উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলে মেঘভাঙা ‍বৃষ্টি, হড়পা ‍বানের সতর্কতা উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে সেনা

 দেরাদুন ও সিমলা, ২ অগাস্ট – প্র‍বল বৃষ্টির কারণে এখনও পর্যন্ত হরিদ্বার, দেরাদুন, তেহরি, রুদ্রপ্রয়াগ এবং নৈনিতালসহ উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশ মিলিয়ে ৩৩ জনের মৃত্যু সংবাদ মিলেছে। ৫০ জন নিখোঁজ বলে সর্বশেষ খবরে জানা গিয়েছে।  বুধবার রাতে মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে কেদারের লিনচোলি এবং ভীমবলীর মাঝে হাঁটাপথে প্রায় ২ হাজার তীর্থযাত্রী আটকে পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। বিমানবাহিনীর চিনুক এবং এমআই ১৭ হেলিকপ্টার আটকে পড়া পুণ্যার্থীদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসার কাজে নেমেছে। এ পর্যন্ত ৪৫০ জনকে সোনপ্রয়াগে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। নদীগুলি বৃষ্টির জলে ফুসতে থাকায় তাতে বান ডাকতে পারে। আর তা ঘটলে পাহাড়ে ব্যাপক ধস নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত হিমাচলে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৭।
 
আবহাওয়া দফতর শুক্রবার ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে। আবহাওয়ার সতর্ক‍বার্তা থাকায় কেদার যাত্রাপথের দিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। কারণ, এভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলে ফের ধস, হড়পা বান নামতে পারে।  নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে আগাম সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সরাসরি রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
 
উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে আটকে গেলেন ‍বহু পুণ্যার্থী। বেশ কিছু জেলা প্র‍বল ‍বর্ষণ আর ধসে বিপর্যস্ত।  উত্তরাখণ্ড পুলিশসূত্রে খ‍বর, কেদারনাথের পথে ভীমাবলীতে বুধবার মেঘভাঙা বৃষ্টি আর ধসের কারণে আটকে থাকা ৭৩৭ জন পুণ্যার্থীকে বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টারে করে উদ্ধার করে সোনপ্রয়াগে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও যে সব পুণ্যার্থী আটকে রয়েছেন, তাঁদের উদ্ধারের কাজ চলছে। উত্তরাখণ্ড রাজ্য পুলিশের ডিজি অভিনব কুমার জানিয়েছেন, ভারী বৃষ্টির মধ্যেও উদ্ধারকাজ চালানো হচ্ছে। পুণ্যার্থী এবং পর্যটকদের কাছে আবেদন করা হয়েছে, তাঁরা যেন এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কোনও রকম ঝুঁকি না নেন।
 
উত্তরাখণ্ডে এখনও পর্যন্ত ২৬৭০ জনকে উদ্ধার করে সোনপ্রয়াগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী , রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী , জেলা পুলিশ এবং প্রশাসন।  বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টির জেরে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রুদ্রপ্রয়াগ। বহু রাস্তা ভেঙে গিয়েছে, কোথাও ধস নেমেছে। পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই শনিবার পর্যন্ত কেদারনাথ যাত্রা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিজি। কেদারের পথে ধসপ্রবণ এলাকাগুলিতে পুণ্যার্থীরা কোথাও আটকে রয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
 
এনডিআরএফের ১২টি এবং এসডিআরএফের ৬০টি দল উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। সংবাদ সংস্থাকে ডিজি জানিয়েছেন, টিহরী এবং রুদ্রপ্রয়াগে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। রাজ্য আবহাওয়া দফতর থেকে সতর্ক করা হয়েছে আরও ৪৮ ঘণ্টা ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হবে এই দুই জেলায়।  আবহাওয়া দফতরের সেই সতর্কবার্তা পেয়েই পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, এসডিআরএফ এবং এনডিআরএফ মোতায়েন করা হয়েছে। কেদারনাথে আটকে থাকা ১০০০ পুণ্যার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও কেদারনাথে যাওয়ার পথে আটকে পড়া সাতশোরও বেশি পুণ্যার্থীকে উদ্ধার করা হয়। কেদারনাথ এবং যমুনোত্রীর ট্রেকিং করার পথও আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।
 
আকাশপথে কেদারের দুর্গত এলাকা দেখতে যান উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি। হিমাচলের সিমলায় ৩, মান্ডিতে ৩ এবং কুলুতে একজনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। কুলুর একটি বাঁধের অবস্থা খারাপ হলেও পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে। হিমাচলপ্রদেশের চার জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
 
তার মধ্যেই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রাজ্যের লাহুল স্পীতি এলাকা। জানা গিয়েছে, রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের তীব্রতা ৩.২। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আধিকারিক করম সিং বলেন, ‘মেঘ ভাঙা বৃষ্টির জেরে ২০ থেকে ২৫টি বাড়ি ভেঙে পড়ে। ৪০-৪২ জন নদীতে ভেসে যান। ভারতীয় সেনা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়।
 

হিমাচলপ্রদেশের আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঝড়বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে।  কিন্নর, লাহুল ও স্পীতি ছাড়া বাকি সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ সহ ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা রয়েছে। সিমলা, কুলু, সোলান, সিরমোর ও কিন্নর জেলায় হড়পা বান ও ধস নামার সম্ভাবনার বিষয়েও সতর্ক করেছে আবহাওয়া দফতর।