১৯৯২ এর ৬ ডিসেম্বর অযােধ্যার ফৈজাবাদের ঐতিহাসিক সৌধ বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর থেকেই প্রতিবছর এই দিনটিকে কালা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে বামপন্থী সহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার সংগটন। লখনউয়ের বিশেষ সিবিআই আদালতের রায় অনুযায়ী বাবরি ধংসের মামলায় ইতিমধ্যেই আদবানি, বিনয় কাটিয়ার, উমা ভারতী সহ ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তদের গত ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত বেকসুর খালাস দেয়। যদিও গত বছর ৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট বাবরি মসজিদ জমির মালিকানা সত্ব মামলার রায় ঘােষণা করে স্পষ্ট নির্দেশ দেয় ঐতিহাসিক সৌধ বাবরি ধ্বংস করাটা ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি, অন্যায়, ও অপরাধ। গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি অযােধ্যায় ভূমিপুজো ও শিলান্যাসের মধ্য দিয়ে সরযু নদীর তীরে রামমন্দিরের সূচনা করেন।
এদিকে উচ্চ ন্যায়ালয় বাবরি ধ্বংসকারীদের ক্লিনচিট দিলেও আজও এ রাজ্যের বামপন্থী নেতারা দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন। কলকাতা মৌলালী যুবকেন্দ্রে এ রাজ্যের ১৬ বাম দলের জোটের পক্ষে সংহতি দিবসে বক্তব্য রাখেন সিপিএমের বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র, লিবারেশনের পার্থ ঘােষ, জয়তু দেশমুখ, ফরওয়ার্ড বকেল হাফিজ আলি সৈরানি, আরএসপি’র মনােজ ভট্টাচার্য প্রমুখ। কংগ্রেস এ রাজ্যে বামেদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকলেও বাবরি ধ্বংরে প্রতিবাদ সভায় লিবারেশনের আপত্তিতে তারা হাজির হয়নি। কারণ ৯২ সালে বাবরি ধ্বংসের সময় কেন্দ্রে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন ছিল।
লিবারেশনের রাজ্য সম্পাদক পার্থ ঘােষ বলেন, ‘বাবরি ধ্বংস সুপ্রিম কোর্টে নিন্দিত হলেও আঠাশ বছর পরেও কোনও অপরাধী সাজা পায়নি। বিপরীতে প্রধানমন্ত্রী রামমন্দিরের শিলান্যাস করেছেন। কলকাতায় মিছিল করে সাম্প্রদায়িকতা বিরােধী মঞ্চ। এ রাজোর গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকার সংগঠন এপিডিঅর কলকাতা, কৃষাগর শসহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ সভা করে। এপিডিআর – এর রাজ্য সহস দিক আলতাফ আহমেদ বলেন, ‘বাবরি ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার কফিনে শেষ পেরেক ঢুকে দেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে কল্যাণীতে মিছিল করে এসইউসিআই। এসইউসিআই নেতা অধ্যাপক তরুণ নস্কর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন বাবরি ভেঙে রামমন্দির দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম। অথচ আরএসএসের তত্ত্ব অনুযায়ী ব্রিটিশ বিরােধী স্বাধীনতা সংগ্রামটা স্বাধীনতার জন্য লড়াই নয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহার বলেন, ‘বাবরি ধ্বংসের মধ্যে দিয়েছে ভারতবর্ষের আদর্শকেই বেঙে চুরমার করা হয়েছে। শুধু চূর্ণবিচূর্ণ মসজিদ হয়নি, চূর্ণ হয়েছে দেশের বহুত্ববাদ। আমি ৬ ডিসেম্বর শুধু কালা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চাই না। ৭১ বছর বয়সেও দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার লড়াইয়ে থাকতে চাই।’