দিল্লি, ১৫ এপ্রিল – বিচারব্যবস্থাকে পরিকল্পিতভাবে দুর্বল করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। ভুয়ো খবর ও চরিত্র হননের মতো পন্থা অবলম্বন করে মানুষের মনে বিচারব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস তৈরির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। আদালতের উপর নানাভাবে দোষ চাপাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। এই অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়কে চিঠি লিখেছেন ২১ জন প্রাক্তন বিচারপতি। ওই ২১ জন প্রাক্তনী সুপ্রিম কোর্ট এবং হাই কোর্টের বিচারপতি ছিলেন। চিঠিতে তারা বিচার বিভাগের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কোনও নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করেননি। প্রসঙ্গত, গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট ও হাই কোর্টের ২০০ জন আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বর্তমান প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে একই কথা লিখেছিলেন। তাঁদেরও বক্তব্য ছিল, দেশে বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করা হচ্ছে। যদিও বিচারপতি এবং আইনজীবীরা চিঠিতে বিচার ব্যবস্থাকে অসম্মান এবং অস্বীকার করার কোনও দৃষ্টান্ত তুলে ধরেনি।
চন্দ্রচূড়কে লেখা চিঠিতে প্রাক্তন বিচারপতিদের আশঙ্কা, ‘সংকীর্ণ রাজনৈতিক মানসিকতায় ব্যক্তিগত স্বার্থে দেশের বিচার ব্যবস্থার আস্থা নষ্টের চেষ্টা চলছে। ‘দুর্নীতির অভিযোগে দেশের একের পর এক রাজনৈতিক নেতা বর্তমানে জেলবন্দি।ভুয়ো খবর ও চরিত্র হননের মতো পন্থা অবলম্বন করে মানুষের মনে বিচারব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাস তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে এক স্বার্থান্বেষী মহল। এই ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।’ চিঠিতে সরাসরি কোনও ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নাম নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক জগতের সঙ্গে যুক্ত যাঁরা, তাঁরা মনে করছেন বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্টের উদ্বেগ প্রকাশ করে আসলে বিরোধীদেরই নিশানা করা হচ্ছে। কারণ, বিগত দিনে বেশ কয়েকটি ইস্যুতে বিচারব্যবস্থার প্রতি ক্ষোভপ্রকাশ করতে শোনা যায় বিরোধীদের।
প্রধান বিচারপতির উদ্দেশে চিঠিতে প্রাক্তন বিচারপতিরা লিখেছেন, ‘মিথ্যা ও ভুল তথ্য তুলে ধরে বিচারব্যবস্থার প্রতি দেশের জনগণের সাধারণ মানুষের ভাবাবেগ নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। এই ঘটনা শুধু অনৈতিক নয় গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির জন্য ক্ষতিকর।’
এই ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার আবেদন জানিয়ে প্রাক্তন বিচারপতিরা জানান, ‘এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা বিচার বিভাগের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াতে প্রস্তুত। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বিচারবিভাগকে বাঁচাতে হবে। বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য কিছু মানুষ নিজেদের মনগড়া গল্প তৈরি করে সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। এর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’ যে ২১ জন প্রাক্তন বিচারপতি এই চিঠি লিখেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শীর্ষ আদালতের ৪ জন প্রাক্তন বিচারপতি। বাকি ১৭ জন দেশের একাধিক হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের নেতৃত্বে বিচার বিভাগকে এই ধরণের চাপের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হওয়া এবং আইনি ব্যবস্থার পবিত্রতা ও স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা।