চলুন যাই ঘুরে আসি চার কবি তীর্থ চুরুলিয়া, জয়দেব কেন্দুলি, শান্তিনিকেতন ও কোগ্রাম থেকে৷

রামগোপাল চ্যাটার্জ্জী
ভ্রমণ মানেই শুধুমাত্র ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়া নয়৷ আবার শুধুমাত্র ট্রাডিশন মেনেই যে ভ্রমণ করতে হবে এমন কথা অভিধানের কোথাও লেখা নেই৷ আর ভ্রমন কেবলমাত্র প্রাকৃতিক বা ঐতিহাসিক স্থানে ঘোরাঘুরি নাও হতে পারে সেটিও অন্যরকম, অথবা নানানরকম হতে পারে৷ ভ্রমণের শ্রেণীবিভাগ নিয়ে পরবর্তীতে আমরা আলোচনা করব৷ আজ আমরা কবিবর্গের তীর্থে ভ্রমণ করি চলুন৷

ভ্রমণের সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে পরিবহন ও খাবারের দোকান৷

আমরা আজ আমাদের যাত্রা শুরু করব কলকাতা থেকে৷ দ্বিতীয় হুগলী সেতু অথবা নিবেদিতা সেতু হয়ে দিল্লিমুখী ন্যাশানাল হাইওয়ে নেব৷ ডানকুনি টোলপ্লাজা পার হয়েই মুক্তবিহঙ্গ হয়ে নিয়ন্ত্রীত গতিতে মসৃণভাবে এগিয়ে চলা৷ স্বাভাবিক হাওয়ায় ও প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে দেখতে চলে আসবে পালসিট টোলপ্লাজা, সাথে নিয়ে আসবে লুচি কচুরী সিঙ্গারা ও ল্যাংচার সুবাস৷ কারন ল্যাংচা খ্যাত শক্তিগড় এসে গিয়েছে৷
ফ্রেশ হয়ে নিন, আর মন চাইলে নিজের পছন্দমত যেকোনো দোকান থেকে প্রাতরাশ সেরে নিন৷ এবারে আবার এগিয়ে চলা দুর্গাপুরের দিকে৷ গন্তব্য বিদ্রোহী কাজি নজরুল ইসলামের জন্মভিটে চুরুলিয়া গ্রাম৷


চুরুলিয়া:-
—————-
চুরুলিয়া অধুনা পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রামই নয় এটি রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন গ্রামও৷ গ্রামটির বয়স ৫০০ বছরের বেশি৷ চুরুলিয়া প্রাচীন কাল থেকেই গ্রমীন ও আঞ্চলিক সাংস্কৃতিক চর্চার অন্যতম কেন্দ্র৷ কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রীস্টাব্দের ২৪শে মের প্রখর গ্রীষ্মের দাবদাহে স্নিগ্ধ  মাটির বাসায় জন্মগ্রহণ করেন৷ কবির জন্মভিটের মাটির বাড়িটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই৷ মক্তবটিও কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে৷ কিন্ত্ত সেই জন্মভিটের উপরেই গড়ে উঠেছে নজরুল একাডেমি৷ সেখানে স্থান পেয়েছে নজরুলের হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, তাঁর ব্যবহৃত জামা-কাপড়, গ্রামোফোন, কবিকে যে তাকিয়ায় শুয়ে থাকা অবস্থায় প্রমীলাদেবী খাওয়াতেন সেই তাকিয়া, কবির পাওয়া পদক-সহ নানা সামগ্রীর সংগ্রহশালা৷ এর কাছেই রয়েছে, সেই প্রাচীন মসজিদ, যাতে তিনি ইমামগিরি করতেন৷ তবে সেই আদি মসজিদ আর নেই, সেখানে গড়ে উঠেছে কংক্রিটের বড় মসজিদ৷

জনশ্রুতি এই যে, রাজা নরোত্তম সিং-এর রাজপাট ছিল এই চুরুলিয়ায়৷ কাজী নজরুল ইসলাম যে মক্তবে পড়তেন ও পড়াতেন তার পাশেই ছিল নরোত্তম সিং-এর গড়৷ সেই গড় থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে ছিল রানির গড়৷ দুই গড়কে ঘিরে এই সেদিনও ছিল ঐতিহাসিক পরিখা৷ নিজের গড় থেকে রাজা পরিখায় নৌকা বেয়ে যেতেন রানির গড়ে৷ তবে দু গড়ের একটিও এখন নেই৷ একটি কেটে তৈরি হয়েছে নজরুল মেলার মাঠ৷ অন্যটিও প্রায় নিশ্চিহ্নের পথে৷

