বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে যে আইন রয়েছে তাতে বেশ কিছু খামতি রয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দেশের শীর্ষ আদালতের। বাল্যবিবাহ রোধের আইনে বেশ কিছু বদল আনা দরকার বলেও পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের। শুক্রবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ আইনের সেই খামতিগুলি দূর করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রকে। শুক্রবার শুনানি শেষে এই বিষয়ে জারি করা হয় গাইডলাইনও। ব্যক্তিগত আইন দ্বারা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধকে ক্ষুন্ন করা যাবে না বলে জানিয়ে দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ে দেওয়ার অর্থ হল, স্বাধীনভাবে তাদের জীবনসঙ্গী নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নেওয়া। তাই ধর্মীয় বাধানিষেধ থেকে বাল্যবিবাহকে মুক্তি দিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে সব সম্প্রদায়কে। রায়ে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, পার্সোনাল ল বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের উপরে নয়। কারণ নাবালক-নাবালিকার বিয়ের অর্থ, তাদের জীবনসঙ্গী নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নেওয়া। তবে এর মধ্যে আইনের ফাঁক রয়েছে বলেও আদালত স্বীকার করে।
আদালত আইনকে সর্বাঙ্গীনভাবে কাজে লাগাতে একটি নির্দেশিকা রূপায়ণের উপরও জোর দিয়েছে।অপ্রাপ্তবয়স্কদের পছন্দমতো বিয়ে করার অধিকারের যুক্তি দিয়ে কখনওই বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন লঙ্ঘন মেনে নেওয়া যেতে পারে না বলে শুক্রবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ বলেছে, ‘‘অপ্রাপ্তবয়স্কদের পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার ইচ্ছা আইনের পথে অন্তরায় হতে পারে না। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনের পথ রোধ করতে পারে না ব্যক্তি অধিকারের আইন।’’
দেশের অঙ্গ রাজ্যগুলিতে বাল্যবিবাহ রোধের আইনের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে না বলে মামলা দায়ের করে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চে। রাজ্যগুলিতে বাল্যবিবাহের ঘটনা বেড়েই চলেছে বলে উষ্মা প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। রাজ্য প্রশাসনকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে বলে জানায় বেঞ্চ। বাল্যবিবাহ রোধের আইনের লঙ্ঘন হলে তার উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। মোটা অঙ্কের জরিমানাও ধার্য করা যেতে পারে।
এদিন তিন বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, পৃথকভাবে প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের আইন নিয়ে অবগত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক অধিকারিকদেরও এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সামগ্রিকভাবে জনগোষ্ঠী সচেতন হলে তবেই বাল্যবিবাহের্ মতো ঘটনা রোধ করা সম্ভব।১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইনটির নানা ধারা ২০০৬ সালে সংশোধন করা হলেও এখনও কিছু ফাঁক থেকে গিয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে।বাল্যবিবাহ রোধে কাউন্সেলিংয়ের উপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি জানান, সমাজের প্রান্তিক এলাকাগুলিতে বা যেখানে শিক্ষার অভাব রয়েছে , সেইসব জায়গাগুলিতে বিশেষ করে নাবালিকাদের কাউন্সেলিং করতে হবে। একইসঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সচেতনতা অভিযান, অপরাধের গুরুত্ব ও কড়া শাস্তির বিধান সম্পর্কে সবাইকে অবগত করার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।