অভিবাসী শ্রমিক বা আর্থিক প্যাকেজ নিয়ে দু’মাসের ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ কেন্দ্রের

প্রতিকি ছবি (File Photo by Arun SANKAR / AFP)

দু’দফার লকডাউন শেষে শুরু হয়েছে তৃতীয় দফা। এই দফায় সারা দেশের নানা পরিষেবায় কেশ কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে নিয়ম মানার শর্তে। এখন থেকে শুরু করে আগামী দুটো মাসই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই দু’মাসেই মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে যাবে, দেশের করোনা পরিস্থিতি কোথায় পৌছচ্ছে। আর সে কথা মাথায় রেখেই বড় প্রস্তুতি ও বিস্তারিত পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রও। শোনা গেছে, এই প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

সুত্রের খবর, কেন্দ্র সরকারের সব ক’টি মন্ত্রকের সমস্ত দফতরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, লকডাউন শুরুর আগে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত তারা কীকাজ করেছে। তার তালিকা তৈরি করে রাখতে। লকডাউনের সময়ে কোন কোন কাজ হয়েছে, তার তালিকাও প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। তাই দেখে নির্ধারণ হবে আসন্ন কাজের গতিপ্রকৃতি। আগামী দু’মাসের কাজের একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।

লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বহু সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে সরকারকে। জানা গেছে, লকডাউন চলাকালীন প্রশাসনের কী কী খামতি থেকে গেছে, কোথায় কোথায় প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থেকে গেছে, তাও পর্যালোচনা করে দেখা হবে আসন্ন কাজের পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে।


এক আধিকারিকের কথায়, লকডাউন ছাড়া অন্য বিকল্প ছিল না সরকারের। ছিল না প্রস্তুতি বা পরিকল্পনা করার পর্যাপ্ত সময়ও। ফলে লকডাউন সফল করতে এমন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা সফল করা যায়নি। সরকার মনে করছে, এই সমস্তগুলি নিয়েই আত্মসমীক্ষা করা প্রয়োজন। ভবিষ্যতের পরিস্থিতি সামাল দিতে পূর্বের অভিজ্ঞতা ও ব্যর্থতাগুলি কাজে লাগানো হবে।

মার্চ মাসের ২৫ তারিখে দেশজুড়ে শুরু হওয়া লকডাউনের পরেই ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। মূলত দেশের নিম্নবিত্ত মানুষদের কথা ভেবেই এই প্যাকেজ ঘোষিত হয়েছিল।

সুত্রের খবর, কার্যক্ষেত্রে দেখা গেছে, এই প্যাকেজের পরেও অনেকগুলি ক্ষেত্রেই আর্থিক সুরাহা হয়নি। তার চেয়েও বড় কথা, করোনাভাইরাস পরবর্তী যে অর্থনৈতিক ধাক্কাটি আসতে চলেছে, তা কতটা জোরালো হবে, সেটা এখনও সময়ের অপেক্ষা। এই বিষয়টি আগে থেকে পর্যালোচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের নেতৃত্বে ইতিমধ্যেই একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এছাড়াও আরও একটি বড় সমস্যা যা সামাল দিতে সরকার কার্যত ব্যর্থ হয়েছে বলেই অন্দরের খবর, তা হল দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অভিজ্বাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা। দেশের প্রতিটি রাজ্য থেকে যে অসংখ্য শ্রমিক পেটের দায়ে দুরদুরান্তে কাজ করতে গেছেন, লকডাউন শুরুর পরেই তাঁরা আচমকা বিপদের মুখে পড়েছে নানা প্রান্তে। সে ছবি গত কয়েক দিনে স্পষ্ট।

যে কোনও কারণেই হোক, কেন্দ্র ও সংশ্লিষ্ট রাজ্য— উভয় সরকারই ব্যর্থ হয়েছে তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা দিতে। যার জেরে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে ভিন রাজ্যে বাড়ি ফিরেছেন কেউ, কারও বা পথেই শেষ হয়েছে প্রাণ। এ নিয়ে বিরোধীদের তরজাও কম হয়নি গত কয়েক দিনে।

সরকারের পরিকল্পনার অভাব ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই নিয়ে লড়ে গিয়েছে কেন্দ্রের সঙ্গে একাধিক রাজ্য সরকার। মাঝখান থেকে কংগ্রেস ঘোষণা করেছে, অভিবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর দায়িত্ব নেবে তারা। দেবে ফেরার ভাড়াও। সুত্রের খবর, এই সবটাই গঠনমূলক সমালোচনার নজরেই দেখছে কেন্দ্রের সরকার।