৮ ফেব্রুয়ারি এক দফায় দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ফল ঘােষণা ১১ ফেব্রুয়ারি। ৭০ সদস্যের দিল্লি বিধানসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২২ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনের দিন ঘােষণার সঙ্গে সঙ্গেই আদর্শ আচরণবিধি কার্যকর হয়েছে। আজ এখানে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরােরা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘােষণা করেন। দিল্লিতে ভােটদাতার সংখ্যা ১,৪৬,৯২,১৩৬ আর বুথের সংখ্যা ১৩,৭৫০।
এই নির্বাচন কার্যত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির মধ্যে সম্মুখ সমর। বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরতে না পারায় প্রধানমন্ত্রী মােদিকে সামনে রেখেই তাদের লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। নির্বাচন ঘােষণার পর কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘আমার দল আম আদমি পার্টি (আপ) নিজের কাজের ভিত্তিতেই দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে লড়বে’।
২০১৫ সালে সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে আপ ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল। ৭০টি আসনের মধ্যে আপ একাই ৬৭টি পেয়েছিল, বিজেপি পেয়েছিল মাত্র তিনটি। কংগ্রেস একটি আসনও পায়নি। অরবিন্দ কেজরিওয়াল নেতৃত্বাধীন আপ ভােট পেয়েছিল ৫৪.৩ শতাংশ, বিজেপির ভাগে জুটেছিল ৩২.১ শতাংশ। প্রচার জোরদার করার জন্য আপ নির্বাচন কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশােরকে কাজে লাগিয়েছে। গত মাস থেকেই দল প্রচারে নেমে পড়েছে। প্রচারে নেমে উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসােদিয়া বলেছে, সাফল্যের ব্যাপারে তিনি পুরােপুরি আত্মবিশ্বাসী।
এবার প্রচারে আপ নতুন স্লোগান নিয়ে এসেছে- ‘আচ্ছে বিতে পাঁচ সাল, লগে রহাে কেজরিওয়াল’। এবারের দিল্লির নির্বাচন আপ ও বিজেপি উভয়ের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে নরেন্দ্র মােদির নেতৃত্বে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর দিল্লিতেই বিজেপি প্রথম বড় ধাক্কা খেয়েছিল।
২০১৫ সালে বিপুল জয়ের পর থেকে পাঁচ বছরে আপ বিকাশের লক্ষ্যে নানা জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি ঘােষণা করে বিজেপিকে চাপে রেখেছে। অপরদিকে বিজেপি রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও রাজস্থানে একের পর এক ধাক্কা খাওয়ার পর দিল্লির নির্বাচনে অবতীর্ণ হচ্ছে।
আপ সরকার তার সব নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন করার চেষ্টা করেছে। তারা মহিলাদের বিনা ভাড়ায় বাসে ভ্রমণ, ২০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ মাশুল মকুব, বিনা ব্যয়ে ওয়াইফাই, প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিনা ব্যয়ে তীর্থ ভ্রমণ এবং জল ও পয়ঃপ্রণালীর নতুন কানেকশনের ক্ষেত্রে ডেভলপমেন্ট চার্জ থেকে অব্যাহতির মতাে নানা ঘােষণা করেছে। মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য কেজরিওয়াল সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল তিন লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, শহরজুড়ে রাস্তাগুলিতে ২ লাখ লাইট লাগানাে ও ১৩ হাজার বাস মার্শাল নিয়ােগ।
এর মধ্যেই এসে পড়েছে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন, যা নিয়ে জাতীয় রাজধানীতে ব্যাপক প্রতিবাদ ও হিংসার ঘটনা ঘটেছে। দিল্লির নির্বাচনে এটা বড়ভাবেই ছাপ ফেলবে। রবিবার দিল্লিতে এক সমাবেশে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ দলীয় কর্মীদের বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে দলিত, শিখ ও উদ্বাস্তুদের সঙ্গে যােগাযােগ স্থাপন করে বলতে বলেছেন, ‘মােদিজি, আপনাদের নাগরিকত্ব দিতে চান, কিন্তু দলিত-বিরােধী কেজরিওয়াল ও কংগ্রেস তার বিরােধিতা করছে।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দিল্লির বিজেপি’র পক্ষে। একমাত্র ইস্যু হল বেআইনি কলােনিগুলির বাসিন্দাদের মালিকানার অধিকারদান। দল ১৭৩১টি এরকম কলােনিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির ছবি দিয়ে এই মর্মে পােস্টার ও ব্যানার লাগাতে শুরু করেছে। আবাসন ও নগর বিষয়ক কেন্দ্রীয়মন্ত্রী হরদীপ পুরী গত শুক্রবার নির্মাণ ভবনে ‘প্রধানমন্ত্রী দিল্লির বেআইনি কলােনির আবাস অধিকার যােজনায় আবেদনকারী প্রথম ২০ জনের হাতে মালিকানার নথিপত্র তুলে দিয়েছে। এই প্রকল্পে মালিকানার অধিকার পাওয়ার জন্য ৫৭ হাজার মানুষ নাম নথিভুক্ত করেছেন।