দিল্লি, ২৮ জুন – ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত রাজধানী দিল্লি। টানা বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন বিভিন্ন এলাকা। আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত দিল্লিতে বৃষ্টির জন্য সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। এমিনকী পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, দিল্লির জলমন্ত্রী অতিশী মারলেনার বাড়িতেও জল ঢুকে যায়। এদিকে বৃষ্টির প্রাবল্যে দিল্লি বিমানবন্দরের ছাদ ভেঙে পড়ে ১ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, আহত হন ৬ জন। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কিছু গাড়ি। অন্যদিকে জলমগ্ন দিল্লিতে বিভিন্ন রাস্তাঘটে আটকে পড়ে বহু গাড়ি। পুলিশ সূত্রে খবর, প্রায় ৮ ফুট গভীর জলে একটি বাস যাত্রীদের নিয়ে প্রায় দু’ঘণ্টা আটকে থাকে । দড়ি এবং লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করে ওই বাসের যাত্রীদের একে একে বের করে আনা হয়।
বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দিল্লির কয়েকটি এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। শুক্রবার ভোর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। টানা প্রচন্ড গরমের শেষে বৃষ্টি নামে স্বস্তি মেলে। কিন্তু ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রাজধানী জলমগ্ন হয়ে পড়ে। একাধিক জায়গায় গাড়ির ছাদ পর্যন্ত জল ছুঁয়ে যায়। জলের মধ্যে বাইক, অটো ভেসে বেড়াতে দেখা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অ্যাম্বুলেন্সকেও । এরই মধ্যে এদিন আজাদ মার্কেট অঞ্চলের আন্ডারপাসে আটকে যায় একটি যাত্রীবোঝাই বাস। খবর পেয়ে বাসের যাত্রীদের উদ্ধারের জন্য আসে পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দল। ভিডিওতে দেখা যায় উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা যাত্রীদের দড়ির সাহায্যে বাস থেকে নামিয়ে আনেন। যাত্রীদের কোলে তুলে, আবার কাউকে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন বাসের মধ্যে জলের স্তর বাড়তে থাকলে যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। যদিও শেষ পর্যন্ত সকলকেই নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অন্যদিকে টানা বৃষ্টির কারণে ভেঙে পড়েছে দিল্লি বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১-এর ছাদ। ব্যাহত রাজধানীর মেট্রো চলাচল। সবমিলিয়ে মরসুমের প্রথম বৃষ্টিতেই জলের তলায় দিল্লিবাসী। এই নিয়ে ইতিমধ্যে বিরোধীরা নিশানা করেছে আপ সরকারকে । বিজেপির অভিযোগ, তাঁরা বারংবার রাজ্য সরকারকে পিডব্লুউডি-র পাইপলাইনগুলি পরিষ্কার রাখতে বলেছিল। কিন্তু প্রশাসন সেদিকে নজর দেয়নি। যদিও প্রশাসনের দাবি, এদিন বেলা গড়াতেই জল নামানোর বিষয়ে দিল্লি সরকার যুদ্ধকালীন তৎপরতা নেয়। মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসে দিল্লি সরকার। বৈঠকে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় আধিকারিকরাও।
তীব্র গরম ও জলকষ্টে ভোগা দিল্লিতে অতিবৃষ্টির জেরে জলমগ্ন শহরের বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে রাজধানী শহরের অভিজাত লুটিয়েন-ও রয়েছে। শুক্রবার জল থইথই শহরে নেতা-মন্ত্রীদের বাড়িও জলে ভাসছে। একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে সমাজবাদী পার্টির এমপি রামগোপাল যাদব তথা অখিলেশের কাকাকে বাড়ির কাজের লোকেরা চ্যাংদোলা করে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন।বৃষ্টিতে দিল্লির অধিকাংশ এলাকায় কোথাও হাঁটুজল, কোথাও বুকজল দাঁড়িয়ে যায়। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কংগ্রেস এমপি শশী থারুরের বাড়ির সামনে জলের স্রোত দেখা যায়। তিনি লিখেছেন, তাঁর গোটা বাড়ি জলের তলায় পা ডোবা জলে ভাসছে সবকিছু। কার্পেট থেকে আসবাব, সব জলে নষ্ট। তিনি আরও লিখেছেন, ঘুম থেকে উঠে দেখি পা ডোবা জলে ভাসছে গোটা বাড়ি। শুধু আমার বাড়িই নয়, জল সরার কোনও জায়গা না থাকায় তা দাঁড়িয়ে আছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ভয়ে সকাল ৬টা থেকে বাড়ির মেন সুইচ বন্ধ করে রাখতে হয়েছে।’ পাম্প করে জল রাস্তায় ফেলার পর তিনি সংসদে যেতে পেরেছেন।
দিল্লির আপ মন্ত্রী অতিশীর বাড়িও জলের তলায়। জমা জলের কারণে এদিন মেট্রো চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। দক্ষিণ-দিল্লির বসন্তবিহারে নির্মীয়মাণ বাড়ির দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। সেখানে কয়েকজন নির্মাণকর্মীর আটকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মৌসম ভবন জানাচ্ছে, দিল্লিতে ২২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। ১৯৩৬ সালের পর এই প্রথম দিল্লিতে টানা ২৪ ঘণ্টায় এত বিপুল পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে। ১৯৩৬ সালে পরিমাণ ছিল ২৩৫.৫ মিলিমিটার। সাধারণত জুন মাসে দিল্লিতে গড়ে ৮০.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়।
জানা গিয়েছে, দিল্লি-মেরাঠ হাইওয়ে, নারাইনা-মোতি বাগ রোড, ধৌলা কুঁয়া উড়ালপুল, বীর বান্দা বৈরাগী মার্গ, আজাদ মার্কেট আন্ডারপাস, তিলক সেতু, অরবিন্দ মার্গ, অনুব্রত মার্গ, আইটিও এবং এমস যাওয়ার বহু রাস্তা মথুরা রোড, মুলচাঁদ, মিন্টো রোড, মেহরৌলি, বদরপুর রোড, মান্ডাওয়ালি, ভিখাজি কামা প্লেস, মধু বিহার, তিন মূর্তি মার্গ, প্রগতি ময়দান, মুনিরকা, ধৌলা কুঁয়া, মোতি বাগ, আইটিও এবং নয়ডার বহু রাস্তা প্লাবিত।