চুরুলিয়া নাম নিয়ে নানা মুনির নানা মত আছে৷ এই গ্রামের চার প্রান্তে রয়েছে চারটি প্রাচীন সৌধ৷ অর্থাৎ চার আওলিয়া৷ তাই থেকে নাম হয়েছে চুরুলিয়া৷ গ্রামের একদিকে রয়েছে প্রাচীন একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ৷ অন্যটি ছিল দিঘির পাড়ে৷ আর অন্যদিকে রয়েছে দুই পিরসাহেবের আস্তানা৷ এদের মধ্যে একজনের নাম জানা যায় না, অপরজন হলেন পীর হাজিপালোয়ান সাহেব৷ এই হাজিপালোয়ান সাহেবের আস্তানাতেই কবি শরীরচর্চা করতেন ছোট বয়েসে৷ এর পাশেই রয়েছে সেই প্রাচীন পীরপুকুর৷ তার পাড়ে ছিল দুটি প্রাচীন বট আছ৷ যে গাছের নামাল ধরে জোর দোল খেতেন কবি, এবং ঝাঁপ দিতেন পুকুরে৷

অপরদলের মতে এই অঞ্চলে অনেক চুড়িওয়ালারা বসবাস করতেন বলেই তার নাম হয়েছে চুরুলিয়া৷ যদিও এই কথার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিলের নজির পাওয়া যায়নি৷

চুরুলিয়ায় গেলে দেখে নিতে পারেন কয়লা খনি৷ এই গ্রামের বুকের নীচে রয়েছে খুব উচ্চমানের কয়লা৷ একই সঙ্গে এখানে গিয়ে দেখতে পাবেন গভীর ইনক্লাইন্ড কলিয়ারির মুখ৷ তার নাম তারা কলিয়ারি৷ এক সময়, প্রায় ৭০-৭৫ বছর আগে থেকে চলা এই কলিয়ারি গ্রামীন অর্থনীতকে অনেকটা বদলে দিয়েছিল৷ কয়েক দশক ধরে বন্ধ থাকা কলিয়ারির পাশে আবার বড়বড় ওপেনকাস্ট কোলিয়ারি যাকে বলা হয় খোলামুখ কোলিয়ারি হয়েছে এখন৷ সেখানে গেলে দেখতে পাবেন, মাটির নীচে নানা ধরণের প্রাকৃতিক সম্পদের বিন্যাস৷ বড় বড় আয়তনের গভীর খাদান৷ এমন কি দেখতে পাবেন, খনির কয়লায় আগুন৷ সন্ধ্যার মুখে কুণ্ডলি পাকিয়ে উঠছে বিশাল আকৃতি ধোঁয়া৷ আর দেখতে পাবেন সিঁডি ভাঙা মাঠের অপুর্ব সৌরভ৷ চুরুলিয়ার শেষ প্রান্তে কোনও রকমে প্রায় নির্জিব অবস্থায় বয়ে চলেছে “মরা অজয়”৷ আর এখনও পাবেন গ্রামীন সংস্কৃতির ছাপ৷

চুরুলিয়াকে কেন্দ্র করে ঘুরে আসতে পারেন, ঘাগরবুড়ি, কল্যাণেশ্বরী মন্দির, বার্ণপুরের নেহেরু পার্ক৷ তবে এবারে আমাদের গন্তব্য গীতগোবিন্দমের কেন্দুলি৷

তার আগে জেনে নিই চুরুলিয়া যাব কি ভাবে:
হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে আসানসোল৷ সেখান থেকে বাস বা মিনি বাসে৷ সময় লাগবে ৫০ মিনিট৷

