একদিনে ফের রেকর্ড সংক্রমণ ধরা পড়েছে দেশে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেবে গত চারদিনে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৬০ হাজার। গত ২৪ ঘণ্টায় এক লাফে কোভিড পজিটিভ রোগীর সংখ্যা পৌঁছেছে ১৭ হাজারের কাছাকাছি।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছে, করোনা সংক্রমণ হার প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যায় বাড়ছে, অথচ পজিটিভিটির হার তথা কোভিড পজিটিভ রেট ৭-৮ শতাংশেই আটকে আছে। অথচ দেশে কোভিড টেস্টিংয়ের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে বলে দাবি করেছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)।
তাহলে কি বেশি সংখ্যক করওনা রোগীকে চিহ্নিত করা যাচ্ছে না কেভিড পজিটিভিটি বা করোনা পজিটিভ কেসের হার বার করা হয়, যতগুলি কোভিড টেস্ট করা হয়েছে তার মধ্যে কতজন রোগীর শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। অর্থাৎ কতজন রোগী কোভিড পজিটিভ সেই সংখ্যা হিসেব করে। কোভিড পজিটিভিটির হার সব জায়গায় সমান নয়।
দিল্লিতে এখন কোভিড পজিটিভিটির হার বেশি, প্রায় ২৩ শতাংশ। তেলঙ্গানায় টেস্টিং অনেক কম হয়েছে বলে অভিযোগ, সেখানে পজিটিভিটি রেট ১৮ শতাংশ। হিসেব বলছে, মুম্বইতে মে মাসের শুরুতে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা যত ছিল, মে’র শেষ থেকে জুনের শুরু অবধি সেই সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে।
রিপোর্ট বলছে, গত ৬ মে করোনা পজিটিভ কেসের হার ছিল ১০ শতাংশের কাছাকাছি। ১৩ মে সেটাই হয় ১১.৬ শতাংশ। ২১ মে’র পর থেকে কোভিড সংক্রমণ আরও বেশি জনের মধ্যে ধরা পড়ে। করোনা পজিটিভ কেসের হার পৌঁছয় ১৬.৫ শতাংশে। আর জুন মাসে সেই হারই ২০ শতাংশ ছাড়াতে চলেছে।
আইসিএমআরের হিসেব বলছে, ১ থেকে ২৩ জুন দেশে কোভিড টেস্টিংয়ের সংখ্যা প্রতিদিনের হিসেবে দ্বগুণ হয়েছে। জুনের শুরুতেই প্রতিদিনের হিসেবে গড়ে ১ লাখ কোভিড টেস্টিং হত। গত কয়েকদিনে সেই সংখ্যাই ২ লাখ ছাড়িয়েছে। ২৪ জুন দেশে মোট করওনা পরীক্ষা হয়েছে ২ লাখ ১৫ হাজার ১৯৫। গত ২০ জুন টেস্টিং হয়েছিল ১ লাখ ৯০ হাজারের কাছাকাছি। ওই দিন পজিটিভিটি রেট ছিল ১২.৩৩ শতাংশ।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথের লাইফকোর্স এপিডেমোলজি বিভাগের প্রধান ডক্টর গিরিধর আর বাবু বলেছেন, ১ থেকে ২৩ জুনের হিসেব দেখলে বোঝা যাবে গত ১ জুন দেশে কোভিড টেস্ট হয়েছিল ১ লাখ। ওই দিন কোভিড পজিটিভ রোগী ধরা পড়েছিল ৮১৭২ জন। সেই হিসেবে পজিটিভিটি রেট ছিল ৮.১।
অথচ ২৩ জুন করোনা পরীক্ষা হয়, ২ লাখ ১৫ হাজারের বেশি, কোভিড পজিটিভ রোগী ধরা পড়ে ১৫,৯৬৮। সেই হিসেবে পজিটিভিটি রেট ৭.৪ শতাংশ। করোনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়িয়েও পজিটিভিটি রেট একটা কন্সট্যান্টে থেমে গেছে। তাঁর দাবি, অনুমান দেশের সব জায়গায় সমানভাবে টেস্টিং হচ্ছে না। অথবা কনট্যাক্ট ট্রেসিং ঠিকভাবে করা হচ্ছে না।
নয়াদিল্লির এইমসের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর আনন্দ কৃষ্ণণ বলেছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির হার একটা পর্যায়ে এসে থেমে গেছে। এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে টেস্টিংয়ের সংখ্যা আরও কীভাবে বাড়ানো যায় বা টেস্টিং স্ট্র্যাটেজিতে বদল আনা যায়।
একজন আক্রান্তের সংস্পর্শে কতজন আসছেন, সংক্রমণ কতটা এবং কী হারে ছড়িয়ে পড়ছে তার সঠিক তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। তার জন্য কোভিড টেস্টিং আর কনট্যাক্ট ট্রেসিং আরও বাড়াতে হবে। সব রাজ্যকেই সমান ভূমিকা নিতে হবে।