সােমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এই নিয়ে পঞ্চমবার ভিডিও কনফারেন্সে দেশের সমস্ত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে করােনা সংক্রমণ এবং সঠিক পথে দেশে অর্থনৈতিক কাজকর্ম কীভাবে শুরু করা যায় তার কৌশল ঠিক করতে বৈটকে মিলিত হলেন। দেশব্যাপী ৫৪ দিনের লকডাউন এখন প্রায় শেষের মুখে, তাই এই বৈঠকর দিকে নজর ছিল সারা দেশের। মানুষ উদগ্রীব হয়ে জানতে চাইছেন আগামী ১৭ মে তারিখের পর লকডাউন থাকবে, না উঠে যাবে অথবা থাকলেও কী কী ছাড় দেবে সরকার।
মারণ করােনা ভাইরাসের আতঙ্কের প্রেক্ষিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের শহরাঞ্চল থেকে নিজ নিজ রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ফেরা এবং অচল অর্থনীতিকে ফের সচল করার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলােচনা হয় মুখ্যমন্ত্রীদের। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন।
৬ ঘণ্টা ধরে চলা এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীরা করােনা ভাইরাসের সংক্রমণের আবহে চলা লকডাউন এবং শ্লথ অর্থনীতিকে কীভাবে সচল করা যায়, সে বিষয়ে নিজেদের পক্ষ রাখেন।
বৈঠকে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও যাত্রী ট্রেন পরিষেবা বহাল করার সিদ্ধান্তের বিরােধিতা করেন। তিনি বলেন, দেশের মেট্রো শহরগুলি রেড জোনের আওতায় রয়েছে। সেই শহরগুলিতে ট্রেন আসা যাওয়া করলে করােনা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি জানান, হায়দ্রাবাদের এক ওষুধ সংস্থা করােনার প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারের চেষ্টায় আছে। জুলাই-আগস্ট মাসে সেটা বাস্তবে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এখনই লকডাউন তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। বাইরে থেকে লােকজনের আসা যাওয়ার ফলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পালানিস্বামী প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাঁর রাজ্যে যেন অবিলম্বে আরটি-পিসি আর পরীক্ষার জন্য কিট পাঠানাে হয়, কেন্দ্রকে তিনি মেডিকেল সরঞ্জাম কেনার জন্য ৩ হাজার কোটি টাকা দিতে বলেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য তিনি আরও ২৫০০ কোটি টাকা দাবি করেন।
তিনি আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ট্রেন এবং বিমন চালানোর বিরােধিতা করেন। তিনি কেন্দ্রের কাছে ২০১৯-২০ সালে তাঁর রাজ্যে বরাদ্দ অর্থের তুলনায় ২০২০-২১ সালে ৩৩ শতাংশ বেশি অর্থ বরাদ্দ করার দাবি জানান। তিনি বকেয়া জিএসটি’র ক্ষতিপূরণের অর্থ এবং ২০২০-২১ সালে অর্থ কমিশনের বরাদ্দ ৫০ শতাংশ অর্থও দিতে বলেন কেন্দ্রকে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রীকে দিল্লির কনটেনমেন্ট জোন বাদ দিয়ে সমস্ত জায়গায় অর্থনৈতিক গতিবিধি শুরু করার আবেদন জানান। তিনি বলেন, দিল্লি লকডাউন তুলে দিতে প্রস্তুত।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমােহন রেড্ডি বলেন, কৃষিবাজার অবিলম্বে খুলে দেওয়া উচিত। গণ পরিবহন সমস্ত সতর্কতা মেনে চালানাে যেতে পারে। দোকানপাট ও বাজারগুলিও এই শর্তে খােলার অনুমতি দেওয়া হােক।
ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল বলেন, আর্থিক কার্যকলাপ শুরু করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ও অধিকার দেওয়া হোক সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং লকডাউন এখনই তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নন, তবে তিনি চান মানুষকে সুরাহা দিতে সঠিক কৌশল তৈরি করা দরকার। মানুষকে আর্থিক সুবিধা না দিলে তারা বিপাকে পড়বে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সােনেওয়ালের প্রামর্শ লকডাউন ১৭ মে’র পরেও দু’সপ্তাহ বলবৎ থাকুক।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেন, ট্রেন, বিমান, সড়ক পরিবহন চালু করা যেতে পারে, কিন্তু সতর্কতা বজায় রেখে। তিনি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আর্থিক প্যাকেজের দাবি করেন।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেন, করােনা সংক্রমণ মে, জুন এবং জুলাই মাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তা ছাড়া ‘হু’ (ডব্লিউএইচও) ও এ ব্যাপারে সতর্ক করেছে। এই প্রেক্ষিতে
লকডাউন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে গেলে বিশেষ ভাবনাচিন্তা করা দরকার। তিনি বলেন, মুম্বইয়ে তিনি মেট্রো ট্রেন চালানাের পক্ষপাতী কিন্তু শুধু বিশেষ পরিষেবার জন্য।
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি বলেন,
১) করােনা মােকাবিলায় ভারতের যাবতীয় প্রয়ােগের প্রশংসা করেছে গােটা বিশ্ব। মােদিও রাজ্যগুলির প্রশংসা করেন যে তারা করােনা মােকাবিলায় ভালাে কাজ করেছে। এবার যৌথভাবে করােনা মােকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে আরও সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে।
২) প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহু রাজ্যে গত কয়েক সপ্তাহে আর্থিক গতিবিধি শুরু হয়েছে, আসছে দিনে এটি আরও ত্বরান্বিত হবে।
৩) প্রধানমন্ত্রী বলেন, করােনা মােকাবিলায় আমাদের আরও ফোকাস করতে হবে।
৪) তা ছাড়া আমাদের যেভাবে হােক সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই কাজ করতে হবে আগামী দিনে। দু গজের দূরত্ব’কে মন্ত্র করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, গ্রামীণ ভারতকে যে কোনও উপায়ে করােনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে হবে।