দিল্লির এইমস-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবীণ সিপিএমের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। গত ১৯ অগস্ট ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সংক্রমণ গুরুতর হওয়ায় দিল্লির এইমস-এ প্রথম থেকেই আইসিইউয়ে রাখা হয়েছিল তাঁকে। ৯ সেপ্টেম্বর রাত থেকে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। শেষ কয়েকদিন তাঁকে ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩ টে ০৫ মিনিটে তাঁর জীবনাবসান হয়।
সিপিএম নেতার মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লেখেন, ‘সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুর খবরে আমি শোকাহত। তাঁর মতো বড়মাপের রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু জাতীয় রাজনীতির পক্ষে বড় ক্ষতি। তাঁর পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানাই।’ সীতারাম ইয়েচুরির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ।
প্রবীণ নেতার মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধি। সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে সীতারাম ইয়েচুরিকে তিনি তাঁর বন্ধু বলে উল্লেখ করেন। পোস্টে তিনি লেখেন, সীতারাম ইয়েচুরি জি বন্ধু ছিলেন। আমাদের দেশ সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। আমাদের মধ্যে প্রায়ই দীর্ঘ আলোচনা হত, যার অভাব আমি অনুভব করব। এই শোকের সময়ে তাঁর পরিবার, বন্ধু ও তাঁর অনুগামীদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।
প্রাক্তন সাংসদ তথা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। প্রথমে তাঁর বাড়িতে চিকিৎসা চললেও পরবতী সময়ে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। এরপর তাঁকে গত ১৯ আগস্ট দিল্লির এইমসে ভর্তি করা হয়। ২৪ ঘন্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের তত্বাবধানে ছিলেন ইয়েচুরি। সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরেই দলীয় নেতাদের চিকিৎসকেরা জানিয়ে আসছিলেন ইয়েচুরির শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল নয়। ফুসফুসে সংক্রমণ থাকায়, শারীরিক পরিস্থিতির কখনও অবনতি, কখনও উন্নতি হচ্ছে। বিশেষ করে তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় সংক্রমণ ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ে।
গত মঙ্গলবার, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তরফে বিবৃতি প্রকাশ করে ইয়েচুরির শারীরিক পরিস্থিতির কথা জানানো হয়। প্রথম দলের তরফে ইয়েচুরির শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক বলে ঘোষণা করা হয় । জানানো হয় , ভেন্টিলেশনে রেসপিরেটরি সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে চিকিৎসকদের একটি দল সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণে ছিলেন।
দলীয় সূত্রে খবর, অতিরিক্ত ধূমপানের কারণেই সীতারাম ইয়েচুরির নিউমোনিয়া এবং তা থেকে ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। সেই সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। এর আগে গত ৮ আগস্ট দিল্লিতে ইয়েচুরির চোখে ছানির অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ওই দিনই প্রয়াত হন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু শারীরিক কারণেই ৯ আগস্ট কলকাতায় বুদ্ধবাবুর শেষযাত্রায় উপস্থিত থাকতে পারেননি ইয়েচুরি। শারীরিক কারণেই উপস্থিত থাকতে পারেননি ২২ আগস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুদ্ধবাবুর স্মরণসভাতেও ।
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা নিয়েও ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া দিয়েছিলেন বর্ষীয়ান সিপিএসি নেতা সীতারাম ইয়েচুরি। এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং নিহত তরুণী চিকিৎসকের সুবিচারের দাবিতে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছিলেন তিনি ।
সিপিআই(এম) -এর পলিটব্যুরোর সদস্য ইয়েচুরি ২০০৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। গত বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশে বিরোধী জোট গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন ইয়েচুরি।