ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত সংঘাত বিএসএফ ও বিজিবি-র মধ্যে। দেখে মনে হয় যেন ভারত-পাকিস্তানের মতো দুই দেশের সম্পর্ক চরম শত্রুতায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু ভিন্ন চিত্র ধরা পড়ল ঢাকার বাণিজ্য মেলায়। সেখানে ভারতীয় স্টেলগুলিতে বাংলাদেশের ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ছে। সম্প্রতি ঢাকায় শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ার। মেলার আয়োজক এক্সপোর্ট প্রমোশন বোর্ড। ভারত, পাকিস্তান, তুর্কি, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং এবং মালয়েশিয়া মিলিয়ে মোট সাতটি দেশ এই বাণিজ্য মেলায় যোগ দিয়েছে। অন্যান্য দেশের স্টলের মতো সেখানে প্রায় ৫০টির মতো দোকানে ভারতীয় পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেই পণ্য কিনতে ব্যাপক ভিড় করেছেন বাংলাদেশের ক্রেতারা।
হবিবুর রহমান নামে এক ক্রেতা মেলায় এসে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তাঁর প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য মেলায় আমি আগে কখনও এত ভারতীয় পণ্য দেখিনি। মেলার একটা প্রান্তে শুধুই ভারতীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, ভারতের সব ধরনের জিনিসই মেলায় পাওয়া যাচ্ছে। সেই পণ্যগুলির চাহিদার তালিকায় সবার আগে রয়েছে ভারতের চামড়ার ব্যাগ, কাশ্মীরের শাল, জুতো ও চটি।
প্রসঙ্গত গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর জামাত ও বিএনপির বিভিন্ন নেতারা ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে বারবার। মূলত ভারত বিরোধিতা করাই এইসব নেতাদের অন্যতম উদ্দেশ্য। তবে এই ঘটনা নতুন নয়। হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীনও বিএনপি নেতারা ভারতের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেছেন। এমনকি অতীতে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে নিজের কাশ্মীরি শাল, স্ত্রীর শাড়ি ও বেড শিট পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এর আগেও এবিষয়ে মিটিং মিছিল করেছিলেন। তবে বিএনপি দলগতভাবে এই এই ঘটনায় লিপ্ত হয়নি।
কিন্তু বাংলাদেশ ট্রেড ফেয়ার দেখে সেই ঘটনার কোনও প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। রাজধানী ঢাকায় আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক ট্রেড ফেয়ারে বোঝার উপায় নেই ৫ আগস্টের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের এতটা অবনতি হয়েছে। এব্যাপারে এক্সপোর্ট প্রমোশন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মহম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, সম্ভবত বিভিন্ন দেশের স্টল ছাড়াও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাঁদের বিপণীতে ভারতীয় পণ্য বিক্রি করছেন।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে মালদহের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এই সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাগঞ্জ। যেটি রাজশাহী ডিভিশনের অন্তর্গত। সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ বর্ডার ফোর্স দাবি করে, এটি বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে পড়ে। কিন্তু ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বাংলাদেশের সেই দাবি অস্বীকার করে। এরপর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়তে শুরু করে। দুই দেশের নাগরিকরা পরস্পরের দিকে ইট-পাথর ছুঁড়তে শুরু করে। অবশেষে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষীরা ফ্ল্যাগ মিটিং করার পর বিষয়টি মিটমাট হয়। জানা গিয়েছে, বিএসএফ-এর উচ্চ পদস্থ কর্তারা বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের পদস্থ আধিকারিকদের বোঝানোর পর বিষয়টি মিটে যায় এবং পুনরায় কাঁটাতারের বেড়ার কাজ শুরু হয়। এভাবে আরও কিছু জায়গায় দুই দেশের সীমান্তে উত্তেজনা রয়েছে।