শেখ হাসিনার ভারতে থাকার মেয়াদ বাড়াল কেন্দ্রীয় সরকার। কূটনৈতিক সূত্রে বুধবার এই খবর জানা গিয়েছে। অন্যদিকে মঙ্গলবারই বাংলাদেশের অভিবাসন ও পাসপোর্ট দপ্তর শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই হাসিনাকে নিয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার।
সম্প্রতি শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরানোর জন্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল । ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাসিনা-সহ বাকি অভিযুক্তদের ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হতে বলা হয়েছে। সে দেশের জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল ফজলুর রহমান বলেন, ভারত যদি শেখ হাসিনাকে না পাঠায়, তা হলে অনুমতি সাপেক্ষে ভারতে গিয়েও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রাজি কমিশন। তবে এই আবেদনে এখনও পর্যন্ত সাড়া দেয়নি ভারত। গোটা বিষয়টিতে ভারতের উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখছে কেন্দ্র। শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এই পরিপ্রেক্ষিতেই শেখ হাসিনার ভারতে থাকার মেয়াদ বাড়িয়েছে মোদী সরকার।
২০২৪-এর ৫ আগস্ট থেকে ভারতে রয়েছেন শেখ হাসিনা। ভারত সরকারের তরফে তাঁকে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। তবে হাসিনাকে দেশে ফেরাতে চান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সেজন্য আবেদনও জানানো হয় ভারতের কাছে। যদিও ভারত সরকার সেই বিষয়ে কোনও বাক্য ব্যয় করেনি। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। হাসিনা-সহ ৯৭ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে দমনপীড়ন চালানোর অভিযোগ রয়েছে এঁদের সকলের বিরুদ্ধে। এঁদের সকলেরই পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে হাসিনা ছাড়া পাসপোর্ট বাতিল হওয়া আর কারও নাম জানানো হয়নি।
মঙ্গলবার এক প্রেস বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রে স উপসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার একথা ঘোষণা করেন। তিনি জানান, যে ৯৭ জনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে ৭৫ জন জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত। বাকি ২৫ জনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনাও।
প্রসঙ্গত, গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশ কোটা বিরোধী আন্দোলন মারাত্মক আকার ধারণ করে। কয়েকশো মানুষের মৃত্যু হয়, আহত হন বহু মানুষ। সেই বিক্ষোভের আঁচ গড়ায় আগস্টেও। আন্দোলন এতটাই তীব্র আকার ধারণ করে যে সেই দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে ভারতে এসে আশ্রয় নিতে হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। তারপর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাদের উপরে অত্যাচার নেমে আসে বলে অভিযোগ। সংখ্যালঘু হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে দাবি, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি ‘কূটনৈতিক’ কোনও বিষয় নয়, এটি ‘আইনি’। কোনও অন্তর্বর্তী সরকার অন্য রাষ্ট্রের স্থায়ী সরকারের কাছে কোনও রাজনৈতিক নেতাকে ফেরাতে চাইলে তার সমস্ত আইনি দিক খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়। ফলে, হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশের পাঠানো কূটনৈতিক বার্তার উত্তর সঠিক সময়ে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনওরকম তাড়াহুড়ো করা হবে না। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বাংলাদেশের বার্তার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে জবাব দিতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে। আর সেই জন্যই হাসিনার ভারতে থাকার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে কত দিনের জন্য এই মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।