দ্বিতীয়বার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন যোগী আদিত্যনাথ। শুক্রবার লখনউয়ে অটল বিহারি বাজপেয়ী স্টেডিয়ামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সহ একঝাঁক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির তারকা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে শপথবাক্য পাঠ করেন তিনি।
যোগীকে শপথবাক্য পাঠ করান উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দিনে পটেল। প্রায় ৮৫ হাজার মনুষের উপস্থিতিতে এই সভায় বলিউডের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
স্টেডিয়াম জুড়ে ‘নতুন ভারতের নতুন উত্তরপ্রদেশ লেখা পোস্টারে ছয়লাপ। অক্ষয় কুমার থেকে কঙ্গনা রানাউত, ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস্’ – এর পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী থেকে অনুপম খের, এঁদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয়বার উত্তরপ্রদেশের তখতে বসার শপথ নিলেন যোগী।
এবারও যোগীর ক্যাবিনেটে থাকছেন দু’জন উপমুখ্যমন্ত্রী। ভোটে হারলেও কেশবপ্রসাদ মৌর্য হলেন উপমুখ্যমন্ত্রী।
আবার বিধানসভা ভোটে না লড়েও বিধান পরিষদের দৌলতে উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন ব্রজেশ পাঠক। গতবার ওই পদে থাকা দীনেশ শর্মাকে এবার উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি।
উল্লেখ্য উত্তরপ্রদেশের ৪০৩ বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৫৫ টি আসন নিয়ে দ্বিতীয়বার শুরু হল ‘যোগী রাজ’। এবার উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় বিজেপি ৪১.২৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে।
কে পি মৌর্য নামে বেশি পরিচিত এই বিজেপি নেতা আগের বারের মতোই উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। দ্বিতীয় উপমুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন ব্রাহ্মণ নেতা ব্রজেশ পাঠক।
তবে মৌর্যকে মন্ত্রিসভায় রাখার সিদ্ধান্ত খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি এবার বিধানসভা ভোট জিততে পারেননি।
বলতে গেলে বিজেপি যখন স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করে উত্তরপ্রদেশে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করেছে, তখন মৌর্যর পরাজয়ে শুধু গেরুয়া শিবির নয়, গোটা রাজনৈতিক মহলই বিস্মিত।
নিজের দীর্ঘদিনের বিধানসভাতেই হেরেছেন তিনি। তবে নিজে হারলেও দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে মৌর্যর ভূমিকা এক বাক্যে স্বীকার করে বিজেপি।
ভোটের আগে বেশ কয়েকজন দলিত নেতা মন্ত্রী দল ছাড়লে নিম্নবর্গের ভোট নিয়ে চিন্তায় ছিল বিজেপি। অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণি বা ওবিসি সম্প্রদায়ের নেতা মৌর্য পিছড়ে বর্গের ভোট ধরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নেন।
তবে মৌর্যকে মন্ত্রিসভায় রাখার সেটাই প্রধান কারণ নয়। আসলে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে চাপে রাখতেই নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা এই ওবিসি নেতাকে মন্ত্রিসভায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আশঙ্কা দলকে ক্ষমতায় রেখে দেওয়ার সাফল্যকে হাতিয়ার করে যোগী পার্টি ও সরকারে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করার চেষ্টা করতে পারেন।
সেই সম্ভাবনা নির্মূল করতেই ভোটে পরাজিত মৌর্যকে ফের উপমুখ্যমন্ত্রী করা হল।
আগের মন্ত্রিসভায় যোগীর সঙ্গে নানা প্রশ্নে এই ওবিসি নেতার বিরোধ বাঁধে বিরোধ মেটাতে বারে বারে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপ করতে হয়।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে মোদি শাহ জুটি সব জেনেও কেন মৌর্যকে উপমুখ্যমন্ত্রী করলেন। যোগীর আগের মন্ত্রিসভার বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণ সমাজ বেজায় ক্ষিপ্ত ছিল।
যোগী নিজে ঠাকুর সম্প্রদায়ের মানুষ। ব্রাহ্মণদের অভিযোগ ছিল, যোগী সরকার তাদের স্বার্থ দেখছে না।
যদিও ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট, ব্রাহ্মণরা শেষ পর্যন্ত পদ্মফুলেই আস্থা ব্যক্ত করেছে। সেই কারণেই প্রভাবশালী ব্রাহ্মণ নেতা ব্রজেশ পাঠককে উপমুখ্যমন্ত্রী করা হল।