দিল্লি, ১০ জুন– সবে মোদি ৩.০ মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে৷ ৭২ জন শপথ নিলেও কে কোন মন্ত্রীত্ব পাচ্ছেন তা এখনও ঠিক হয়নি৷ তবে ইতিমধ্যেই স্পিকার পদ নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন৷ এনডিএর শরিক চন্দ্রবাবু নাইডু থেকে শুরু করে একাধিক দলের তরফে স্পিকার পদ পেতে ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়েছে৷ যদিও স্পিকার পদের দৌড়ে নাছোড়বান্দা রয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু৷ লোকসভার স্পিকার পদ ছাড়তে নারাজ চন্দ্রবাব৷
এবারের মোদি সরকার অনেক ক্ষেত্রেই এনডিএ শরিকদের কাঁধে ভর দিয়ে চালাতে হবে৷ ক্যাবিনেট পর্যায় ও প্রতিমন্ত্রী নির্বাচন যেনতেন ভাবে করে ফেললেও অষ্টাদশ লোকসভার অধ্যক্ষ বা চলিত কথায় স্পিকার নিয়েই এখন যত মাথাব্যাথা মোদির৷ কারণ, লোকসভার স্পিকার পদটি শুধু গুরুত্বের ক্ষেত্রেই নয়, ক্ষমতার পরিধিতেও অনেক বিস্তৃত৷ তবে এবার এই পদটি দাবিদার অন্য কেউ হবে নাকি শেষপর্যন্ত বিজেপির ওম বিড়লার হাতেই থাকবে তাই এখন দেখার৷
রাজধানীর অন্দর মহলে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে যে, এন চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি স্পিকার পদের জন্য নাছোড়বান্দা৷ বিজেপি নেতৃত্ব সহ মোদির কাছেও তারা জানিয়ে দিয়েছে স্পিকার পদ ছাড়াছাডি় নেই৷ তবে এখানেও একটা প্রশ্ন রয়েছে, দেশম পার্টি স্পিকার পদে দাবি জানালেও কাকে করা হবে সেই মুখ? বিশেষত ১৬ জন এমপির মধ্যে অধিকাংশই নতুন মুখ৷ সূত্রে জানা গিয়েছে, এনডিএ এবং শেষপর্যন্ত বিজেপি যদি সত্যিই টিডিপিকে স্পিকার পদ ছাডে় তাহলে চন্দ্রবাবু নাইডু তাঁর বিশ্বস্ত রামমোহন নাইডুকে বেছে নিতে পারেন৷ রামমোহন এই নিয়ে পরপর তিনবার লোকসভা ভোটে জিতলেন৷ তিনি হিন্দি এবং ইংরেজিতে প্রাঞ্জল ভাষণ দিতে পারেন৷ আবার প্রথমবার নির্বাচিত হলেও গুন্টুরের এমপি পেম্মাসানি চন্দ্রশেখরকেও তাঁর যোগ্যতা অনুসারে বাছাই করতে পারে দল৷
এদিকে বিজেপির স্পিকার পদের মুখ হিসেবে প্রথম পছন্দ দগ্গুবতী পুরন্দেশ্বরী৷ যিনি ২০২৩ সাল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ বিজেপির সভাপতি৷ এমনকী তেলেগু দেশম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এনটিআর-এর কন্যা তিনি৷ একটা সময়ে চন্দ্রবাবুর সঙ্গে চরম শত্রুতা থাকলেও ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে টিডিপি ও জনসেনার সঙ্গে বিজেপির জোটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন দগ্গুবতী৷ এতদিন অন্ধ্রে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা বিজেপিকে এই অসম্ভব সাফল্য এনে দেওয়ায় বিজেপির সভাপতি দগ্গুবতীকে পুরস্কৃত করতে চাইছেন মোদি-শাহরা৷ এবার অন্ধ্র থেকে এনডিএ পেয়েছে ২১ জন সাংসদ৷ যার মধ্যে ১৬জন টিডিপির৷ বিধানসভা নির্বাচনেও এখানে ১৬৪ আসন জিতে এনডিএ সরকার হচ্ছে সেখানেও৷
অন্যদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিহারের নীতীশ কুমারের দল মন্ত্রিত্ব ছাড়াও ওঁত পেতে রয়েছে স্পিকার পদের দিকে৷ যদিও বিজেপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, লোকসভার অধ্যক্ষ পদ তারা ছাড়বে না৷ সংবিধান অনুসারে লোকসভার প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি একজনকে প্রোটেম স্পিকার হিসেবে কাজ চালানোর নির্দেশ দেন৷ তিনিই সমস্ত এমপিকে শপথবাক্য পাঠ করান৷ তারপর সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় একজনকে স্পিকার নির্বাচন করা হয়৷ যেমন গত দুই লোকসভায় বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সুমিত্রা মহাজন এবং ওম বিড়লা স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ এবার কিন্ত্ত পরিস্থিতিতে খানিক বদল এসেছে৷ কারণ, ২৭২ পার করতে হলে এনডিএ শরিকদের কাছে হাত পেতে ভোট চাইতে হবে বিজেপিকে৷ লোকসভার স্পিকার পদের দিকে সকলের নজর কেন? আসলে এই পদটি একটি কৌশলী ক্ষমতা৷ লোকসভা পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব ও নিয়ন্ত্রণ থাকে স্পিকারের হাতে৷ অধ্যক্ষকে হতে হয় নিরপেক্ষ ও দলমতনির্বিশেষে সমমনোভাবাপন্ন৷ কিন্ত্ত, নিম্নকক্ষে কোন দল কতক্ষণ বলার সুযোগ পাবে, বা কাকে কীভাবে পরিচালনা করতে হবে এরকম বেশ কয়েকটি নিরঙ্কুশ ক্ষমতা অধ্যক্ষ পদের হাতে আছে৷
সাম্প্রতিক কয়েকটি রাজ্যে দেখা গিয়েছে, শাসকদলের মধ্যে বিদ্রোহ ঘটিয়ে দল ভাঙানোর খেলা হয়েছে৷ এন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং নীতীশ কুমার যেহেতু দীর্ঘদিন রাজনীতি করে চুল পাকিয়েছেন, তাই একপ্রকার নিজেদের স্থায়িত্ব বনায় করিয়ে রাখতে স্পিকার পদের বায়না ধরেছেন৷ কারণ, দলত্যাগ বিরোধী আইন প্রয়োগের একচ্ছত্র ক্ষমতা রয়েছে স্পিকারের হাতে৷ চেয়ারম্যান অথবা স্পিকারের হাতেই নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রয়েছে দলত্যাগের আইন প্রয়োগ করে এমপিদের সদস্যপদ খারিজ করার৷