উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলে মেঘভাঙা ‍বৃষ্টি, ফিরছে ২০১৩–র স্মৃতি

 
রুদ্রপ্রয়াগ ও সিমলা , ১ আগস্ট – কেরলের ওয়েনাড়, হিমাচল প্রদেশের পর এবার ‍ভারী ‍বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। কেদারের যাত্রাপথে রুদ্রপ্রয়াগে প্র‍বল ‍বৃষ্টিতে ভেসে যায় দুটি সেতু। গৌরীকুণ্ডে ভেসে গেছে তপ্তকুণ্ড। একের পর এক ধস নেমেছে কেদারনাথ, চামোলি, টিহরীতে। এই পরিস্থিতিতে আপাতত স্থগিত করা হয়েছে কেদারনাথ যাত্রা। মুখঅযমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি ‍বৃহস্পতি‍বার রুদ্রপ্রয়াগ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি এদিন পরিদর্শন করেন।
 
২০১৩ সালে হড়পা বানে ভেসেছিল কেদারনাথ। প্রাণ গিয়েছিল বহু পর্যটকের। সেই স্মৃতি এখনও টাটকা। এর মাঝেই বুধবার থেকে মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়েছে উত্তরাখণ্ডে। যার জেরে মন্দাকিনী নদীর জলস্তর হু হু করে বাড়ছে। গত কয়েক দিন ধরেই উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বুধবার বৃষ্টির তী‍ব্রতা আরও বাড়ে। আচমকাই মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং তার জেরে কেদারনাথে ধস নামে বুধবার। মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে আচমকাই ধস নামায় কেদারনাথে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, হরিদ্বারে ধসের জেরে বাড়ি ভেঙে পড়ে একই পরিবারের ছ’জন আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।কেদারনাথ যাওয়ার রাস্তার বেশ কিছু জায়গায় ধস নামার কারণে পুণ্যার্থীরা আটকে পড়েছেন বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর। মুষলধারে ‍‍বৃষ্টি নামায় মন্দাকিনী নদী ভয়া‍বহ রুপ নেয়। ‍বহু জায়গায় রাস্তা ভেসে যায়। স‍বচেয়ে ‍বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় কেদারনাথের ভীম‍বালি ও লিঞ্চোলিতে।
 
এই সময়ে চলছে চারধাম যাত্রা । দুর্যোগ শুরু হওয়ায় পুণ্যার্থীদের নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। জানা গিয়েছে, কেদারনাথের বিভিন্ন জায়গায় ১৫০-২০০ পুণ্যার্থী আটকে রয়েছেন। যাঁরা ইতিমধ্যেই কেদারনাথের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন, তাঁদের আপাতত এই যাত্রা স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।কেদারনাথ যাওয়ার পথে বুধবার সন্ধ্যায় ভীমা‍বালিতে বড় ধস নামে। সেই সময় অনেক পুণ্যার্থীই ওই রাস্তা ধরে কেদারনাথের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন তাঁরা। নিরাপত্তার কারণে কেদারনাথ যাওয়ার ওই রাস্তা আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং পুলিশের তরফে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করে ধসপ্রবণ এলাকাগুলি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ধস নামায় টিহরীতে একটি পরিবারের বেশ কয়েক জন সদস্য নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
 
অন্য দিকে, হরিদ্বারে কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বহু গাড়ি জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। চামোলিতে এক মহিলা এবং শিশু নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের খোঁজ চালাচ্ছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ভারী বৃষ্টির জেরে গঙ্গা এবং মন্দাকিনীর জলস্তর বেড়েছে। কোনও কোনও জায়গায় বসতি এলাকাতেও ঢুকে পড়েছে গঙ্গার জল। আলমোড়াতে একটি সেতু জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। তিনি বুধবারই উদ্ধারকারী দলগুলির সঙ্গে রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃষ্টি আর ধসের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পিথোরাগড়-তাওয়াঘাট জাতীয় সড়ক। এ ছাড়াও ধসের কারণে বন্ধ রুদ্রপ্রয়াগ, বাদেশ্বর, চম্পাবত এবং টিহরী জেলার বহু রাস্তা।
 
অন্যদিকে হিমাচল প্রদেশের শিমলা ও মান্ডিতেও মেঘভাঙা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। প্রকৃতির রোষে উত্তরের এই পাহাড়ি রাজ্য। হিমাচলেও ভারী বৃষ্টির জেরে বহু জায়গায় ধস নেমেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে মান্ডির থালতুখড় এলাকায় মেঘভাঙা বৃষ্টিতে অন্তত ৯ জন নিখোঁজ বলে প্রাথমিক ভাবে জানা যাচ্ছে। মৃত্যু হয়েছে এক জনের। শিমলা জেলার রামপুরের কাছে সামেজখড় এলাকাতেও মেঘভাঙা বৃষ্টিতে নিখোঁজ অন্তত ১৯ জন। তাঁদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।
 
মেঘভাঙা বৃষ্টি আর ধসে বিপর্যস্ত হিমাচল প্রদেশের শিমলা, মান্ডি এবং কুলু জেলা। বহু ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ধসের কবলে পড়ে ভেঙে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের ওই তিন জেলায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ ৫৩ জন। পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ কুলু এবং মান্ডির। ওই দুই জেলায় সমস্ত স্কুল এবং কলেজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।কুলুতে ভারী বৃষ্টির জেরে বিপদসীমা ছুঁয়ে ফেলেছে বিপাশা নদী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে নদী। কুলুতে বিপাশা নদী কুলু-মানালি জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বইছে। জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে বিপাশার জলের স্রোতের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে নদীর জল বইছে। রাস্তার কোথাও কোথাও তার জেরে ধস নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে ৩ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
 
বুধবার রাত থেকেই কুলুতে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এই জেলার তিরমন্ডের বাগীপুল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বাগীপুলে মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে ধস নামায় ৯টি বাড়ি চাপা পড়ে গিয়েছে। তার মধ্যে একটি বাড়ির গোটা পরিবার জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। তিন জেলার মধ্যে যাঁরা নিখোঁজ হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ২০ জন শিমলার। শিমলার সামেজ খাড়ে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়।