দিল্লি, ৩১ জুলাই –কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে তিন আইএএস পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় দিল্লি পুরনিগমকে তিরস্কার করল দিল্লি হাই কোর্ট। শহরের নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে উচ্চ আদালত বলে, পুরনিগম তামাশায় পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি রাজেন্দ্রনগরের দুর্ঘটনার জবাবদিহি করতে বৃহস্পতিবার পুরনিগমের কমিশনারকে সমন পাঠিয়েছে আদালত।
দিল্লি হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি মনমোহন বুধবার নির্দেশ দেন, আগামী শুক্রবারের মধ্যে রাজেন্দ্রনগরের সমস্তরকম জবরদখল এলাকা মুক্ত করতে হবে।প্রধান বিচারপতি জানান, বর্তমান মামলার তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকেও দেওয়া হতে পারে। বিচারপতি বলেন, “এটা কি ধরনের পরিকল্পনা? একদিন খরার অভিযোগ করা হচ্ছে, পরের দিন বন্যা হচ্ছে ? বাড়ি তৈরির পরিকল্পনার অনুমোদন কে দেয় ? তাকে কি ছাঁটাই করা হয়েছে? তাঁকে নিশ্চয়ই ডাবল প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। দিল্লি পুরনিগম একটা তামাশায় পরিণত হয়েছে।”
দিল্লির কোচিং সেন্টারে পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি দাবি করে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুনানিতে দিল্লির আপ সরকারকেও একহাত নিয়েছে আদালত। বিচারপতির মন্তব্য, যেখানে ‘খয়রাতি সংস্কৃতি’ থাকবে, সেখানে এমন দুর্ঘটনা ঘটবেই। দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলে, আপনারা খয়রতি সংস্কৃতি চান, নাগরিকদের থেকে কর আদায় করতে রাজি নন। হরের মধ্যে একটি ইউপিএসসি কোচিং সেন্টার রমরম করে চলছে, অথচ নিকাশি ব্যবস্থাই নেই, এমন কাণ্ডে হতবাক আদালত। এই মামলার পরবর্তী শুনানি শুক্রবার।
দিল্লির ওল্ড রাজেন্দ্র নগরের কোচিং সেন্টারে তিন পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে রাজধানীর নিকাশি ব্যবস্থা নিয়ে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর নড়েচড়ে বসেছে দিল্লি পুরনিগম। কোচিং সেন্টার নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন আনতে চলেছে দিল্লি সরকার। বুধবার সংবাদ সংস্থাকে একথা জানিয়েছেন আপ মন্ত্রী অতীশি। তিনি বলেন, “কোচিং সেন্টারগুলির সুরক্ষার জন্য এবার কর্মকর্তা, ছাত্রদের নিয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে।”
দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার ১৮টি নিকাশি খাল পলি জমে পুরোপুরি অকেজো হয়ে আছে বলে অভিযোগ করেছেন উপ–রাজ্যপাল বিকে সাক্সেনা। ঘটনায় ৩ সদস্যের কমিটি গড়েছে অমিত শাহের মন্ত্রক। গত শনিবার ওল্ড রাজেন্দ্র নগরের কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টে জল ঢুকে তিন জন পড়ুয়া প্রাণ হারান। তাঁরা ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য ওই সেন্টারে ভর্তি হয়েছিলেন। কোচিং সেন্টারের বেসমেন্টটি রাস্তার থেকে আট ফুট নীচে অবস্থিত। ঘটনার সময় প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান জল জমে গিয়েছিল। ওই ঘটনায় দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন আইন লঙ্ঘন করে বেসমেন্ট ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল সংশ্লিষ্ট কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে। তদন্তে নেমে দিল্লি সরকার মুখার্জি নগর, লক্ষ্মী নগর এবং প্রীত বিহারেও একইরকম ৩০টি কোচিং সেন্টার চিহ্নিত করে যেগুলির বেসমেন্ট রয়েছে। সেগুলি তৎক্ষণাৎ সিল করার পাশাপাশি আরও ২০০টি কোচিং সেন্টারকে নোটিস জারি করেছে সরকার। অতীশি বলেন, “প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে বেসমেন্ট তৈরির অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”