শক্তি বাড়িয়ে ধেয়ে আসছে দানা, পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রস্তুত ওড়িশা প্রশাসন  

ল্যান্ডফলের কয়েক ঘন্টা আগে শক্তি বাড়াল ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। বঙ্গোপসাগরের উপর অবস্থিত দানা ক্রমশ উপকূলের দিক থেকে ধেয়ে আসছে ঘন্টায় ১২ কিলোমিটার বেগে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস মতো ওড়িশার ভিতরকণিকা ও ধামরা বন্দরের মধ্যবর্তী এলাকা দিয়ে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে স্থলভাগে প্রবেশ করার কথা ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র। সন্ধে ৭ টা নাগাদ ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১০ কিলোমিটার।  এই সময়ে দানার অবস্থান ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে ১৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে এবং ধামরা থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বে। সন্ধে ৭ টায় সাগরদ্বীপ থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে ছিল ‘দানা’।   

রাত যত গড়ায়, ‘ডানা’র আশঙ্কায় প্রহর গুনতে থাকে ওড়িশার উপকূল এলাকার বাসিন্দারা। ওড়িশা প্রশাসন সূত্রে খবর, শুধু  বৃহস্পতিবারই  প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। জেলায় জেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল, চিকিৎসক, অ্যাম্বুল্যান্স থেকে শুরু করে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী। দুর্যোগ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত ওডিশা সরকারের নিজস্ব বাহিনী। সাইক্লোন সেন্টারে রাখা হয়েছে উপকূলের বাসিন্দাদের। বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধামরা বন্দর থেকে কর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সমুদ্র সৈকতে লাগাতার মাইকিং করে স্থানীয়দের নিরাপদ এলাকায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় ।

সকাল থেকেই ওডিশার উপকূলবর্তী এলাকায় শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টিপাত।  বইতে থাকে ঝোড়ো হাওয়া। বেলা যত গড়ায় পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি। ঝড় যে গতিতে এবং যে পথে এগোচ্ছে  তাতে  পূর্বাভাস মতো  ভিতরকণিকা থেকে ধামরার মধ্যে দিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে দানা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সতর্ক প্রশাসন। ১৪টি জেলা থেকে ১০ লাখ ৬০ হাজার ৩৩৬ জনকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয় । সেই সঙ্গে ত্রাণ শিবিরে বিশুদ্ধ পানীয় জল, তিনবেলা খাবার দেওয়ার পাকা ব্যবস্থা করা আছে। রাজ্যের একাধিক স্কুলে তাঁদের থাকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বলে খবর।পুরী-সহ রাজ্যের উপকূল এলাকা জনমানবহীন। বালেশ্বর, কেন্দ্রাপাড়া, ময়ূরভঞ্জ, জগৎসিংপুর,  পুরীতে  দানার প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই মতো ওই জেলাগুলি জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই পাঁচ জেলায় ছয় জন পদস্থ আইএএস আধিকারিককে এক মাসের জন্য পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। এর আগে ওই পাঁচ জেলায় তাঁরা জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলা শাসক থাকার সময় একাধিকবার ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবিলা করেছেন। বর্তমান জেলা শাসকেরা এই একমাস প্রাক্তনদের পরামর্শমতো চলবেন।


সূত্রের খবর ওডিশার প্রতিটি প্রান্তে বৃষ্টি শুরু হলেও সবথেকে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে পারাদ্বীপে।  বৃষ্টি হচ্ছে  ভদ্রক, বালাসোর, জয়পুর, কটক, খুরদা ও পুরীতে । সেখানে রাতভর বৃষ্টির পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। লাগাতার বৃষ্টিতে ইতিমধ্যেই ভদ্রক, ভিতরকণিকা ও পুরীতে গাছ উপড়ে বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় ।বুধবার থেকে তিন দিন পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে গঞ্জাম জেলার গোপালপুর এবং সুনাপুর সৈকত। আবার পারাদ্বীপ এবং সিয়ালি সৈকতেও পর্যটকদের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জগৎসিংহপুর জেলা প্রশাসন। ‘দানা’র জেরে সমুদ্রের ঢেউ ৭-৮ ফুট পর্যন্ত উঠতে পারে। ফলে ওই সময়ে সৈকতের ধারেকাছে কোনও পর্যটক ঘেঁষতে না পারেন, তার জন্য নজরদারি চালানো হচ্ছে।

ওড়িশার মন্ত্রী সুরেশ পূজারি বলেন, ‘১৪টি জেলার মধ্যে ৩০০০টি গ্রাম আমরা চিহ্নিত করেছি। ওড়িশা সরকারের পক্ষ থেকে ৯টি জেলার পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে ৯ জন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সিনিয়র আইএস অফিসারদের পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে বলা হয়েছে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “রাজ্য সরকার দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত। সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন ভয় পাবেন না। আমরা সবসময় পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।”

ভিতরকণিকা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে বলে অনুমান করা হচ্ছে, সেই এলাকায় রয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অভয়ারণ্য। সেক্ষেত্রে জলস্তর বৃদ্ধি পেলে কুমির ও জলজ প্রাণী বসতি এলাকায় প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা । রাজনগরের ডিএফও সুদর্শন গোপীনাথ যাদব বলেন, “যদি জলস্তর বৃদ্ধি পায় তাহলে বসতি এলাকায় কুমির ঢুকে যেতে পারে। আমরা দুটি দল গঠন করেছি। তাদের প্রধান কাজ, কুমিরগুলোকে উদ্ধার করা। বাকি পাঁচটি দল গঠন করা হয়েছে বসতি এলাকা থেকে সাপ উদ্ধার করার জন্য।” সব মিলিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত ওড়িশা প্রশাসন।