস্ত। এতে দেশের যে চরম ক্ষতি হচ্ছে সেটাও তাদের চোখে পড়ছে না।
সম্প্রতি মার্কিন মুলুকে এক সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মনমােহন সিং সরকারের সমালােচনা করে বসেন। সেসময়ে ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের বিষয়ে উল্লেখ করেন। মনমােহন সিং এর জবাব দিতে গিয়ে বলেন, এটা হতাশা থেকে আসে। কারণ দেশের আর্থিক উন্নয়নের হার কেন এমন নিম্ন পর্যায়ে গেল তার পর্যালােচনার পরিবর্তে অন্যের করে যাওয়া কাজের ফিরিস্তি দিলে অবস্থা সামাল দেওয়া যায় না। দিশাহীনতায় ভুগছে সরকার।
বর্তমান সরকার জনমুখী নীতি গ্রহণে অনিচ্ছুক। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকেই তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, বিগত এক বছরের মধ্যেই মহারাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকারিং সেক্টর সুযােগের অভাবে চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। অন্যথায় মহারাষ্ট্র শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক উন্নত রাজ্য হিসেবে নিজেকে জাহির করতে পারত। এখানে প্রতি তিন জনের মধ্যে একজন বেকার। মহারাষ্ট্রে গ্রামাঞ্চলে বেকারি বাড়ছে, বাড়ছে ভিন রাজ্য থেকে কাজের খোঁজে আসা মানুষের সংখ্যা। এতে সমস্যা আরও জটিল হচ্ছে। মহারাষ্ট্র যেখানে বিনিয়ােগের শ্রেষ্ট রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হতে পারত সেখানে বর্তমানে মহারাষ্ট্র ‘আত্মহত্যা’য় প্রথম হিসেবে গণ্য।
তিনি বলেন, শিল্প কারখানা স্থাপনে উৎসাহ যােগাতে ব্যর্থ বর্তমান সরকার। কিন্তু শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমেই বেকারি সমস্যার সমাধান সম্ভব। আর্থিক মন্দার কারণে মহারাষ্ট্রে বহু শিল্প কারখানা বন্ধের মুখে। পাঞ্জাব ব্যাঙ্কের এক আমানতকারীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ও অন্যান্য আমানতকারীদের সমস্যার কথা জানাতে বেশকিছু আমানতকারী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন।
মনমােহন সিং তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, শীতকালীন অধিবেশনে সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এই সমস্যার সঠিক সমাধান বের করতে পারবে। তবে মহারাষ্ট্র সরকার ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এবিষয়ে নজর দেওয়াটা জরুরি।
তবে বর্তমান এনডিএ সরকার যে ৫ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির স্বপ্ন দেখাচ্ছে তা কখনই সম্ভব হবে না। কারণ উন্নয়নের হার প্রতিবছরই নিম্নমুখী। তাই ২০২৪ সালের মধ্যে সরকার যে ৫ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির স্বপ্ন দেখছে তা বাস্তবায়িত হতে পারে না। আর বর্তমান মন্দা কাটানাের বিষয়ে সরকার কোনও উপযুক্ত নীতি নির্ধারণেও অপরাগ। কোর সমস্যার সমাধানে দেশের আর্থিক উন্নয়নের হার ৮-১০ শতাংশ হওয়া জরুরি। তিনি আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা আইএমএফ’এর ভারতের অর্থনীতি নিয়ে মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন, দেশের আর্থিক উন্নয়নের হার চলতি আর্থিক বর্ষে মাত্র ৬.১ শতাংশ। কয়েক মাস আগেও এই উন্নয়নের হার ছিল ৭.৩ শতাংশ। প্রতি বছরই উন্নয়নের হার কমছে।
মহারাষ্ট্রে আগামী সােমবার নির্বাচনের প্রাক্কালে মনমােহন সিং বলেন, একদা মহারাষ্ট্র দেশের দক্ষ পেশাদারদের গন্তব্য ছিল। বর্তমানে সেই গৌরব হারিয়েছে। মহারাষ্ট্র থেকে শিল্প কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কেন্দ্রে ও রাজ্যের বিজেপি সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনমুখী নীতি প্রণয়নে ব্যর্থ। তিনি বলেন, কংগ্রেস-এনসিপি জোটকে ক্ষমতায় আনলে এই হতাশাজনক অবস্থার পরিবর্তন হবে। আর্থিক মন্দা মােকাবিলা এক দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবস্থা, কিন্তু আশু সমাধানের জন্য কংগ্রেস-এনসিপি জোটকে রাজ্যে ক্ষমতায় আনতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মনমােহন সিংয়ের বক্তব্য খণ্ডন করে নীতি আয়ােগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার বলেন, দেশ ৫ ট্রিলিয়ন অর্থিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারবে এবং এজন্য সরকার সবদিকে নজর রেখেই এগােচ্ছে। আর্থিক উন্নয়নের হার ২০২০-২০২১ আর্থিক বর্ষে ৮-৮.৫ শতাংশে পৌঁছবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।