আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সংখ্যালঘু’ তকমা মুছতে আইনি পদক্ষেপ কেন্দ্রের 

দিল্লি, ১০ জানুয়ারি – উত্তরপ্রদেশের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় স্তরের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই ধরণের  শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কোন নির্দিষ্ট ধর্মীয় সম্প্রদায়ের তকমা দেওয়া আইনবিরুদ্ধ। ‘সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ তকমা দেওয়ার বিরুদ্ধে তাই এবার আইনি পদক্ষেপ করল  নরেন্দ্র মোদি সরকার। বুধবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানানো হয়েছে, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় কোনও নির্দিষ্ট ধর্ম বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে না।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান’ হিসাবে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। এই অবস্থানের যুক্তি হিসাবে কেন্দ্র জানিয়েছে,  যে প্রতিষ্ঠান এই তকমা পায় তা কোনও নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান হতে পারে না। কেন্দ্রের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা তাঁর সওয়ালে বলেন, ‘‘১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতার আগেও জাতীয় স্তরে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। তাই তাকে কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের জন্য বলা যেতে পারে না।’’
 
কেন্দ্রের আইনজীবী তথা সলিসিটর জেনারেল মঙ্গলবার শীর্ষ আদালতকে বলেন, ‘‘ভারতীয় সংবিধান রচনার দায়িত্বপ্রাপ্ত গণপরিষদেও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়কে সংখ্যালঘু তকমা দেওয়া নিয়ে প্রবল বিতর্ক হয়েছিল।’’ এ বিষয়ে এলাহাবাদ হাই কোর্টের রায়ের প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন তিনি। প্রসঙ্গত, ইন্দিরা গান্ধির সময়কালে, ১৯৮১-তে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করে একে সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের তকমা দেওয়া হয়। ২০০৬-এ ওই আইন খারিজ করে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
 
উচ্চ আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল ইউপিএ সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ইউপিএ সরকারের সেই আবেদনই এ বার প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছেন সলিসিটর জেনারেল। জানিয়েছেন, ‘সেন্ট্রাল এডুকেশনাল ইনস্টিটিউশন (ভর্তি সংরক্ষণ) আইন ২০০৬’ (২০১২ সালে সংশোধিত)-এর ৩ নম্বর ধারা মেনে আলিগড়ে সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ বজায় রাখার কোনও প্রয়োজন নেই।
 
গোড়া থেকেই নরেন্দ্র মোদির সরকার আলিগড় এবং দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ তকমা দেওয়ার বিরুদ্ধে মত পোষণ করে এসেছে। এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখেও মোদি সরকারের যুক্তি , এই তকমা সংবিধান সম্মত নয়। সংসদের আইনের মাধ্যমে যে বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে, তাকে ধর্মের ভিত্তিতে বিশেষ তকমা দেওয়া দেশের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির বিরুদ্ধে। তা ছাড়া, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অর্ধেক আসন সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত থাকায় তফসিলি জাতি, উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির পড়ুয়াদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।