তারিখটা ছিল ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট। চাঁদের মাটিতে সেদিন ইতিহাস গড়েছিল ভারতের চন্দ্রযান-৩। পরে চাঁদে সূর্য ডুবেছে। শক্তি হারিয়ে আপাতত ঘুমের দেশে রয়েছে চন্দ্রযান-৩। চাঁদের ঠিক কোথায় ঘুমিয়ে রয়েছে? কী তার বর্তমান অবস্থা? সেই ছবিই ধরা পড়ল রোভার প্রজ্ঞানের ক্যামেরায়।
চাঁদের প্রাচীনতম গর্তগুলির মধ্যেই একটিতে নেমেছিল চন্দ্রযান-৩। এবার প্রজ্ঞানের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করেই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ভারতের মহাকাশযান চাঁদের প্রাচীনতম গর্তগুলির মধ্যে যে গর্তটিতে ল্যান্ড করেছে সেখানে এর আগে কোনও মহাকাশযানই পৌঁছতে পারেনি। আনুমানিক ৩৮৫ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়ার সেই গর্তেই আজ ঘুমিয়ে রয়েছে চন্দ্রযান-৩।
প্রজ্ঞানের পাঠানো যাবতীয় ছবি বিশ্লেষণের দায়িত্বে আহমেদাবাদে ইসরোর ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সেই ছবির সম্পর্কেই বিস্তারিত ব্যাখ্য়া দেন তাঁরা। বলেন, ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট চাঁদের যে গর্তে চন্দ্রযান-৩ অবতরণ করে সেখানেই রয়েছে রোভার প্রজ্ঞান। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে নেকটারিয়ান যুগে এই বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়। এর আগে চাঁদের এই প্রাচীনতম অংশে কোনও অভিযানই সফল হয়নি।
এ বিষয়ে ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক সহকারী অধ্যাপক জানান, চন্দ্রযান-৩ যেখানে অবতরণ করে তার একটি বিশেষ ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ওই অংশে আগে কখনও কোনও অভিযান হয়নি। গর্তটি যে বহু প্রাচীন তা প্রজ্ঞানের পাঠানো ছবিতেই স্পষ্ট। তিনি আরও বলেন, মহাকাশে কোনও গ্রহ বা উপগ্রহে যদি গ্রহাণু ধাক্কা মারে তাহলে সেখানে গর্ত তৈরি হয়। এই গর্তগুলিকে বলা হয়, ‘ক্রেটার’। সেরকমই একটি ক্রেটারে নেমেছিল চন্দ্রযান-৩। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অর্ধবৃত্তাকার ওই গর্তটির বিস্তৃতি প্রায় ১৬০ কিলোমিটার।
আজ থেকে এক বছরেরও বেশি সময় আগে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে এই গর্তেই পাখির পালকের মতো অবতরণ করে ইসরোর তৈরি চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। পেট থেকে বেরিয়েছিল রোভার প্রজ্ঞান। টানা এক সপ্তাহ চাঁদের মাটিতেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তথ্য সংগ্রহ করে পৃথিবীতে পাঠায় রোভার। পরে চাঁদে সূর্য ডুবে যাওয়ায় শক্তি ফুরিয়ে যায় চন্দ্রযান-৩-এর। এর পর থেকে চাঁদের মাটিতেই নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান। তার আগে রোভারের ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল চাঁদের বহু ছবি। সেগুলি নিয়ে এখনও চলছে গবেষণা-বিশ্লেষণ।