বিমান যাচ্ছে অন্ডাল৷ সেখান থেকে প্রাইভেট ভাড়ার গাড়ি করে দেড় ঘন্টার পথ৷ আর কলকাতা থেকে গাড়ি করে সরাসরি দিল্লি রোড হয়ে চাঁদা মোড়৷ সেখান থেকে জামুড়িয়া হয়ে বা আসানসোল ঢোকার আগে বাইপাশ ধরে কাল্লা মোড় থেকে ডান দিকে ঘুরে ৩০ মিনিটের পথ৷ পৌঁছে গেলেন, এবারে থাকতে চাইলে, থাকার ব্যবস্থাপনায় রয়েছে রাজ্য সরকারের যুব আবাস রয়েছে৷ যেটি আপনি মৌলালি থেকে বুক করতে পারেন৷ তবে আমরা যেহেতু থাকব না তাই আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলবে জয়দেব কেন্দুলির দিকে৷ চুরুলিয়া যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় অক্টোবর থেকে মার্চ৷ কিন্ত্ত নজরুল মেলা দেখতে হলে যেতে হবে মে মাসে৷ তবে তখন প্রচণ্ড গরম, এটাও মাথায় রাখবেন৷

জয়দেব কেন্দুলি:-
—————————
চুরুলিয়া ছেড়ে দেখে নিন দুর্গাপুর ব্যারেজ, কুমারমঙ্গলম পার্ক৷
অনেকেই দুর্গাপুর হয়ে জয়দেব কেন্দুলিতে পৌঁছান৷ সেক্ষেত্রে জয়দেব থেকে ফেরার পথে দুর্গাপুরে দামোদর নদের ওপর তৈরি ডিভিসি ব্যারেজ এবং কুমার মঙ্গলম পার্কও ঘুরে দেখে নিতে পারেন৷ যদিও শীতকালে দামোদরের জল অনেকটা কম থাকে৷ তবুও লকগেট থেকে ছাড়া জলের স্রোত দেখতে মন্দ লাগবে না৷ তবে আমরা যাব দুর্গাপুর ব্যারেজ হয়ে, তাই সেখান থেকে গাড়ি ছোটান মুচিপাড়ার দিকে৷ মুচিপাড়া থেকে বাঁদিকের রাস্তা নিন৷ মলান দিঘী, মাজুরার পাশ দিয়ে এগিয়ে চলুন৷ রাস্তার মাঝে পড়বে শীর্নকায় অজয় নদ৷ না এখানে ব্রীজ নেই, নদীর বুকেই আছে গাড়ি চলার পথ৷ বর্ষাকাল ছাড়া, বছরের বাকী সময় চালু থাকে এই পথ৷ যদিও সবাই বলে মকরে জয়দেব যান৷ তাই যদি মকরে যান, তবে পুণ্যস্নান সেরে ঘুরে নিন এই জায়গাগুলিও

মকর সংক্রান্তি মানেই বীরভূমের অজয় নদের তীরে জয়দেব কেন্দুলি মেলা৷ মকর সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন অজয়ে চলে পুণ্যস্নান ও কবি জয়দেবের মন্দিরে পুজোপাঠ, অন্যদিকে তেমনই এই উপলক্ষে ভিড় জমান বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের বাউল, ফকির শিল্পীরা৷ দোতারা ও বাউলের সুরে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে অজয়ের তীর, যা শুনতে ভিড় জমান কাতারে কাতারে মানুষ৷
এই জয়দেব থেকেই রোজ কাটোয়াতে গঙ্গাস্নানে যেতেন কবি জয়দেব৷ কিন্ত্ত মকরের সময় তিনি যেতে পারতেন না৷ কথিত আছে, কবির স্নানে যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য গঙ্গা নিজে মকরের সময় উজানে বইত৷
আবার এটাও জনশ্রুতি যে দেহি তব পদপল্লবমুদারম শব্দটি স্বয়ং নারায়ণের হাতে লেখা৷

কবি জয়দেব স্নানে গেলেন কাটোয়ায়, ভারাক্রান্ত মনে, কিছুতেই তিনি গীতগোবিন্দের ছন্দটি মেলাতে পারছেন না৷ আর যে শব্দবন্ধ দিয়ে এটি মিলতে পারে সেটি লিখতে তার মন চাইছে না৷

পদ্মাবতী ভাত বেড়ে অপেক্ষায় থাকে রোজ, কখন তার স্বামী ফিরবে৷
সেদিন যেন একটু তাড়াতাড়িই ফিরলেন কবি৷ কি ব্যাপার এত তাড়াতাড়ি তুমি ফিরে এলে? বলে স্বামীর খাবারের বন্দোবস্ত করতে গেলেন পদ্মাবতী৷
এসে দেখেন জয়দেব নেই৷ কিছুক্ষন পরে আবার কবির ডাক শুনে বেরিয়ে এসে, জিজ্ঞেস করলেন গঙ্গা স্নান থেকে ফিরে আবার কোথায় গিয়েছিলেন?
জয়দেব উত্তর দেন, আমিতো এইমাত্র ফিরলাম৷
তাহলে সে কে? যিনি কিছুক্ষন আগে ফিরলেন৷

