হাজারখানেক নাম নিয়ে চার দফায় নিট কাণ্ডে তদন্তে সিবিআই

কেন বহাল এনটিএ চেয়ারম্যান, প্রশ্ন তুলে নিটকাণ্ডে বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না হওয়ায় সরব কংগ্রেস
দিল্লি, ২৫ জুন– নিট যেন ক্রমাগত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কেন্দ্র সরকারের৷ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রকে এ বিষয়ে ঘিরতে শুরু করেছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া৷ ঘটনার সূত্র গিয়ে পেঁৗছেছে মাফিয়া বিজেন্দর পর্যন্ত৷ সঙ্গে উঠেছে ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি বা এনটিএ-র ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন৷ এই অবস্থায় এনটিএ ডিজি সুবোধ কুমার সিং-কে আগেই সরিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র৷ নিটের তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাচে৷ তাতে মোটেও দমতে সন্তুষ্ট নয় বিরোধীরা৷ ডিজিকে সরালেও চেয়ারম্যান প্রদীপকুমার যোশীকে কেন এখনও তাঁর পদে বহাল রাখা হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছে কংগ্রেস৷
নিটের তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে বিহার, গুজরাত ও রাজস্থান পুলিশের দায়ের করা মামলার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই৷ সিবিআই সূত্রে খবর, চার দফায় তদন্ত চলবে৷ প্রশ্নপত্র তৈরি, ছাপানো থেকে দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে সেই প্রশ্ন পৌঁছে দেওয়ার বিভিন্ন স্তর খতিয়ে দেখা হবে৷ এর পাশাপাশি সিবিআই খতিয়ে দেখছে, পরীক্ষার প্রস্তুতি, প্রশ্ন ছাপানো, প্রশ্ন পৌঁছে দেওয়া এবং পরীক্ষা শুরুর আগে বিভিন্ন কেন্দ্রে নিরাপদ ভাবে প্রশ্নপত্র রাখার ক্ষেত্রে কোথাও কোনও অনিয়ম হয়েছে কি না৷ যদি হয় সে ক্ষেত্রে কে বা কারা তাতে জডি়ত৷
প্রাথমিক ভাবে সিবিআইয়ের তথ্যভান্ডারে রয়েছে সন্দেহভাজন হাজারখানেক নাম ও ফোন নম্বর৷ তার মাধ্যমেই দেখা হবে কারা প্রশ্ন ফাঁস করেছে! ব্যপমের মতো বিভিন্ন পরীক্ষা দুর্নীতিতে জডি়ত কিংবা সন্দেহভাজনদের নিয়েই তৈরি হয়েছে ওই তথ্যভান্ডার৷ যাতে শিক্ষা দুর্নীতির চক্র সামনে আনা যায়৷
এ দিকে নিটের আয়োজক সংস্থা এনটিএ-র আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই ওএমআর-এ কারচুপির অভিযোগ তুলে সিবিআই ও ইডি তদন্তের আর্জি জানিয়ে মামলা হল সুপ্রিম কোর্টে৷ তবে বিচারপতি মনোজ মিশ্র এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ ওই আবেদন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ বলা হয়, অনুচ্ছেদ ৩২-এর আওতায় কী ভাবে এই আবেদন হতে পারে? হাই কোর্ট থেকে আবেদন প্রত্যাহার করে শীর্ষ আদালতে উপস্থিত হওয়ার কথাও বলা হয়৷ আজ সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চে এক মামলায় সিবিআই ও ইডি-কে নোটিস পাঠানোর আবেদন জানানো হলেও বিচারপতি এ এস ওকা জানিয়েছেন, জরুরি ভিত্তিতে শুনানির প্রয়োজন নেই৷ ৮ জুলাইয়েই মামলার শুনানি হবে৷
এনটিএ চেয়ারম্যান পদে আসার আগে ইউপিএসসি চেয়ারম্যান পদে ছিলেন প্রদীপকুমার যোশী৷ মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগডে় বিজেপি সরকারের সময়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন৷ কংগ্রেসের অভিযোগ, এই ব্যক্তি আদতে আরএসএস ঘনিষ্ঠ৷ এত বড় পদে থাকার কোনও যোগ্যতাই নেই তাঁর৷ কিন্ত্ত আরএসএস যোগ থাকার জন্যই প্রদীপের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার৷
ইতিমধ্যে যে ১৫৬৩ জন পরীক্ষার্থীর ‘অতিরিক্ত নম্বর’ পাওয়ার কারণে নিট পরীক্ষা বাতিল করেছিল শীর্ষ আদালত, তাদের ফের পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছিল৷ তবে ১৫৬৩ জনের মধ্যে কেবল ৮১৩ জন পরীক্ষায় বসেন৷
এনটিএ-এর ডিজিকে সরিয়ে তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার প্রদীপ সিং খারোলাকে৷ হাত শিবিরের দাবি, গদি বাঁচাতেই সুবোধ কুমারকে সরাতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র৷ কিন্ত্ত স্রেফ আরএসএস-এর নাম প্রদীপ কুমার যোশীর সঙ্গে জুডে় থাকার কারণে সরকারের কোনও তাপ-উত্তাপ নেই৷
কংগ্রেসের দাবি, নিটের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রদীপ যোশীর বড় ভূমিকা থাকতে পারে৷ তাই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন রয়েছে৷ কিন্ত্ত তা তো করা হচ্ছেই না, উল্টে প্রদীপ দেশজুডে় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ উপাচার্যদের নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ নিয়েই যাচ্ছেন৷
নিট নিয়ে এত বিতর্ক সত্ত্বেও পরীক্ষা কেন বাতিল করা হয়নি সেই ব্যাপারে ইতিমধ্যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান৷ তাঁর বক্তব্য, ২০০৪ এবং ২০১৫ সালের ডাক্তারির প্রবেশিকা পরীক্ষার মতো ২০২৪ সালে নেটের প্রশ্নফাঁসের ঘটনার প্রভাব নয়৷ তাই পরীক্ষা বাতিল করা হয়নি৷
উল্লেখ্য, গুজরাতের গোধরায় ৫মে নিট পরীক্ষার দিন নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল৷ অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ-সহ একাধিক অভিযোগ দায়ের হয় গোধরা পুলিশের কাছে৷ অভিযোগ ২৭ জন পরীক্ষার্থীর নিট উত্তীর্ণের জন্য নানা অসদুপায় অবলম্বন করা হয়েছিল৷
পড়শি রাজ্য মহারাষ্ট্রেও নিটের প্রশ্ন ফাঁসে যুক্ত থাকার অভিযোগ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে৷ দুই শিক্ষক-সহ চার জনকে গ্রেফতার করেছে মহারাষ্ট্র পুলিশ৷ শনিবারই লাতুরের ওই দুই শিক্ষক সঞ্জয় তুকারাম যাদব এবং জলিল পঠানকে আটক করা হয়৷ রবিবার ছেডে় দেওয়া হলেও পরে গ্রেফতার করা হয়৷ এফআইআরে বলা হয়েছে, ধৃতেরা টাকার বিনিময়ে পরীক্ষা সংক্রাম্ত নানা তথ্য বিক্রি করতেন৷ ধৃত দুই শিক্ষকের ফোনে পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড, পরীক্ষা কেন্দ্র ও আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত নানা তথ্য মিলেছে৷ এই তদন্তে উঠে এসেছে দিল্লি যোগও৷