দিল্লি, ২১ জুলাই – দেশের শীর্ষ আদালতের নির্দেশমতো নিট-ইউজি ২০২৪ পরীক্ষার সম্পূর্ণ ফল প্রকাশ করেছে এনটিএ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো শহর ও সেন্টার ভিত্তিক নিট-ইউজি পরীক্ষার ফল শনিবার প্রকাশ করে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি। তবে নতুন যে ফল বেরিয়েছে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কারণ দেখা গেছে, নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যের কিছু এলাকার, নির্দিষ্ট কিছু সেন্টারের পরীক্ষার্থীরা তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। এনটিএ যে ফল প্রকাশ করেছে তাতে দেখা গেছে, রাজস্থানের সিকরের ৫০টির মধ্যে ৩৭টি সেন্টারের পরীক্ষার্থীরা শীর্ষ নম্বর প্রাপ্তির তালিকায় রয়েছেন। গোটা দেশের ২৩ লক্ষের বেশি নিট পরীক্ষার্থীর ফলাফলে দেখা গেছে, রাজস্থানের সিকর থেকেই সবচেয়ে বেশি নম্বর প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের নাম রয়েছে। ৩৭টি কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বেশিরভাগই ৬৫০ বা তার ওপর স্কোর করেছেন।
আবার অন্য এক রাজ্যের ক্ষেত্রে দেখা গেছে অন্য ফল। চলতি বছর ডাক্তারির প্রবেশিকা নিটের ফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছিল, হরিয়ানার একটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ছ’জন মোট নম্বর ৭২০-তে ৭২০ নম্বরই পেয়েছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে শনিবার রাতে পরীক্ষা কেন্দ্র এবং শহর ধরে ধরে ফল প্রকাশ করে দেখা যায়, ওই পরীক্ষা কেন্দ্রের কোনও পরীক্ষার্থী ৬৮২ নম্বরের বেশি পাননি। এর পরেই তৈরি হয়েছে জল্পনা।
নম্বরের এই তারতম্য নিয়ে ফের বিতর্ক দানা বেঁধেছে। দুবারের এই পরীক্ষায় নম্বরের এই তারতম্যের কারণে অনেকেই সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। রাজস্থানের পরীক্ষার্থীরা ৬৫০ বা তারও বেশি নম্বর পেয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা সরকারি মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সুযোগ পাবেন। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন অনেকেই।
আবার নিটের শনিবারের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হরিয়ানার হরদয়াল পাবলিক স্কুল থেকে মোট ৪৯৪ জন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে মাত্র এক জন ৬৮২ পেয়েছেন। ৬০০ নম্বরের গণ্ডি পেরিয়েছেন মাত্র ১৩ জন পড়ুয়া।
গত ৪ জুন নিটের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গিয়েছিল, হরিয়ানার এই পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ছয় জন পরীক্ষার্থী পুরো নম্বর পেয়েছেন। এক জন ৭১৯ এবং এক জন ৭১৮ পেয়েছেন।
তবে শুধু রাজস্থান বা হরিয়ানা নয়, বিহার বা দিল্লির মতো রাজ্যের একাধিক সেন্টার থেকেও এমন অভিযোগ এসেছে। নিট পরীক্ষা নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে অবশ্য এখনও ধন্দে আছে সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, নিটের প্রশ্নফাঁসের কারণে বড় পরিসরে যদি প্রভাব পড়ে তাহলেই একমাত্র পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, যদি এমন দেখা যায় যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য পুরো পরীক্ষাই প্রভাবিত হয়েছে তখন নিট ইউজি পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি আবার পরীক্ষা করানোর কথা ভাবা যেতে পারে। পরীক্ষার্থীরা আবার পরীক্ষা দিতে চাইছেন বলে আদালত সেই নির্দেশ দেবে, এমনটা হতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে এনটিএ পরীক্ষা কেন্দ্র এবং শহর ধরে ধরে ফল প্রকাশ করে শনিবার। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় তাঁর নির্দেশে বলেন, যে হেতু সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রশ্নফাঁসের সমস্যা হয়নি, তাই নিটের ফল প্রকাশ করা হবে আলাদা ভাবে প্রতিটি কেন্দ্র ধরে ধরে। শুধু তা-ই নয়, যে হেতু নিট মামলার তদন্ত এখনও চলছে, তাই পরীক্ষার্থীদের নাম বা রোল নম্বর কোনওটিই প্রকাশ করা হবে না। অর্থাৎ পরীক্ষার্থীর পরিচয় গোপন রেখে ফল প্রকাশ করা হবে নিটের। যাতে যে সব পরীক্ষা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, সেগুলির পরীক্ষার্থী এবং অন্য কেন্দ্রগুলির পরীক্ষার্থীদের নম্বরের মধ্যে বৈষম্য ধরা পড়ে।
গত ৫ মে নিট পরীক্ষা হয়েছিল। ৫৭১টি শহরের ৪,৭৫০টি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। বিদেশেও ১৪টি জায়গায় পরীক্ষা হয়। ২৪ লক্ষ পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় বসেন। এই পরীক্ষা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সুপ্রিম কোর্টে পরীক্ষা বাতিল, আবার পরীক্ষা, কোর্টের নির্দেশে তদন্তের আবেদন জানিয়ে মামলা হয়েছিল। ২২ জুলাই আবার শুনানি।