খোলা গীতগোবিন্দর কাছে ছুটে গিয়ে দেখেন, ভগবানের নিজের হাতে লেখা দেহি তব পদপল্লবমুদারম শব্দটি৷ ভক্তের সমস্যা ভগবান নিজে সমাধান করে দিয়েছেন৷
আবার, দূরদূরান্ত থেকে যাঁরা এই শীতের সময় জয়দেবের মেলা দেখতে যান, তাঁরা চাইলে আশেপাশের আরও কয়েকটি পর্যটনস্থলও ঘুরে দেখতে পারেন৷
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, জয়দেবে মেলা থেকে নিকটবর্তী আর কোন কোন জায়গা ঘুরে দেখা যায়৷

তবে আমাদের যাত্রাপথে পশ্চিম বর্ধমান জেলার এক প্রান্তে পড়বে গড় জঙ্গল৷ এই জঙ্গলেই রয়েছে মা শ্যামরূপার মন্দির৷ এছাড়াও রয়েছে একটি আশ্রম৷ শোনা যায় এই আশ্রমেই প্রথম দুর্গাপুজো করেছিলেন রাজা সুরথ৷ পাশাপাশি রয়েছে ইছাই ঘোষের মন্দির, রয়েছে একটি পার্ক৷ গড় জঙ্গল ঘুরে দেখতে বেশ ভালই লাগবে৷
আমাদের রাত্রিবাস ইলামবাজারে অথবা শান্তিনিকেতনের পথে কামারপাড়ায় মাটির বাড়ীতে৷ সেখান থেকে পরের দিন ভোরে চলুন আধুনিক ভারতের শ্রেষ্ঠ ঋষির আশ্রম শান্তিনিকেতনে৷

বোলপুর-শান্তিনিকেতন
———————————-
এখান থেকে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের দূরত্ব মাত্র ৩০ কিলোমিটার৷ তাই সকালবেলা বেড়িয়ে পড়ব কবিগুরুর স্মৃতিবিজডি়ত এই জায়গাটির উদ্দ্যেশ্যে৷
যদিও বোলপুর-শান্তিনিকেতনে সারা বছরই পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে৷ তবুও এখানে এলে এক অনাবিল শান্তির খোঁজ পাওয়া যায়৷ ইলামবাজার বা কামারপাড়া থেকে  প্রথমেই প্রাতরাশ সেরে নিন৷ সকালবেলায় দেখে নিন আশ্রমের পঠনপাঠন, গাছের তলায় খোলা আকাশের নীচে৷ এরপর একে একে ছাতিমতলা, গৌর প্রাঙ্গন, মিউজিয়াম, বটতলা, উপাসনালয়৷ রামকিঙ্কর বেইজ ও নন্দলাল বসুর শিল্পকলা আপনাকে আকর্ষণ করবেই৷ বিকালে চলুন কোপাই, খোয়াই, সোনাঝুরি, আমার কুটির সঙ্গে বল্লভপুর দেখবেন নিশ্চয়ই, তার সাথে দেখে নিন কমলাকান্তপুরের এগ্রো ফার্ম, পুর্বিতার কার্যকলাপ৷ বোলপুরে থাকার হোটেল ও খাবারের দোকান প্রচুর৷ কাজেই ভোজন ও শয়ন যত্রতত্র৷

তিন কবিকে ছুঁয়ে এবারে আমরা যাব কবিকোঙ্কন কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের কাছে কোগ্রাম:-
————————————————————,
বোলপুর-নতুনহাট রাজ্যসড়ক ধরে এগিয়ে চলুন৷ অজয় ব্রীজ পার হলেই পৌঁছে যাবেন নতুনহাট৷ সেখান থেকে অল্প গেলেই কোগ্রাম৷ যদিও এখন তার পরিচিতি কুমুদ গ্রাম নামে৷ এখানেই কবি লিখলেন ‘বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদের বাঁকে৷ জল সেখানে সোহাগ ভরে স্থলকে ঘিরে রাখে’৷

