‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক স্লোগান : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Photo: IANS)

নিজস্ব প্রতিনিধি –  মঙ্গলবার দেশের ২৫ লক্ষ চৌকিদারের (নিরাপত্তাকর্মী) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলাপচারিতা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাহুল গান্ধীর ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের জন্য তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তিতে দুর্নীতি হয়েছে এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান জনপ্রিয় করে তুলেছেন রাহুল। এটা যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের অন্যতম হাতিয়ার, সেটা প্রতিটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির প্রচারের মুখ্য হাতিয়ার ছিল ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান’। পরে প্রধানমন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর মোদি নিজেকে দেশের ‘চৌকিদার’  হিসেবে দেশের সামনে তুলে ধরেন। সেই চৌকিদার শব্দকে ব্যবহার করে কংগ্রেস রাফায়েল কেলেঙ্কারিতে  প্রধানমন্ত্রীকে অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁর করায় এবং’ চৌকিদার চোর হ্যায়’ বলে স্লোগান তোলে। কংগ্রেসের এই আক্রমণের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিজেপি’র প্রচারের জন্য চৌকিদার শব্দটা সদর্থক ভাবে ব্যবহার করে ট্যুইটারে নিজের অ্যাকাউন্টের নামের আগে চৌকিদার শব্দটা জুড়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুকরণ করতে গিয়ে নিজেদের নামের আগে চৌকিদার শব্দটা যোগ করেন বিজেপির প্রথম সারির মন্ত্রীরাও। এবার প্রধানমন্ত্রীর স্লোগান ওঠে, ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ এবং এই স্লোগানকে হাতিয়ার করে নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলতে চায় বিজেপি। কিন্তু এর ফলে কতটা লাভ তুলতে পারবে বিজেপি, তা নিয়ে খোদ সংশয় রয়েছে বিজেপির মন্তব্যেই। এদিন দেশের পেশাদার চৌকিদারের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্বে মোদি প্রথমেই ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানের জন্য ক্ষমা চেয়ে নেন তাদের কাছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধীরা চৌকিদারদের চোর বলে অপবাদ দিচ্ছে। আপনাদের মত আমরও কাজ প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টা সতর্ক প্রহরায় থাকা। বিজেপি’র তরফে বলা হয়েছে এই শ্লোগান নাকি খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, যা মানতে নারাজ বিরোধীরা।  তাদের বক্তব্য, ‘সত্যিকারের সমস্যা থেকে মানুষের নজর ঘুরিয়ে দিতে এইসব করছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের সামনে ইস্যু যেখানে কর্মহীনতা, বেকারি, কৃষকদের সমস্যা, সেখানে এই নাটকীয় ভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রী ‘ম্যায় ভি চৌকিদার’ স্লোগান আওড়াচ্ছেন। রাহুল গান্ধী বলেছেন, চোর হলেন মোদি, উনি তাঁর দায়টা অন্যের ঘাড়ে চাপাচ্ছেন কেন? প্রধানমন্ত্রীর মতে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগান দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক।

আরও একবার ব্লগ লিখে কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি লিখেছেন, ২০১৪ সালে দেশের মানুষ পরিবারতন্ত্রকে পরাজিত করে সততার পক্ষে রায় দিয়েছিল। তাঁর দাবি, কংগ্রেসে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র বলে কিছু নেই। কোনও নেতা যদি কংগ্রেসকে নেতৃত্ব দিতে চান, তাহলে তাকে দল ছেড়ে দিতে বাধ্য করা হয়। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, কংগ্রেস নেতারা আইনের পরোয়া করেন না। কোনও একটি ব্যাপারে তাদেরকে তদন্ত সংস্থা প্রশ্ন করলে কংগ্রেস সেগুলির জবাব দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রসঙ্গ টেনে আনেন মোদি।


তিনি বলেন, ইন্দিরা চেয়েছিলেন আইন ব্যবস্থা সংবিধানের জায়গায় একটি বিশেষ পরিবারের প্রতি অনুগত্য দেখাক। কংগ্রেসের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মোদি সরকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংগ্রেসের সময় ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কাউন্সিল নামে একটি সংস্থার পথ চলা শুরু হয়। সেটির ক্ষমতা প্রায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মতো। আর এই কংগ্রেসই সাংবিধানিক সংস্থার গরিমা নিয়ে মন্তব্য করে। আক্রমণ শানান  কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর উদ্দেশ্যও। ২০১৩ সালে তৎকালীন মনমোহন সিং সরকার একটি অর্ডিন্যান্স নিয়ে আসে। তাতে বিভিন্ন মামলায় দোষী সাব্যস্তদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা সহ কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ ছিল। সেই অর্ডিন্যান্সটি  সাংবাদিকদের সামনে ছিড়ে ফেলেন রাহুল। এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে মোদী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া নীতিগত সিদ্ধান্ত সাংবাদিক সম্মেলন এমন একজন  ছিড়ে ফেলেছিলেন,  যিনি মন্ত্রিসভার সদস্যই ছিলেন না।

নিজের ব্লগটিকে ট্যুইটারে পোস্ট করেন মোদি। পাল্টা ট্যুইট করে তাকে আক্রমণ করেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তিনি লেখেন, বিজেপি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে দুর্বল করছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে বোকা ভাবা বন্ধ করুন।