এমন দৃশ্য দেখতে হবে, তা কি কখনও কল্পনাও করতে পেরেছিলেন বিজেপির সর্বশক্তিমান সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ? কাড়ি কাড়ি টাকা ছড়িয়ে সারা দেশে নির্বাচনােত্তর যে কোনাে পরিস্থিতি নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসা যে দলের কাছে ছেলের হাতের মােয়া, সেই বিজেপি’কে শেষ পর্যন্ত বলতেই হল, মহারাষ্ট্রে আমরা সরকার গড়তে পারছি না। বিজেপি এবং শিবসেনা দু’পক্ষই গত দশ দিন ধরে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত চালিয়ে গিয়েছে স্নায়ুর লড়াই। শেষ পর্যন্ত রবিবার সন্ধ্যায় দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর এই কথা জানানাে হয়েছে বিজেপি’র তরফে।
মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে এবার শিবসেনার কোর্টে বল ঠেলে দিল বিজেপি। রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারির আমন্ত্রণের প্রেক্ষিতে তারা জানিয়ে দিল, সরকার গড়ার মতাে প্রয়ােজনীয় সংখ্যক বিধায়ক তাদের হাতে নেই। তাই তারা সরকার গড়তে পারবে না।
শনিবার মহারাষ্ট্রের রাজ্যপাল ভগত সিং কোশিয়ারি বৃহত্তম দল বিজেপিকে সরকার গঠনের আবেদন জানান। এই নিয়ে রবিবার বিজেপি’র কোর কমিটির বৈঠকে আলােচনা হয় দিনভর। দলের শীর্ষ নেতা চন্দ্রকান্ত পাতিল বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান, মহারাষ্ট্রের মানুষ বিজেপি-শিবসেনা জোটকে সরকার গড়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছে। যদিও জোট সরকার গঠনের কোনাে ইচ্ছে প্রকাশ না করে এবং বারবার জোট সরকার গঠনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে জনাদেশকে অশ্রদ্ধা করেছে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা। শিবসেনা চাইলে এনসিপি ও কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়তে পারে বলেও জানিয়ে দেন পাতিল।
মহারাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে ৮৮টি আসনের মধ্যে ১০৫টিতে জিতেছে বিজেপি। শিবসেনা ৫৬টি, এনসিপি ৫৪টি এবং কংগ্রেস ৪৪টি আসন পেয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর রাজ্যের বিধানসভা ভােটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। তার পরে সরকার গঠন নিয়ে গেরুয়া শিবিরের দুই শরিক- বিজেপি এবং শিবসেনার মধ্যে আলােচনা চললেও দু’দল এখনও পর্যন্ত কোনাে সমাধান সুত্রে পৌছতে পারেনি। বিশেষ করে অর্ধেক অর্ধেক ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রশ্নে অনড় রয়েছে শিবসেনা। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রশ্নে উদ্ধব ঠাকরে একবারের জন্যও নমনীয়তা দেখাতে নারাজ। সেই কারণে বিজেপি ও শিবসেনা প্রাক নির্বাচনী জোট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা সত্ত্বেও সরকার গঠন ঘিরে এখন অনিশ্চয়তা জিইয়ে আছে।
রাজ্যপালের আমন্ত্রণ পেয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের ব্যাপারে মহারাষ্ট্র বিজেপির কোর কমিটির সদস্যরা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। ক্ষমতা ভাগাভাগির লড়াইয়ের মধ্যেই শিবসেনা দু’দশকের বেশি সময়ের শরিক দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তবে পাশাপাশি কটাক্ষ করে শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘রাজনীতির ব্যবসায় বিশ্বাসী ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু শিবসেনা নেতারা রাজনীতির ব্যবসায়ী নন’। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশের বাসভবনে দুপুরবেলা কোর কমিটির বৈঠক হয়।