কবি তার নিজের গ্রাম নিয়ে খুব গর্বিত ছিলেন৷ তিনি বলতেন আমার গ্রামটি ছোটো হলেও নগন্য নয়৷ আমার গ্রাম মঙ্গলকাব্য খ্যাত গ্রাম৷ আসুন চট করে মানস ভ্রমণ সেরে ফেলি, তারপর সময় করে টুক করে চলে যাওয়া যাবে৷
পূর্ব বর্ধমানের এই জায়গাটি একেবারে গ্রামাঞ্চল৷ অজয় নদের ধারে চতুর্দিকে সবুজ গালিচা বিছানো ধান জমির মাঝে ছোট্ট একটি গ্রাম উজ্জানির এই কোগ্রাম৷ গোটা এলাকা অদ্ভুতরকম নিরিবিলি এবং নিস্তব্ধ, তার মাঝেই শুধু পাখীদের ক্ষণেক কলকাকলি ছাড়া আর কোনো শব্দ শোনা যায়না৷

গ্রামের পাশ দিয়ে নীরবে বয়ে চলেছে অজয় নদ. এখন  জল অনেক কম, তবে বর্ষাকালে এই নদের রূপ অনন্য, রীতিমত সম্ভ্রম আদায় করে নেয়৷ এই কোগ্রামেই আছে একটি সতীপীঠ৷ বলা হয় এখানেই অজয় নদের ধারে সতীমাতার হাতের কনুই পড়েছিল৷ তাই এই কোগ্রাম  জায়গাটি একটি মহাতীর্থস্থানও বটে৷ কথিত আছে মা মঙ্গলচন্ডীর কৃপায় ধনপতি সওদাগর তাঁর ডুবে যাওয়া সপ্তডিঙ্গা ফিরে পেয়েছিলেন৷ সেই মা মঙ্গলচন্ডীর স্বপ্নাদেশ পেয়েই এই কোগ্রামে মন্দির স্থাপিত হয়েছিল এবং মায়ের নিত্যপূজা শুরু হয়েছিল৷ এখানেই পূজিতা হন মা মঙ্গলচন্ডি এবং ভৈরব সর্ব সিদ্ধিদাতা বাবা কপিলেশ্বর৷ জনশ্রুতি, ‘মা অভীষ্ট ফল প্রদায়িনী৷ এখানে এসে একাগ্র মনে কেউ কোনো কিছু কামনা করলে তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়৷ প্রতি বছর এখানে দুর্গাপূজায় মা মঙ্গলচন্ডিকাই দুর্গারূপে পূজিতা হন৷ কোগ্রামে  অলস দুপুর স্মৃতি উজ্বল হয়ে থাকুক৷ এই মন্দিরের পাশেই অজয় নদের গা ঘেঁষে রয়েছে কবিকোঙ্কণ কুমুদ রঞ্জন মল্লিকের বসতবাড়ি৷ পায়ে পায়ে দেখে নেওয়া যাবে সেই বাড়িটিকেও৷ সাধারণভাবে কোগ্রামে যেতে হলে গুসকরা স্টেশনে নেমে বাসে নতুনহাট যেতে হবে, সেখান থেকে কিছুটা দূরেই এই কোগ্রাম জায়গাটি রয়েছে৷ পিচ রাস্তা থেকে গ্রামের ভিতরে যাওয়ার জন্যে টোটোভ্যান পাওয়া যায়৷ বর্ধমান স্টেশনে এসেও  সেখান থেকে নতুনহাট যাওয়ার বাস পাওয়া যায়, নতুনহাট থেকে রিক্সা নিয়েও চলে আসা যাবে এই কোগ্রামে৷ এখানে রাত্রিবাসের জন্যে একটি ছোট অতিথিশালার ব্যবস্থা হয়েছে৷ সেখানে থাকা অথবা মায়ের অন্নভোগের জন্যে যোগাযোগ করতে পারেন৷ আর যদি মন চায়, তখন নতুনহাটে রাত্রিবাসের জন্যে হোটেল খোঁজা যেতে পারে৷

আর পরদিন দেবী যোগাধ্যা, দেবী ঝাঁকলাই দেখা যেতেই পারে৷
হাতে সময় না থাকলে এবারে ফেরার পালা৷ গুসকরা হয়েই ফিরুন, পথের মাঝে ডোকরা গ্রাম দ্বারিয়াপুর দেখে কলকাতা৷