দিল্লি, ১২ জুলাই– দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে মনুস্মৃতি পড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা নাকোচ করে দিয়েছেন উপাচার্য যোগেশ সিংহ৷ দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের কোর্সে মনুসংহিতা বা মনুস্মৃতি পড়ানোর সুপারিশ করেছিল সংশ্লিষ্ট বিভাগ৷ তা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম শিক্ষকদের সংগঠন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক টিচার্স ফ্রন্ট৷ উপাচার্যকে চিঠিও দিয়েছিল তারা৷ উপাচার্য যোগেশ সিংহ বিভাগীয় সুপারিশ খারিজ করে জানিয়েছেন, আইনে কোর্সে মনুস্মৃতি পড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই৷
উপাচার্যের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আইন বিভাগের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি৷ তবে বিভাগের তরফে আগে দাবি করা হয়েছিল সর্বসম্মতভাবে এই প্রস্তাব বিভাগীয় ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল গ্রহণ করেছিল৷
মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক নতুন নয়৷ এটি হল, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহারিক অনুশাসন সম্বন্ধিত স্মৃতিগ্রন্থ৷ যা ১২টি প্রকরণে বিভক্ত৷ মনু ঋষি তাঁর স্মৃতি বা সংহিতায় এই আচরণ বিধি উল্লেখ করেছেন৷ তা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন অংশের আপত্তির কারণ, মনুস্মৃতিতে নারীর প্রতি অসম্মান, অবমাননাকর বেশ কিছু পঙতি আছে৷ তাছাড়া জাতপাতের বিভাজনের স্বীকৃতি রয়েছে তাতে৷
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে মনুস্মৃতি পড়ানোর যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে এলএলবি কোর্সের প্রথম এবং ষষ্ঠ সেমিস্টারে মনুস্মৃতির কিছু অংশ যুক্ত করা হবে৷ অর্থাৎ, প্রথম বর্ষ এবং তৃতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরা তা পড়বেন৷ জিএন ঝা-এর ‘মনুস্মৃতি উইথ দ্য মনুভাষ্য অফ মেধাতিথি’ এবং টি কৃষ্ণস্বামী আইয়ারের ‘কমেন্টারি অফ মনুস্মৃতি— স্মৃতিচন্দ্রিকা’ পাঠ্যক্রমে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে৷ এই প্রস্তাবের বিষয়ে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল আলোচনা করবে৷
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম শিক্ষকদের বক্তব্য, মনুসংহিতা পড়ানো দেশের প্রগতিশীলতার সংস্কৃতি এবং সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ হবে৷ অন্যদিকে, হিন্দুত্ববাদীরা মনে করে, মনুসংহিতায় সনাতন ধর্মের ব্যবহারিত আচার বিচারের উল্লেখ রয়েছে৷ বিচার প্রক্রিয়ায় যেগুলির গুরুত্ব পেয়ে থাকে৷ তাই আইনের কোর্সে তৃতীয় বর্ষে এই বিষয়ে পড়ানোর সুপারিশ করেছিল ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল৷ সেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে কী হবে না সে ব্যাপারে উপাচার্য এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না সে প্রশ্নও উঠেছে৷