মহারাষ্ট্রে অ-বিজেপি প্রশাসন গঠন যে সম্ভব নয় তা সােনিয়া-শরদ বৈঠকের পর আভাস পাওয়া গেছিল, তারপর কি হতে চলেছে তা ধরে নিয়ে শিবসেনা নিজের ঘর পাহারা দিতে ব্যস্ত- সর্বোচ্চ দল হিসেবে সরকার গঠনের জন্য বিজেপি’কে আহ্বান জানানাে হলেও বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার সময়টি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, বিজেপি স্বপক্ষে সমর্থন বাড়ানাের লক্ষ্যে বিধায়ক কেনার চেষ্টা করতে পারে। তিনি প্রত্যক্ষভাবে শরিক দলের ঘােড়া কেনাবেচার ইঙ্গিত দিয়ে দলের বিধায়কদের পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।
সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করার জন্য বিজেপিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। ওরা দাবি করেছে ওদের সংখ্যা গরিষ্ঠতা রয়েছে। কিন্তু নিশ্চিত বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার আগে বিধায়ক কেনাবেচার চেষ্ট করবে। বিজেপি কংগ্রেস বিধায়কদের প্রভাবিত করার চেষ্ট করা হবে’।
দু’সপ্তাহ ধরে দর কষাকষির পর গতকাল সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানানাে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বিজেপি ঘােড়া কেনাবেচার চেষ্ট করবে। ওরা এতগুলাে বছর ধরে এভাবে নিজেদের ভাবমূর্তি তৈরি করেছে যে ইচ্ছা করলে ওরা সরকারও নিতে পারে। শিবসেনা কখনােও রাজনীতির ব্যবসা করে না’।
শিবসেনা ঘর সামলাতে দলের বিধায়কদের মুম্বই থেকে দূরে কোনও অজ্ঞাত জায়গায় রিসর্টে বিধায়কদের রেখেছে। তিনি বলেন, ‘রিসর্টে গিয়ে আমরা বিধায়কদের সঙ্গে দেখা করব। ওখানে উদ্ধব ঠাকরে ও আদিত্য ঠাকরেও থাকবেন। গতকাল আদিত্য রাতে বিধায়কদের সঙ্গে ছিলেন।
শিবসেনার ব্যবহারে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী ফড়নবিশ বলেন, ‘জোট শরিক শিবসেনা দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেওয়ায় আমরা হতাশ। বিজেপি কোনও দিন বালা সাহেব ও উদ্ধব ঠাকরেকে নিশানা করেনি। শিবসেনা যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে বাক্য বাণে নিশানা করছে, আমাদের বিরােধীরা এতটা করে না। আমরা এটা মেনে নেব না। শিবসেনার ব্যবহার থেকে স্পষ্ট ওরা জোট বহাল রাখতে চায় না।
ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠলেন শরদ পাওয়ার— বিকল্প সরকার গঠনের স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন। তিনি বলেন, দলের তরফে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে। দলের নেতা নবাব মালিক বলেন, ‘শিবসেনা কোন পথে হাঁটে সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার ওপর নির্ভর করে বিকল্প সরকার গঠনের চেষ্টা করা হবে’। শরদ পাওয়ারের দল বিধানসভা নির্বাচনে ৫৪টি আসন পেয়েছে। শিবসেনার মতাে এনসিপিও শাসক দলের ঘােড়া কেনাবেচার ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু লক্ষণীয় ঘটনা, সমস্ত জল্পনায় কার্যত জল ঢেলে বিজেপি মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন কবে না বলে স্পষ্ট ঘােষণা করেছে। বিজেপি কোর কমিটির বৈঠকে সরকার গঠন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্যপাল সর্বোচ্চ দল হিসেবে ভারতীয় জনতা পার্টিকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মারাঠা জনগণের আদেশ মেনে কংগ্রেস বিরােধী আসনে বসবে- জয়পুর রােডে হােটেলে বসে এমনটাই মন্তব্য করলেন সিনিয়র নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষের নির্দেশ গ্রহণীয়, তাঁরা আমাদেরকে বিরােধী আসনে বসার আদেশ দিয়েছেন। আমরা গ্রহণ করেছি। হাইকম্যান্ড পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘শিবসেনাকে সমর্থন করার ব্যাপারে অনেকে কথা বলছেন, আবার কেউ তা অস্বীকার করছেন। দলের অবস্থান স্পষ্ট- জনগণের আদেশকে মেনে নেওয়া। কংগ্রেস ও এনসিপি বিরােধী আসনে বসবে।