গেরুয়া সন্ত্রাস কাটিয়ে আস্থা ভোটে জয়ী হলেন চম্পাই সোরেন

রাঁচি, ৫ ফেব্রুয়ারি: অবশেষে ঝাড়খন্ড বিধানসভায় আস্থা ভোটে বিপুলভাবে জয়ী হলেন জেএমএম নেতা চম্পাই সোরেন। গেরুয়া শিবিরের সমস্ত বাধা কাটিয়ে ৪৭ জন বিধায়কের সমর্থন পেলেন তিনি। তাঁকে ভোট দিতে ইডি হেফাজতে থাকা জেএমএম প্রধান হেমন্ত সোরেনও আজ ঝাড়খন্ড বিধানসভায় হাজির হন। অন্যদিকে আজ আস্থা ভোটে গেরুয়া পায় মাত্র ২৯টি ভোট।

প্রসঙ্গত ৮১ আসনের ঝাড়খন্ড বিধানসভার পক্ষ ও বিপক্ষে মোট ভোট পড়ে ৭৬টি। একটি বিধায়ক পদ বর্তমানে শূণ্য আছে। বাকি চারজন বিধায়ক এই আস্থা ভোটে অনুপস্থিত ছিলেন বলে সূত্রের খবর। চম্পাই সোরেনকে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪১টি ভোট। তিনি ম্যাজিক ফিগার টপকে আরও ৬টি ভোট বেশি পেয়েছেন। এদিন চম্পাইয়ের এই জয়ের মাধ্যমে জেএমএম প্রধান হেমন্ত সোরেনেরও নৈতিক জয় হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

যদিও রাজ্যের প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী ও আজসু পার্টির সভাপতি সুদেশ মাহাতো নবগঠিত চম্পাই সরকারের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, দুর্নীতি প্রসঙ্গে কোনও জবাব দিচ্ছে না চম্পাই সরকার। তিনি বলেন, “আস্থা ভোট হয় বিধায়কদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ওপর, প্রশ্নের ভিত্তিতে নয়। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হল সেব্যাপারে কোনও জবাব দিচ্ছে না। সরকার দুর্নীতি প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ নীরব।”


হেমন্ত সোরেনের পদত্যাগের পর বিহারের মতো ঝাড়খণ্ডেও সরকার ফেলে দেওয়ার জল্পনা তীব্র হতে থাকে রাজনৈতিক মহলে। বিশেষ করে, চম্পাই সোরেন জেএমএম বিধায়কদের নেতা হিসেবে রাজ্যপালের কাছে সরকার গঠনের দাবি জানালেও প্রথমে গড়িমসি করেন রাজ্যপাল সিপি রাধাকৃষ্ণণ। যার ফলে সেই আশঙ্কা আরও তীব্র হয়। শেষে সাংবিধানিক সঙ্কটের মুখে পড়ে চম্পাইকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানান রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রী পদে চম্পাই শপথ গ্রহণ করেন। মন্ত্রী হিসেবে তাঁর সঙ্গে শপথ নেন আরও দুই জন বিধায়ক। তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ১০ দিন সময় দেন রাজ্যপাল।

ইন্ডিয়া ব্লকের সেই জেএমএম-কংগ্রেস-আরজেডি জোট সরকারের আজ ছিল আস্থা ভোট। দল ভাঙানোর নানা আশঙ্কার মধ্যে শেষমেশ সেই আস্থা ভোটে জয়ী হলেন চম্পাই সোরেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে চম্পাইয়ের সমর্থনে ভোট দিতে বিধানসভায় আসেন ইডি হেফাজতে থাকা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তিনি আস্থা ভোটের আগে আজ বিধানসভায় একটি বক্তব্য রাখেন। সেই বক্তৃতায় বিস্ফোরক অভিযোগ করেন হেমন্ত সোরেন। তাঁর গ্রেপ্তারিকে গণতন্ত্রের কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করেন তিনি। এজন্য তিনি নাম না করে রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন। তাঁর গ্রেপ্তারির পিছনে রাজভবন জড়িত থাকার অভিযোগ করেন।

উল্লেখ্য, গেরুয়া শিবিরের দল ভাঙানোর খেলায় বিধায়করা বিক্রি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সেই আশঙ্কা থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণের পরপরই ইন্ডিয়া ব্লকের বিধায়কদের হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি। আজ আস্থা ভোট উপলক্ষে তাঁদের রাঁচিতে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর রাঁচির রিসর্ট থেকে কড়া পাহারায় বাসে করে বিধানসভায় নিয়ে আসা হয়।