সর্বদলীয় বৈঠকে বিহার ও অন্ধ্রকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার দাবি 

সোমবার, ২২ জুলাই – সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। তার আগে রীতি মেনে বাজেট অধিবেশন পরিচালনা নিয়ে রবিবার দুপুরে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় দিল্লিতে।এদিকে আগেই বিরোধীরা জানিয়েছিল, বাজেট পেশ ও তা নিয়ে আলোচনার পর সংসদে সরকার শুধুমাত্র বিল পেশ করবে, তা হবে না। আরও বেশ কিছু বিষয় তারা সংসদে তুলবে। কী কী বিষয় সেদিন অধিবেশনে উঠতে পারে তা এদিনের বৈঠকে  বুঝিয়ে দিল বিরোধীরা। এদিনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু, বিজেপি সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা। অন্যদিকে, কংগ্রেসের পক্ষে ছিলেন গৌরব গগৈ, জয়রাম রমেশ ও কে সুরেশ। এছাড়া চিরাগ পাসওয়ান, সমাজবাদী পার্টির রাম গোপাল যাদব, আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং, এআইমিমের আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং এনসিপি-র প্রফুল্ল প্যাটেল প্রমুখ। বৈঠকে বিরোধীরা নিট কেলেঙ্কারি নিয়ে আলোচনার দাবি জানায়। 

রবিরার কংগ্রেস-সহ বিরোধী শিবির একাধিক বিষয় উত্থাপন করে অধিবেশনে আলোচনার দাবি জানান। কংগ্রেসের পক্ষে জয়রাম রমেশ ফের দাবি জানান, লোকসভায় ডেপুটি স্পিকারের পদটি বিরোধীদের দিতে হবে। লোকসভায় কংগ্রেসের উপনেতা গৌরব গগৈ দাবি করেন, বিরোধীদের বলার সুযোগ দিতে হবে। এই ব্যাপারে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে যাতে স্পিকার সময় বরাদ্দ করেন।

এদিনের বৈঠকে ওঠে কানওয়ার যাত্রা, নিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদ, রেলের নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলি। সম্প্রতি, কানওয়ার যাত্রার পথে খাবারের দোকানের মালিকদের তাদের নাম বড় বড় করে দোকানের গায়ে লিখতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে উত্তর প্রদেশ সরকার। এই বিতর্কিত নির্দেশ নিয়ে সংসদে আলোচনা চেয়েছে সমাজবাদী পার্টি এবং আম আদমি পার্টি। ২১ জুলাই শহিদ দিবসের কর্মসূচি থাকায় এই বৈঠকে যোগ দিতে পারবে না বলে আগেই জানিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস।


তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নীতীশ কুমারের পার্টি জনতা দল ইউনাইটেডের সাংসদ সংঞ্জয় ঝাঁর বক্তব্য। তাঁর দাবি, বাজেটে বিহারে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দিয়ে আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। নীতীশের দলের দাবিদাওয়ার মধ্যে বিহারকে বিশেষ রাজ্য ঘোষণা করে আর্থিক প্যাকেজ দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের কিছু প্রকল্পের ভার কেন্দ্রেকে নেওয়ার দাবি আছে। এখন দেখার নির্মলার বাজেটে বিহারের দাবি পূরণ না হলে নীতীশ কুমার কী পদক্ষেপ করেন। তবে এই ব্যাপারে সরকার পক্ষ ছিল নিশ্চুপ। তবে নীতীশের দলের সাংসদের কথায় স্পষ্ট বিহারের মুখ্যমন্ত্রী মোদি সরকারকে সমর্থনের বিনিময়ে রাজ্যের দাবি আদায়ে কেন্দ্রের উপর এখন থেকেই চাপ তৈরি করতে চাইছেন। স্বভাবতই প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং বিজেপির চিন্তা ও অস্বস্তি দুই-ই বাড়ল। 

একাধিক রাজ্যের জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদার দাবিও উঠতে চলেছে সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশনে। এই দাবি যেমন তুলবে লালুপ্রসাদ যাদবের রাষ্ট্রীয় জনতা দল। একইভাবে, অন্ধ্র প্রদেশের জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদা দাবি করেছে জগনমোহন রেড্ডির নেতৃত্বাধীন ওয়াইএসআরসিপি। বিজেডি নেতা সস্মিত পাত্র জানিয়েছেন, তাঁরাও ওড়িশার জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদা দাবি করেছেন।

তবে, জল্পনা থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের কোনও দাবি জানায়নি আরেক এনডিএ শরিক, তেলেগু দেশম পার্টি। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় টিডিপি-কে কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস জয়রাম রমেশ। তিনি লিখেছেন, “আজকের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে সংসদীয় দলের নেতাদের সর্বদল বৈঠকে, জেডি ইউ নেতা বিহারের জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদা দাবি করেছেন। ওয়াইএসআরসিপি নেতা অন্ধ্র প্রদেশের জন্য বিশেষ বিভাগের মর্যাদা দাবি করেছেন। আশ্চর্যের বিষয়, টিডিপি নেতা এই ব্যাপারে নীরব ছিলেন।”

অন্যদিকে, সংসদে কোনও একজন সদস্য কথা বলার সময়, অন্য সদস্যদের হস্তক্ষেপ না করতে বা বাধা না দিতে অনুরোধ করেছেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং।  এর আগে ১৮তম লোকসভার প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের বিষয়ে যখন আলোচনা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদি , সেই সময় বিরোধীরা একটানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। এটা সংসদীয় রীতি বিরুদ্ধ বলে  জানান  রাজনাথ সিং।

সর্বদল বৈঠকের পরে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু বিরোধীদের কাছে আর্জি জানান, সংসদের দুই কক্ষে যেন সুষ্ঠুভাবে সমস্ত কাজকর্ম চলতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস সাংসদ গগৈ সাফ জানিয়ে দেন, এই বিষয়গুলো নিয়ে সংসদে বিরোধীদের বলতে দিতে হবে। বিশ্লেষকদের অনুমান, সর্বদল বৈঠকের পরে  বাজেট অধিবেশনেও কেন্দ্রকে জোরদার আক্রমণ করবে বিরোধীরা, ফের  উত্তপ্ত হতে পারে সংসদ।