দেশে অভিবাসন আইন আরও কঠোর করতে মঙ্গলবার লোকসভায় ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স বিল, ২০২৫’ পেশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের প্রবল আপত্তির মধ্যেই লোকসভায় পেশ করা হয় অভিবাসন ও বিদেশি নাগরিক সংশোধনী বিল। বিলটি উত্থাপন করার সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, কাউকে ভারতে আসতে বাধা দেওয়ার জন্য এই আইন নয়। আরও বেশি পর্যটক যাতে এ দেশে আসতে পারেন সেই জন্যই এই বিল। রাই বলেন, ‘যেসব বিদেশিরা আমাদের দেশে আসবেন, তাঁদের অভিবাসন আইন মানতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাতে পারেন, এমন কোনও বিদেশিকে ভিসা দেওয়া হবে না।’
তিনি বলেন, ‘কোনও বিদেশি যদি ভারতে পৌঁছনোর পর কোনওভাবে নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেন, তা হলে সরকার তাঁর উপর নজর রাখা এবং প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’ কেন্দ্রের মতে, অভিবাসন আইনে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এনে সেটির আরও সরলীকরণ হয়েছে। দেশের নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করতে ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যেই নতুন আইন।
বিরোধীদের অভিযোগ, মূলত বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে থেকে যাওয়া মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষদের ধরপাকড় করতেই এই আইন। এর প্রধান লক্ষ্য হল যাতে আগামী বছর অসম-বিহার-পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে পূর্ব ভারতে হিন্দু মেরুকরণের হাওয়া তোলা যায়।
বিলটিকে সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলে দাবি করেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। তাঁর কথায়, ‘বিলটি ধ্বংসাত্মক এবং দমনমূলক।’ বিরোধীদের মতে, যে ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ কথা বলা হয়েছে তার কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই, ‘বিপজ্জনক বিদেশি’–রও কোনও সংজ্ঞা নেই। তাই বিরোধীদের অনুমান, কেন্দ্র যা ব্যাখ্যা দেবে সেই অনুযায়ীই ‘কাজ’ হবে। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ও ওই বিলের বিরোধিতা করে বলেন, ভারতে আসার প্রশ্নে কড়াকড়ি করা হলে বিদেশি প্রতিভাবান যুবকদের আসার আগ্রহ কমে যাবে। তাতে দেশের ক্ষতি হবে। বর্তমানে দেশে বিদেশি নাগরিক আইন ১৯৪৬, অভিবাসন আইন ২০০০, পাসপোর্ট আইন ১৯২০, রেজিস্ট্রেশন অব ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৯৩৯- এই ধরনের একাধিক আইন রয়েছে। তার পরেও ওই বিলের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সৌগত। এই বিষয়ে রাই বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আবহে এই আইনগুলি তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো এখন গুরুত্ব হারিয়েছে।’
নিত্যানন্দ বলেন, বিষয়টিকে সরলীকরণের জন্যই চারটি আইনকে মিলিয়ে এই নতুন আইন আনা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, কোনও বিদেশি বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত হলে তাঁর এ দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করতে পারে অভিবাসন দফতর। ওই বিদেশিকে ফেরানোর দায় ভারতের থাকবে না। তিনি যেভাবে (বিমান, জাহাজ, সড়ক-রেল) বা যে সংস্থার মাধ্যমে ভারতে এসেছিলেন, ফেরানোর দায়িত্ব তাদেরই হবে।
নতুন বিলে বিশ্ববিদ্যালয়-সহ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও বাড়ির মালিকদের, তাঁদের সংস্পর্শে আসা বিদেশিদের বিস্তারিত তথ্য প্রশাসনকে নিয়মিত দেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া ভারতে ধরা পড়লে ৫ লক্ষ টাকার বেশি জরিমানা ও ৫ বছর জেলের সুপারিশ করা হয়েছে। ভুয়ো পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে ধরা পড়লে ১ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা এবং ২ থেকে ৭ বছরের জেলের সুপারিশ করা হয়েছে। সন্দেহভাজনকে পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের অধিকার দেওয়া হয়েছে অভিবাসন দপ্তরকে। এই নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধীরা।
রাই এদিন দাবি করেন, যেহেতু ভারত অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে তাই সরকার চায় আরও বেশি বিদেশি পর্যটক যাতে আসেন। সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে পর্যটকদের নানা সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তবে দেশের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়াও সরকারের দায়িত্ব।’
এই বিলে বলা হয়েছে, কোনও বিদেশি যদি ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও ভারতে থেকে যান, তা হলে তাঁর ৩ বছর পর্যন্ত জেল, ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা দুই-ই হতে পারে।