দিল্লিতে সাম্প্রতিক সিএএ নিয়ে বিক্ষোভ হিংসাত্মক হওয়ায় এ পর্যন্ত কুড়ি জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিন দিল্লি হাইকোর্টে হিংসাত্মক ঘটনায় ইন্ধন দেওয়ার জন্য বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রর মন্তব্যের ভিডিও ক্লিপিং চালানাের নির্দেশ দেন বিচারক। রাজধানী শহরে ১৯৮৪ সালের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেয় আদালত।
প্রাক্তন আমলা জনৈক হর্ষ মানদের এক আবেদনে ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করে জানিয়েছেন, দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর করা, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সেনা নামানাে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে অবিলম্বে।
দিল্লি পুলিশের পক্ষে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা একদিনের জন্য মামলার শুনানি স্থগিত রাখার আবেদন জানিয়ে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারকেও এই মামলায় এক পক্ষ হিসেবে উল্লেখ করা জরুরি। তাই মাত্র যােলাে ঘণ্টার জন্য বিষটি স্থগিত রাখা হােক। কিন্তু বিচারপতি মুরলিধর সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞাসা করেন, দোষীদের বিরুদ্ধে এফআইআর করাটা কোনও জরুরি ব্যাপার নয়? যেখানে অবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে।
তিনি কপিল মিশ্রর প্ররােচনামূলক ভাষণের ভিডিও ক্লিপিং আদালতেই চালিয়ে দেখানাের নির্দেশ দেন। এক পুলিশ কর্মী আদালতে জানান, তিনি হিংসাত্মক ঘটনার ভিডিও দেখেছে কিন্তু কপিল মিশ্রর ভাষনের ভিডিও দেখেননি, তখন বিচারপতি বলেন, এটা খুবই চিন্তার কথা যে একাধিক টিভি চ্যানেলে বিজেপি নেতার প্ররােচনামূলক ভাষণ শুনেছে, তখন পুলিশের আধিকারিকরাই তা দেখতে পাননি। দিল্লি পুলিশের এমন উদাসীন মানসিকতা সাধারণের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি করতে বাধ্য।
সলিসিটর জেনারেল আদালতে জানান দিল্লির লেফটানেন্ট গভর্নর দিল্লি পুলিশের হয়ে সওয়াল করার জন্য অনুমােদন দিয়েছেন। কিন্তু সলিসিটর জেনারেলের দাবির বিরােধিতা করে আবেদনকারীর আইনজীবী জানান, দিল্লি সরকারের সম্মতি ব্যতীত লেফটানেন্ট গভর্নর কখনই এমন অনুমােদন দিতে পারেন না। এটা আইন বিরােধী কাজ।
উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মৌজপুর এবং অন্যান্য অঞ্চলে শনিবার হিংসাত্মক ঘটনা ঘটতে শুরু করে। কিন্তু বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের তিন দিনের মধ্যে সরে যেতে বাধ্য করার জন্য অনুরােধ করার পরই ঘটনা আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সিএএ’র বিরুদ্ধে এবং পক্ষের দুই গােষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। প্রকাশ্যেই দুই গােষ্ঠীর লােকেরা পিস্তল, রিভলভার, সাের্ড নিয়ে ঘুরতে থাকে। মহল্লার বিভিন্ন ভবনে ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং দুই গােষ্ঠীর সংঘর্ষে অন্তত আড়াইশাে জন আহত হয়েছেন।
বিক্ষোভকারীরা জাফরাবাদ মেট্রো স্টেশন এলাকা থেকে বুধবার সরে গেলেও চাদবাগ ও গােকুলপুরী এলাকায় নতুন করে হিংসাত্মক ঘটনা শুরু হয়ে যায়। বিক্ষোভকারীরা যথেচ্ছ পাথর ঘেঁড়ার ফলে এলাকায় ত্রাসের সঞ্চার হয়। সেনা বাহিনীকে অবস্থা সামাল দিতে নামানাে হয়।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অবস্থার পর্যালােচনার জন্য মঙ্গলবার রাত থেকে চব্বিশ ঘন্টায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে। অজিত দোভাল মঙ্গলবার রাতেই উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দিল্লির পুলিশ কমিশনার অমূল্য পটনায়েক। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে রাজধানীতে শান্তি রক্ষার জন্য দিল্লি পুলিশের কাজের তদরকিরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে সাধারণের মন থেকে ভয় দূর করতে সেনাবাহিনী নামানাের আর্জি জানিয়েছেন। কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, পুলিশ সব চেষ্টা করেও অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি জানান, সারা রাত ধরে বহু মানুষ আমাকে ফোন করে তাদের অসহায়তার কথা জানিয়েছেন। অবস্থা খুবই উদ্বেগজনক। পুলিশ সব চেষ্টা করেও অবস্থা আয়ত্তে আনতে ব্যর্থ, ফলে সাধারণের মনে ভীতির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে সেনা নামিয়ে এবং কার্ফু জারি করে শান্তি কায়েম করা জরুরি।
দিল্লি সরকারের পক্ষে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে লিখিতভাবে অনুরােধ করেছে বলে টুইট করেন। মুখ্যমন্ত্রী জরুরি বৈঠক ডেকে শহরের উপদ্রুত এলাকাগুলিতে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির সঙ্গে একযােগে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন দিল্লি প্রশাসনের কর্তাদের।