দিল্লি হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৭, গুরুতর জখম আরও বহু

দাঙ্গা উপদ্রিত উত্তর-পূর্ব দিল্লি। (Photo: AFP)

দিল্লি হিংসায় মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। শুক্রবার সকালে পাওয়া খবর অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, উত্তর-পূর্ব দিল্লির দাঙ্গা কবলিত এলাকায় আগে পুলিশ ঢােকার মতােই পরিস্থিতি ছিল না। ফলে একের পর এক মৃতদেহ বেরােচ্ছে সেখান থেকে। এছাড়াও জিটিবি হাসপাতালে আহত যে প্রায় ২০০ জন রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর আশঙ্কাজনক।

উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে টানা চার দিন ধরে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বিধ্বস্ত ভজনপুরা, মৌজপুর, কারাওয়ালনগরে। রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া এই পরিস্থিতিতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযােগ উঠেছে নানা তরফে। বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি ‘শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব’ বজায় রাখার জন্য সকলের কাছে অনুরােধ করেছে। দফায় দফায় বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাতিল করেছেন তাঁর কেরল সফর। যদিও বিরােধীদের তরফে অভিযােগ উঠেছে হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১৮টি এফআইআর হয়েছে। ১০৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিহতদের নিকটাত্মীয়কে দু’লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। হিংসার ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছিলেন হর্ষ মান্দার। বিচারপতি এস মুরলীধর ও বিচারপতি তালওয়ান্ত সিংকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চে সেই আবেদনের শুনানি হয়। আবেদনে ক্ষতিপুরণ ও সেনা নামানাের কথাও বলা হয়েছিল।


দিল্লি পুলিশের হয়ে হাইকোর্টে সওয়াল করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। তাঁকে বিচারপতিরা বলেন, তিনি যেন দিল্লির পুলিশ কমিশনারকে পরামর্শ দেন যে, উস্কানিমূলক কথা বলার জন্য তিন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর করা হােক। ইতিমধ্যেই পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য তিন বিজেপির নেতার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বেলা তিনটের মধ্যে এফআইআর দায়ের করতে হবে।

দিল্লি পুলিশের তরফ থেকে দুটো হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। অ্যাডিশনাল কমিশনার (অপরাধ) মন্দীপ সিং রানধওয়া জানিয়েছেন, রাস্তাঘাটে বিপদে পড়লে ০১১-২২৮২৯৩৩৪ ও ২২৮২৯৩৩৫ এই নম্বর দুটোতে ফোন করা যাবে। তাছড়া আপৎকালীন নম্বর খােলা থাকবে ২৪ ঘণ্টা। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দাঙ্গাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গত তিনদিন ধরে পেট্রলবােমা ছুঁড়ে, গাড়ি জ্বালিয়ে তাণ্ডব চলছিল রাজধানীর রাস্তায়। এবার অ্যাসিড নিয়েও পথে নেমেছে বিক্ষোভকারীরা। মুস্তাফাবাদের অনেক জায়গায় অ্যাসিড হামলার খবর মিলেছে। অনেকের চোখ-মুখ, গােটা শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে অ্যাসিডে। দিল্লির তেগ বাহাদুর হাসপাতালে অ্যাসিড ক্ষত নিয়ে ভর্তি অনেকে। অ্যাসিড হামলায় চারজন হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। জ্বালাপােড়া ক্ষত নিয়ে রােগীর সংখ্যাও বাড়ছে। দিল্লি পুলিশ যদিও দাবি করেছে পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হচ্ছে, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ও পরিসংখ্যান মােটেই তা বলছে না বলেই দাবি দিল্লিবাসীর।