• facebook
  • twitter
Tuesday, 8 April, 2025

মাদুরাইয়ে আজ থেকে শুরু সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস

দিল্লি নেতৃত্বের অনেকেই মনে করেন, বিভিন্ন ভাষায় সেলিমের অনর্গল বক্তৃতা করার যে ‘দক্ষতা’ রয়েছে, তা দলের অন্দরে বিরল।

ফাইল চিত্র

সীতারাম ইয়েচুরির নামেই মাদুরাই শহরের নামকরণ করেছে সিপিএম। কিন্তু সেই সীতানগরে আজ সিপিএমের পার্টি কংগ্রেস শুরু হচ্ছে সীতারাম ইয়েচুরিকে ছাড়াই। এবার পার্টি কংগ্রেসে সিপিএমের পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটিতে বদল ঘটবে। আসবে নতুন মুখ, তরুণ প্রজন্ম। এক্ষেত্রে নেতৃত্বের অভাব অনুভব করছে সিপিএম।
সীতারাম ইয়েচুরি ও কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের মৃত্যুর পরে ১৭ থেকে পলিটব্যুরোর সদস্য সংখ্যা কমে হয়েছে ১৫। বর্তমান পলিটব্যুরো থেকে ৭ জন নেতা-নেত্রীর বাদ পড়ার কথা। তালিকায় রয়েছেন প্রকাশ এবং বৃন্দা কারাট, সুভাষিণী আলি, ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, তামিলনাড়ুর নেতা জি রামকৃষ্ণন এবং বাংলার সূর্যকান্ত মিশ্র। কিন্তু এই বদল পুরোপুরি বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সিপিএমের অন্দরমহলে। মনে করা হচ্ছে,  এই অভাব মেটাতে লিখিত নিয়মের বাইরে গিয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে ‘ব্যতিক্রমী’ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন প্রকাশ কারাটেরা। এই বিষয়গুলিকেই ‘নেতৃত্বের সঙ্কট’ হিসাবে বর্ণনা করছেন দলের অনেকে।

দলের প্রত্যেক কমিটি স্তরে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সিপিএম। তাকে মান্যতা দিলে গত পার্টি কংগ্রেসেই বিজয়ন বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পার করেছেন। কিন্তু একমাত্র বামশাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর জন্য ‘ব্যতিক্রমী’ ভাবে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোয় রেখে দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় কমিটিতে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৭৫ বছর। ইতিমধ্যেই কেরল রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে রাখা হয়েছে বিজয়নকে। যেমন মানিককে রাখা হয়েছে ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে। ফলে এই দুই নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটি ও পলিটব্যুরোয় আবার রেখে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে কৌতূহল রয়েছে।

পরবর্তী সাধারণ সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। পার্টি কংগ্রেসের শেষে বক্তা তালিকায় নাম রয়েছে বিদায়ী পলিটব্যুরোর চার সদস্যের। প্রকাশ কারাট, বৃন্দা কারাট, বিজয়ন এবং তামিলনাড়ুর রামকৃষ্ণনের। এ ছাড়াও মহিলা নেত্রী ইউ বাসুকির নাম রয়েছে সেই তালিকায়। সভাপতিত্ব করবেন তামিলনাড়ু সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পি ষন্মুগম। এই বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক যিনি হবেন, তিনি পার্টি কংগ্রেসের প্রকাশ্য সমাবেশে বক্তৃতা করবেন। কিন্তু কৌতূহল, তার মানে কি ওই চার জনের মধ্যে থেকেই কাউকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্ব? কিন্তু বয়সবিধিতে যে ওই চার জনেরই বাদ পড়ার কথা।

আনুষ্ঠানিক ভাবে পার্টি কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করেন। বিজয়ন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দলীয় দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ নেই বললেই চলে। তা হলে কি প্রকাশকেই আবার দায়িত্ব দেবে সিপিএম?  অনেকের বক্তব্য, মহিলা হিসাবে বৃন্দাকে দায়িত্ব দিতে পারে দল। কিন্তু এই চার জনের মধ্যে যাঁকেই সিপিএম দায়িত্ব দিক, তাতে সিপিএমকে বয়সবিধি ভেঙে ‘ব্যতিক্রমী’ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবার নতুন কাউকেও দায়িত্ব দিতে পারে দল। সে ক্ষেত্রে নতুন সাধারণ সম্পাদকের নাম বক্তার তালিকায় যুক্ত হয়ে যাবে। সীতারামের মৃত্যুর পরে বাংলার রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে সর্বভারতীয় দলের ‘অন্তর্বর্তী দায়িত্ব’ নিতে বলা হলেও সেলিম রাজি হননি। 

দিল্লি নেতৃত্বের অনেকেই মনে করেন, বিভিন্ন ভাষায় সেলিমের অনর্গল বক্তৃতা করার যে ‘দক্ষতা’ রয়েছে, তা দলের অন্দরে বিরল। মধ্যবর্তী সময়ে কেরালারই ভূমিপুত্র এমএ বেবিকে নিয়েও আলোচনা হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। কিন্তু বেবি যে রাজ্য থেকে উঠে এসেছেন, সেই কেরলের বড় অংশেরই তাঁর নামে সায় নেই বলে খবর। এমএ বেবির সঙ্গে বিজয়নের মতাদর্শগত সংঘাতও নতুন নয়৷ বিজয়ন যদি শেষ পর্যন্ত মহারাষ্ট্রের কৃষক নেতা অশোক ধাওয়ালেকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার পক্ষপাতী হন, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। যদিও ধাওয়ালে গত পার্টি কংগ্রেসে প্রথমবার পলিটব্যুরো সদস্য হয়েছেন এবং তাঁরও বয়স ৭৩ পার হতে চলেছে।

ইতিহাস বলছে, সিপিএম এমন ভাবে সাধারণ সম্পাদক বাছাই করে যাতে একাধিক বার তিনি ওই পদে থাকতে পারেন। প্রথম সম্পাদক পি সুন্দরাইয়া থেকে প্রয়াত সীতারাম ইয়েচুরি পর্যন্ত এই ধারা বজায় থেকেছে। এই ধারা বজায় রাখলে সেলিম অথবা বেবি অন্যান্যদের থেকে এগিয়ে থাকছেন বলে মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের।

দলকে আবার মূল স্রোতে ফেরাতে তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে শুরু হতে চলা পার্টি কংগ্রেসে যোগ দেবেন সিপিএম নেতৃত্ব। পাঁচদিনের এই পার্টি কংগ্রেস থেকে দলের পুনরুজ্জীবনের কোন দিশা খুঁজে নেন সিপিএম নেতৃত্ব, সে দিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে বিজেপির মোকাবিলায় বাম ও গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে জোটের কৌশল এখনও বজায় রয়েছে। প্রতিটি রাজ্যের পরিস্থিতি মতো নির্বাচনী কৌশল ঠিক করা হয়। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী লড়াইয়ের ময়দানেও কোনও বদল আসবে কিনা , তা–ও ঠিক হবে পার্টি কংগ্রেসে।  

News Hub