দিল্লি, ২৫ জুলাই– প্রতি দশ বছর অন্তর হওয়ার কথা থাকলেও থেমেছে সেই ২০১১ সালে৷ এই ১৪ বছরে দেশের জনগণনার কাজ করে উঠতে পারেনি বিজেপি সরকার৷ অথচ রেওয়াজ হল প্রতি ১০ বছর অন্তর জনগণনার কাজ হওয়া৷ ২০২৪ লোকসভা ভোটের পরে এই কাজ হওয়ার কথা থাকলেও সম্ভাবনা খুব কম বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷
ভারতে জনগণনার কাজ আটকে যাওয়ার ইতিহাস বিরল৷ শুরু ১৮৮১ সালে৷ তারপর থেকে নিয়ম করে প্রতি দশ বছর অন্তর জনগণনা হয়েছে৷ অন্তত ১৫০ বছরের ইতিহাসে কখনও জনগণনা বন্ধ থাকেনি৷ এই প্রথম তা প্রায় অর্ধদশক পিছিয়ে গেল৷ অনেকে আঙুল তুলছেন, সিএএ, এনআরসি, এনপিআর বিতর্কেই জনগণনা নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক হতে চাইছে মোদি সরকার৷ জনগণনার আগে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের কাজ সেরে ফেলতে হবে৷ কিন্ত্ত ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ নিয়ে সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে৷ এনপিআরের কাজ থমকে যায়৷
অর্থনীতিবিদ জঁ দ্রেজ একটি সর্বভারতীয় ওয়েব সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১১ জনগণনা অনুসারে, ভারতের জনসংখ্যা ১২১ কোটি৷ যার মধ্যে ৮০ কোটি মানুষ খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় খাদ্য পায়৷ কিন্ত্ত এখন যা মনে হচ্ছে, জনসংখ্যা প্রায় ১৩৭ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে৷ তার মানে প্রায় দশ কোটি গরীব মানুষ কিন্ত্ত এই আইনের আওতায় খাবার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷’
তবে জনগণনার কাজের পেছনে অর্থের বরাদ্দ কিন্তু প্রতি অর্থবর্ষেই হচ্ছে৷ এই যেমন চলতি অর্থবর্ষে জনগণনার জন্য ১২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ যা আগেরবারের তুলনায় ১৭ শতাংশ কম৷ ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এর তিনগুণের বেশি অর্থ বরাদ্দ ছিল৷ সেই বছর কোভিডের জন্য শেষ অবধি জনগণনার কাজে আর হাত দিতে পারেনি কেন্দ্র৷ বস্তুত, কোভিড পরবর্তী বছরগুলোতে টাকা বরাদ্দ হলেও ক্রমশই কমে এসেছে খরচ৷
তবে এই জনগণনা না হওয়ায় যে ‘নীতিনির্ধানের’ কাজে ব্যাঘাত হচ্ছে তা মনে করিয়ে অর্থবিষয়ক সচিব অজয় শেঠ বলেছেন, ‘নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে জনগণনা অত্যন্ত জরুরি৷ যখনই এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সেটা জনসমক্ষেই নেওয়া হবে এবং তার জন্য দরকারি অর্থও বরাদ্দ করা হবে৷ আপনাদের ব্যাপারটা বুঝতে হবে৷ আমরা খরচ অনুমান করে তো বাজেটে বরাদ্দ করি না৷ যে ডিপার্টমেন্ট কোনও কাজ করতে চায়, তারা সেটা জানায় এবং সেইমত বরাদ্দ করা হয়৷’
কিন্ত্ত খরচ ও বরাদ্দের দোহাই দিয়ে যে জনগণনার কাজ এড়িয়ে যাওয়া যাবে না তা ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে৷ ২০২৫-১৬ থেকে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ অবধি বাজেটে জনগণনার জন্য যত বরাদ্দ করা হত, খরচ আদতে হত তার চেয়েও বেশি৷ কিন্ত্ত ২০২০-২১ অর্থবর্ষ থেকে বরাদ্দ বাড়লেও খরচ ক্রমশ কমে এসেছে৷ বাজেটে বা অর্থসমীক্ষা কোনওটাতেই জনগণনার নামগন্ধও করেনি মোদি সরকার৷ যার ফলে এখনও গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণের কাজ ২০১১ জনগণনার ভিত্তিতেই হয়ে চলেছে৷ এদিকে পরিসংখ্যান নিয়ে নির্মলা সীতারমন একাধিক সংস্কারের রাস্তা নিয়েছেন৷ তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণে জোর দেওয়া হয়েছে৷ কিন্ত্ত জনগণনার কথা তোলা হয়নি৷ রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এর পিছনে নিশ্চিতভাবেই রাজনীতি রয়েছে৷