বিরােধী ও জনগণের তুমুল আপত্তি সত্ত্বেও সংখ্যার জোরে সংসদের উভয় কক্ষেই নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে নরেন্দ্র মােদি সরকার। এই বিল আইনে পরিণত হওয়া এখন এক প্রকার সময়ের অপেক্ষা। তবে এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে এখন সিএবি (ক্যাব)-এর বাধা সুপ্রিম কোর্ট। নাগরিকত্ব বিলকে শীর্ষ আদালতের পরীক্ষার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ (আইইউএমএল)।
নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে এই মুসলিম সংগঠন। পিটিশনে তাদের অভিযােগ, প্রস্তাবিত এই আইন ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্বে অনুমােদন দিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করছে বিরােধীরা ও সংসদে একই দাবিতে সােচ্চার হয়েছিলেন । বলেছিলেন, সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারায় যেখানে আইনের চোখে সবার সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে, সেই ধারাকে লঙ্ঘন করেছে এই বিল।
এই বিল নিয়ে রাজ্যসভায় ভােটাভুটির আগে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম তাঁর বক্তব্য রাখার সময় বলেন, ক্যাব অসাংধািনিক। এবার সেই যুদ্ধ শীর্ষ আদালতে গিয়ে পৌঁছল। অনেক কংগ্রেস নেতাও এই বিলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিংভি বলেন, ‘এই বিলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতে যাওয়াই উচিত বলে আমি মনে করি’। কংগ্রেস কি তাহলে এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে? সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি ষ্ণুেগােপাল বলেন, ‘আমরা সবরকম সম্ভানা খতিয়ে দেখছি’।
বুধবার বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিল রাজ্যসভায় পাশ করিয়ে নেয় কেন্দ্র। প্রায় ৯ ঘণ্টার বিতর্কের পরে ভােটাভুটির জন্য বিলটি পাশ হয়ে যায়। এদিন বিলের পক্ষে ১২৫টি ভােট পড়েছে। অন্যদিকে, বিপক্ষে ভােট দেন ১০৫ জন সাংসদ। যার জেরে এই বিলকে আইনে পরিণত করতে আর কোনও বাধা রইল না মােদি সরকারের। রাষ্ট্রপতির অনুমােদন পেলেই বিলটি আইনে পরিণত হবে। এর আগে বিলটিকে আবার সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানাের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন সিপিএম সাংসদ কে কে রাগেশ। কিন্তু ভােটাভুটিতে সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানাের পক্ষে পড়ে ৯২টি ভােট। অন্যদিকে, বিপক্ষে ১১৩টি পড়ে।
২৩৮ সদস্যের রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু এনডিএ সংসদের উচ্চকক্ষে বিজেপির ৮৩ জন, আকালি দলের ৩ জন, জনতা দল (ইউ)’র ৬ জনের পাশাপাশি এলজেপি এবং আরপিআই(এ)’র একজন করে সদস্য রয়েছেন। আর ১১ মনােনীত সদস্য বিজেপির পক্ষে এই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও রাজ্যসভার বৈতরণী উতরে গিয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিলটি। বিলের পক্ষে ১২৫টি ভােট পড়েছে।
এদিকে, নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাবে জামিয়াত উলেমায়ে হিন্দ। বুধবার এই কথা জানা জামিয়াত নেতারা। তাদের দাবি, এই বিল ভারতের সংবিধান পরিপন্থী। রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হতেই জামিয়াতের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, এই বিল পাশ হওয়া এক দুঃখজনক ঘটনা। জামিয়াত উলেমায়ে হিন্দের নেতা মৌলনা আর্শাদ মাদানি বলেন, ‘এই বিল ভারতের মৌলিক ভিতের বিপরীতের। আমরা এই বিলের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করব। আমাদের সংসদ এই বিষয়ে নিরপেক্ষ ও সৎভাবে কাজ করেনি। তাই আমরা শীর্ষ আদালতে যেতে বাধ্য হব। আমরা ইতিমধ্যেই আমাদের পিটিশনের খসড়া তৈরি শুরু করে দিয়েছি’।
মাদানি আরও বলেন, ‘খুব দুঃখের বিষয় যে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিও খুব দায়িত্বহীনের মতাে কাজ করেছে। আমাদের দেশের সংবিধানের ১৪ ও ১৫ নম্বর দারার পুরােপুরি পরিপন্থী। সেই ধারাগুলিতে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে যে ভারতে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও নাগরিকের সঙ্গে বৈষম্য আচরণ করা হবে না। সবাইকে সমান অধিকারের কথা বলে সেখানে। এটা হিন্দু-মুসলিমের বিষয় না। এটা মৌলিক অধিকারের বিষয়।
এদিকে নাগকিত্ব বিলের প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে দেশের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে অসমে। মােতায়েন করা হয়েছে আধা সেনা। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। বুধবার রাজ্যসভায় এই বিল পাশ হতেই ডিব্রুগড়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সােনােওয়ালের বাড়িতেও হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। ছোড়া হয় পাথর। হামলার আঁচ গিয়ে পড়েছে ডিব্রুগড়ের বিজেপি বিধায়ক প্রশান্ত ফুকন ও বিজেপির ডিব্ৰুগড় জেলা সভাপতি সুভাষ দত্তের বাড়িতেও।
বুধবার দীর্ঘ আট ঘণ্টার আলােচনার পর রাজ্যসভায় পাশ হয় নাগকিত্ব সংশােধনী বিল ২০১৯। পক্ষে ভােট পড়ে ১২৫টি, বিপক্ষে ১০৫টি। এর আগে সােমবার লােকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে পাশ করে এই বিল। এদিকে বিল পাশ নিজেদের খুশি জাত্মি করেন পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু শরণার্থীরা। বুধবার এই বিল পাশ হতেই রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়ে দেন বাংলা সহ সারা দেশে নাগরিকত্ব বিল ও এনআরসি চালু হবে।