একে অপরের হাত ধরতে চাইলেও তৃণমূলের চাপে ত্রিশঙ্কু সিপিএম-কংগ্রেস জোট

দিল্লি, ১৫ জানুয়ারি— বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র জেরে এখন বাংলায় বেহাল দশা সিপিএম ও কংগ্রেসের৷ রাজ্যে দুই বিরোধী দলই পরস্পরের হাত ফের ধরতে লালায়িত৷ কিন্ত্ত শাসক দলকে এড়িয়ে যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে নিভৃতে, গোপনে৷ শাসক দলের কাঁটা না সরলে বিড়ম্বনা কেমন ভাবে গ্রাস করেছে সিপিএম এবং কংগ্রেসকে, দুই শিবিরের অভ্যন্তরীণ ঘটনাপ্রবাহে তার ইঙ্গিত আছে৷

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রয়াণ দিবসে আগামী ১৭ জানুয়ারি নিউ টাউনে তাঁর নামাঙ্কিত ‘সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে৷ সেই উপলক্ষে ‘ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র রক্ষার চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা-সভায় আসার কথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির৷ বক্তা দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও৷

সূত্রের খবর, নীতীশ, ইয়েচুরি, সেলিমদের পাশাপাশি লোকসভায় বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নামও প্রাথমিক বক্তা-তালিকায় রেখেছিল সিপিএম৷ আর এখানেই গল্প৷ যেহেতু তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আসন-রফা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে তাই অধীরের নাম সংবলিত তালিকা ঘোষণা করা যায়নি! রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ অবশ্য ১৭ তারিখের অনুষ্ঠানে শ্রোতা হিসেবে আমন্ত্রিত৷ সিপিএমের এক পলিটবু্যরো সদস্যের কথায়, ‘‘কংগ্রেসকে এই অনুষ্ঠানে পেলে তো ভালই৷ কিন্ত্ত তৃণমূলের সঙ্গে রফার প্রশ্নে কংগ্রেস নিষ্পত্তি না করলে আমাদের হাত-পা বাঁধা৷’’


অন্যদিকে, ত্রিশঙ্কুর হাল অধীরেরও৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দাক্ষিণ্যে’ তিনি ভোটে লড়তে চান না, একাধিক বার স্পষ্ট করে বলেছেন৷ কংগ্রেস সূত্রের খবর, জোটের প্রশ্নে তাঁর ‘চরম অবস্থানে’র কথা দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে রেখেছেন প্রদেশ সভাপতি৷ বলেছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোটের স্বার্থে যদি তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতেই হয়, তা হলে তাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্য কাউকে এনে আলোচনা করা হোক৷ একে তো কংগ্রেস-তৃণমূল জোট হলে বহরমপুর আসন অধীরের জন্য আরও নড়বডে় হবে, ফায়দা পাবে বিজেপি৷ তা ছাড়া, পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক মাসের মধ্যে বিজেপি-বিরোধিতার নাম করে তৃণমূলের সঙ্গে গেলে নিজেদের রাজনীতিকেই অস্বীকার করা হবে৷ শুধু প্রদেশ সভাপতির পদ ছে়়ডে়ই নয়, প্রয়োজনে নির্দল প্রার্থী হয়ে তিনি বহরমপুরে লড়তে নেমে যেতে পারেন, এমন কথাও এআইসিসি নেতৃত্বকে সাংসদ শুনিয়ে রেখেছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর৷ অধীরের ঘনিষ্ঠ মহলের এক নেতার কথায়, ‘‘দাদা অনেক দিন সাংসদ আছেন৷ পেনশন নিশ্চিত! এখন রাজনীতিতে নাক কেটে কাজ কী!’’

এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে বাংলার ভূখণ্ডে আসতে চলেছে রাহুলের ‘ন্যায় যাত্রা’৷ যেখানে ‘ইন্ডিয়া’ শরিকদের অংশগ্রহণ করার কথা৷ তৃণনমূল অবশ্য মনোভাব স্পষ্ট করেনি৷ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিম বলে রাখছেন, ‘‘আমরা ‘ন্যায় যাত্রা’য় যেতেই পারি, কোনও আপত্তি নেই৷ কিন্ত্ত তৃণমূল থাকলে সেটা হবে না৷ আমরা বলেই দিয়েছি, তৃণমূলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনও সংস্রবে আমরা নেই৷’’ তৃণমূল না থাকলে রাহুলের যাত্রায় সরাসরি সিপিএম থাকবে৷ আর তৃণমূল থাকলে ‘বিকল্প’ প্রতিনিধিত্ব করা হতে পারে৷ আর এই প্রশ্নে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরের বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল ‘ন্যায় যাত্রা’য় আসবে কি না, জানি না৷ কেউ আসতে চাইলে তো বলতে পারব না যে, এসো না! কী করা যাবে!’’ রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘রাহুল গান্ধি আসতে পারেন, যে কেউই আসতে পারেন৷ ভোটের ফলটা বিধানসভার স্কোরলাইন থেকেই বুঝে নেওয়া যায়!’’