‘জাত সমর্থন’, মোদির বিরুদ্ধে লোকসভায় স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগ কংগ্রেসের

দিল্লি, ৩১ জুলাই–  কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধির উদ্দেশে করা বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরের মন্তব্য ঘিরে মঙ্গলবারই উত্তাল হয়েছিল লোকসভা। সেই ভাষণের প্রশংসা করতে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। তবে অনুরাগ বা মোদির এই কর্ম মোটেই চুপচাপ মেনে নেয়নি কংগ্রেস।  লোকসভায় জাতপাত বিতর্কে উসকানি দেওয়ায়বুধবার  প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনল কংগ্রেস। বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি সম্পর্কে বিজেপি সাংসদ অনুরাগ কটাক্ষ করে বলেন, ‘যাঁর জাত জানা নেই, তিনিই জাতগণনার কথা বলছেন!’ এই মন্তব্যে লোকসভা উত্তাল হয়ে ওঠে। বিতর্কের মধ্যেই রাহুল অনুরাগকে বলেন, ”আপনি আমাকে যত খুশি অপমান করতে পারেন। কিন্তু আপনার ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে আমরা সংসদে জাতগণনা বিল পাশ করব।” এর পরই অনুরাগ বলেন, তিনি তাঁর মন্তব্যে কারও নামোল্লেখ করেননি।
এর পরই খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই কটাক্ষের প্রশংসা করতে দেখা যায়। তিনি এক্স হ্যান্ডলে অনুরাগকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়ে লেখেন লেখেন, ‘আমার তরুণ ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর অনুরাগ ঠাকুরের ভাষণটি অবশ্যই শুনুন। তথ্য ও ব্যঙ্গের এক নিখুঁত সংমিশ্রণ। যা ইন্ডিয়া জোটের নোংরা রাজনীতিকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।’
মোদির এই বার্তা পড়ার পরই আসরে নেমে পরে কংগ্রেস। হাত শিবিরের অভিযোগ, সংসদীয় বিশেষাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন করেছেন মোদি। জলন্ধরের সাংসদ তথা প্রাক্তন পাঞ্জাব কংগ্রেস সভাপতি চরণজিৎ সিং চান্নি লোকসভার মহাসচিবের কাছে স্বাধিকারভঙ্গের অভিযোগ জমা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি দলীয় এমপি ঠাকুরের মন্তব্যে সিলমোহর দিয়ে প্রশংসা করায় তা সংসদের রীতিবিরুদ্ধ কাজ বলে মনে করে কংগ্রেস।
চান্নি অভিযোগে লিখেছেন, অনুরাগ ঠাকুর যা আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন তা সভার কার্যাবলি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বিস্ময়করভাবে খোদ প্রধানমন্ত্রী সভায় বাদ দেওয়া অংশকে প্রকাশ্যে এনেছেন। শুধু তাই নয়, সেখানে তিনি অনুরাগ ঠাকুরের প্রশংসাও করেছেন।
চান্নির দাবি, সভার কার্যাবলি থেকে বাদ দেওয়া অংশ হাটের মাঝে বলা যায় না। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী তা জনতার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। একে কংগ্রেস গুরুতর সংসদীয় বিধিভঙ্গ বলে বর্ণনা করেছে। অনুরাগের বক্তব্যকে শেয়ার করাকে মারাত্মক অপমানকর ও অসাংবিধানিক কাজ বলে মনে করে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
চান্নির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর ওই পোস্ট স্পষ্টতই স্বাধিকারভঙ্গের ঘটনা। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২৩ সালের মার্চে বাজেট অধিবেশনের প্রথমার্ধে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পারি না নেহরুর পরিবারের উত্তরপুরুষেরা কেন তাঁর পদবি ব্যবহার করেন না?” এর পরে তাঁর বিরুদ্ধে স্বাধিকারভঙ্গের প্রস্তাব এনেছিল কংগ্রেস।
কাল রাহুল অনুরাগের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, অনুরাগ তাঁকে অপমান করলেও তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলবেন না তিনি। কংগ্রেস নেতার কথায়, ”আমার প্রয়োজন নেই।” যদিও সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব বলেন, ”কী করে কেউ কারও জাত জানতে চাইতে পারে? আপনারা কারও জাত জানতে চাইতে পারেন না।”
এর পরই অস্থায়ী স্পিকারের ভূমিকায় থাকা জগদম্বিকা পাল জানিয়ে দেন, অনুরাগের ওই মন্তব্য রেকর্ড থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে। যদিও কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তোলেন, ওই মন্তব্য বাদ দেওয়া হলেও তা সম্পাদনা না করেই অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে সংসদ টিভিতে। যাকে সংসদীয় ইতিহাসের এক ‘লজ্জাজনক অধ্যায়’ বলেই তোপ দাগেন তিনি।
বিজেপিকে আক্রমণ করে কংগ্রেস বলেছে, গান্ধি পরিবারের জাত হল শহিদের জাত। কিন্তু, বিজেপি-আরএসএস কোনওদিন তার মূল্য বুঝবে না। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, তাঁরা জাতধর্ম নিয়ে আরও অপমানজনক মন্তব্য শুনতে রাজি। কিন্তু, জাতিভিত্তিক জনগণনার দাবি থেকে পিছু হটবেন না। এ পর্যন্ত কোনওদিন সংসদে কোনও সদস্যের জাত নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি। উনি ইচ্ছা করেই বলেছেন রাহুল গান্ধীকে অপমান করতে। ওদের অনেক বড় বড় নেতার অন্য জাতগোত্রে বিয়ে হয়েছে। ফলে কিছু বলার আগে নিজেরা যেন আয়নার দিকে তাকিয়ে কথা বলে।